দুষ্ট ছেলেকে বোডিং স্কুলে রেখে ফিরে যাচ্ছে সবাই। অতটুকুন বাচ্চার হত বিহবল আকুতি ভরা মুখ. গাড়ির মধ্যে মায়ের মুখ আড়াল করে কান্না............টেলিফোনের একপ্রান্তে মায়ের আকুতি, বাবা! কথা বলো বাবা ! ..অপর প্রান্তে ছেলে নির্বাক ধরে দাড়িয়ে...অভিমান ! ক্ষোভ ! নাকি শোকের আতিশয্যে ভাষা হারিয়ে ফেলা... টপ টপ করে অশ্রু ফোটা গড়িয়ে পড়ছে রিসিভারের ওপর.........তন্ময় হয়ে দেখতে দেখতে কখন যেন ভিজে উঠেছিল দুটো চোখ...জানি না ল্যাপটপের পাশে বসা অন্য দুজনের অনুভুতি তখন কেমন ছিলো। ছল ছল চোখ হারিয়ে যাচ্ছিলাম অজানার উদ্দেশ্যে। আহ, শৈশব, কেউ বুঝতে চায় না কষ্টগুলো।
সিনেমা দেখার সময় এবং মানসিকতা কোনটাই খুব অবশিষ্ট নেই। হিন্দি সিনেমার রেকর্ড সে তো আরো মধুর। যতটা না কাহিনী তার চেয়ে বেশী হচ্ছে মস্তিস্কে ঝড় তোলা চটুল গান আর উদ্দাম নৃত্যের ঝলকানি। তাই সবসময় সাহস হয়না সেদিকে পা বাড়ানোর। তারপরও সর্বত্র ব্যতিক্রম বলে একটা সুযোগ থেকেই যায়। গতকাল রাতে তেমনই এক ব্যতিক্রমধর্মী সিনেমায় মজে গিয়েছিলাম। বসেছিলাম খানিকটা তাচ্ছিল্য নিয়ে কতক্ষন পরে উঠে যাবো এমনই এক হিসাব করে কিন্তু হিসাব আমার মেলেনি। কোন ফাকে আড়াইটি ঘন্টা কেটে যায় টের পাইনি।
রাতের বিছানায় ঘুম আর আসেনা। নিস্তব্ধ রাত ভেদ করে দেয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দ। একসময় টের পাই একটা ছাড়িয়ে সামনে আগাচ্ছে ধাতব কাটা। অন্ধকারে কেবল ভাবছি আর স্মৃতির জানালা খুলে উকি দেই এদিক ওদিক।
প্রত্যেক মা বাবাই স্বপ্ন দেখে তার সন্তান বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, হবে ব্যারিষ্টার, অফিসার, বিজনেসম্যান, ,, কিংবা আরো কত কি। কিন্তু যাকে নিয়ে এত ভাবনা সে কি ভাবছে। ভাবনাটা অজানাই থেকে যায়। ছোট্ট কাধে বইয়ের বোঝা, সকাল বিকাল নিয়মমত পড়তে বসার তাড়া। পরীক্ষা শেষ করেই প্রশ্নপত্র নিয়ে মায়ের কাছে আরেকবার অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখি আর ছোট্ট একটা ভুল করার অপরাধে স্কুল গেটেই স্কেলের ঠাস ঠাস আওয়াজ। এত কিছুর পরেও যদি ভাল কিছুতে সান্তনা পাওয়া যেত তাহলেও কথা ছিল কিন্তু তাও হয় না। রোল ১২ হলে ১০ এর মধ্যে আসল না কেন, পরীক্ষায় ৮ম হলে শুনতে হবে তিনের মধ্যে নেই কেন। এই হাজারো কেনর জবাব খুজতে শুকিয়ে যায় মুখ হারিয়ে যায় জীবনের আনন্দ।
পড়াশোনার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। অজানাকে জানা, নতুন কিছু শেখা, নিজের হাতে তৈরী করা, নিজের বুদ্ধিতে কিছু করার মধ্যে যে গৈারব, যে আত্ববিশ্বাস তার কোন তুলনা হয় না। শিশুরা দেখে শিখে, শুনে শেখে, নিজের হাতে নেড়ে চেড়ে শেখে, ভেঙ্গে কি নষ্ট করে শেখে । আমরা কিছুই করার সুযোগ দেই না শুধু তাদের কাছে চাই আর চাই। কিছু যে দেই না তা নয় তবে এমন জিনিষই দেই যাতে লাখের চেয়ে ক্ষতিই বেশী।
ছোটবেলায় খানিকটা মুখচোরা ছিলাম। (এখনো আছি তবে অনেক উন্নতি করেছি কারন সমাগত প্রফেশনটা এমন যে এখানে মুখচোরার ভাত নেই,) মনের মধ্যে কত স্বপ্ন ঘুরে বেড়াত কিন্তু প্রকাশ করার সুযোগ পেতাম না। ছোটবেলায় একটি খেলনা মুরগী খুলে নষ্ট করেছিলাম বলে কেউ আমায় আর কোন খেলনা কিনে দেয়নি। সেই দুখ আজও আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়।ছোট ছোট কয়েকটি ভাগ্নে ভাগ্নিদের দেখে এই কথা মনে পড়ে।
এক গল্প শুনাতে এসে আরেক গল্প শুরু করে দিয়েছি। এখনই লাগাম টেনে ধরলাম। "তারে জমিন পার" তেমনই এক বাচ্চা ছেলের গল্প যে পড়াশোনায় ভীষন অমনোযোগী, দুষ্টামীতে পারদর্শী, নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত তাকে পাঠাতে হয় অনেক দুরের বন্দি শিবিরে (স্কুলে)। অনেক উপায় কৌশলই প্রয়োগ হয় তাতে যে কাজ যা হয় তা হচ্ছে উচ্ছল প্রানবন্ত প্রান তার স্বত্তা হারিয়ে পরিনত হয় ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকা পাথরে। তারপর .... এগিয়ে আসে একজন..। চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দেখিয়ে দেয় কিভাবে জাগাতে হয় সুপ্ত সম্ভাবনা। ... থাক তাহলে এ পর্যন্তই।
আগামী পোষ্ট... আমার ব্লগ বাছাই কাহিনী
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:১৬