”কান্না ভেজা সেই ডাইরি”
আমার নাম নীলিমা। আসল নাম না, সবাই আমাকে অন্য নামে চিনে। কিন্তু আমি আমার সত্যিকারের নাম ব্যবহার করতে চাই না। আমার জন্ম দুই বছর পর আমার বাবা মারা যায়। এরপর থেকেই আমাদের দুঃখের জীবন শুরু। আমার মা অল্প শিক্ষিত, তাই তেমন কোন ভাল চাকরি পায় নি। আমার মামারা সম্পতি ভাগ দেবার ভয়ে, আমার মা বা আমার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করে নি। আর আমার চাচারা এক হিসেবে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে...। আমাকে নিয়ে আমার মা অথৈ সাগরে পরে যায়। আমার মা একটি কলেজের আয়ার চাকরি পায়। আমার বাবার ব্যবসায় টাকার পর, সাধারণ আয়ার টাকা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পরে। তবুও আমাদের অভাবী জীবন ঠিক ভাবেই চলছিল, কিন্তু.........।
আমার মা আমাকে বাসায় একা রেখে কলেজে যেতেন, আর আমি একা একা বাসায় দিন কাটাতাম। আমার বয়স যখন ছয়, তখন আমাদের পাশের বাসার শফিক মামা আমাদের ঘরে ঢুকেছিলেন, সেই ভয়াল দিনের কথা মনে পরলে, আজও শরীর কেঁপে উঠে। সেই দিন সে আমাকে বিবস্ত করেছিল প্রথম। এরপর মাঝে মাঝে সে আসত। কিন্তু আমি কাউকে ভয়ে বলি নি। সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল, সেই বাচ্চা বয়ছে যা আমার জন্য একটা মারাত্রক মানসিক চাপ ছিল। এরপর শফিক মামা আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন আমার জীবনে শয় নি। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পরি, নারীত্ব যখন প্রথম প্রথম অল্প কিছু বুঝি, সেই সময় আমাদের বাসার বাড়ীওয়ালা, আমাদের বাসা ভাড়া চাওয়ার নাম করে আমাদের বাসায় ঢুকে পরেছিল। সেইদিন সেই পিচাশের হাত আমার দেহকে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল। অল্প বয়েসে কিশোরী মন আমার তখন কি রকম করছিল, তা আমি লিখে বুঝাতে পারব না। আমি আমার মায়ের দুঃখের দিকে তাকিয়ে কখনো মাকে সেই সব কথা কখনো বলি নাই। পড়ালেখায় খুব ভাল না থাকলে মোটামুটি ভাল ছিলাম। সেই দিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, অনেক শিক্ষিত হয়ে আমার জীবনের সব কাল দিন গুলি মুছে ফেলব। আমার মা খুব শিক্ষিত হলে হয়তো এই সব দিক আমাকে দেখতে হত না।
এখন আমি ঢাকার এক নামকরা কলজে ইংরেজিতে অনার্স থার্ড ইয়ারে পরি। আমার লেখাপড়া এবং খাওয়া থাকার খরচ পুরাটা মা চালাতে পারে না। অনেক টিউশনি খুঁজেছিলাম, কিন্তু পরিচিত কোন লিংক না থাকলে এই শহরে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। এক বড় আপুর পরামর্শে আমার এই খারাপ জগতে আসা। সপ্তাহে এক দুই দিন আমি টাকার বিনিময়ে আমি অন্যের দেহ সঙ্গী হই। তাদের সেই বিশ্রী কার্যক্রম সব আমার মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। মাঝে মাঝে তাদের মুখের ভাষা আমার দেহের ক্ষত-বিক্ষতকে হার মানায়। হাজারও মানুষ আমার নগ্ন দেহকে দেখেছে, আমার দেহর প্রতিটি জায়গায় সমাজের সেই সব হাতের ছাপ কিলবিল করে। আমি প্রতিদিন সাবান দিয়ে আমার দেহ পরিষ্কার করার চেষ্টা করি কিন্তু মনে হয় প্রতিটি সময় আমার দেহের আপত্তিকর জায়গায় কে যেন আঙ্গুল বুলিয়ে যাচ্ছে.........।
আমি আর পারছি না, আর পারছি না........................।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪