আমি অত্যন্ত অবাক হয়ে লক্ষ করলাম , আমাদের প্রজন্মের তো বটেই এই প্রজন্মের অনেকেই আহমেদ ছফা কে এটা জানেনা । এটা দেখে আমি ভীষণ আতঙ্কিত ।যে জাতির শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীকে সেই জাতির প্রজন্ম জানে না এর চেয়ে অসহায় অবস্থা সেই জাতির জন্য আর কি হতে পারে ? আমি ব্যাক্তি গত ভাবে মনে করি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম থেকে ধরলে এখন পর্যন্ত তাঁর সমপর্যায়ের লেখনি প্রতিভা আর জন্মায় নি , আমি অন্তত দেখিনা । হুমায়ুন আজাদ ভিন্ন আদর্শের । স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ রথী মহারথী লেখকদের পীর তিনি , এই তালিকায় হুমায়ুন আহমেদ থেকে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ রাও আছেন । তাঁর রচনা পড়লে বুঝা যাবে তাঁর লেখার স্টাইল এখনো দেশের অধিকাংশ লেখক তা অনুসরণ করেন তা সে চেতন বা অচেতন ভাবে যেটাই হোক না কেন ।
যা হোক , ছফার অনেক হারানো লেখাকে লেখক সাংবাদিক নুরুল আনোয়ার এক করে একটি বই আকারে প্রকাশ করেছেন । লেখা গুলি লেখকের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা কলাম ও দেয়া সাক্ষাৎকার ।আমি তাঁর কাছ থেকে ধার করে ছফার বিভিন্ন সময়ে লেখা লেখাগুলি একটি সিরিজ আকারে সামহোয়ার ইন ব্লগের পাঠকদের জন্য শেয়ার করছি । আজ থাকল তাঁর প্রথম পর্ব -
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আমি একবার অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম । দেড় বছর আগের কথা । বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ে কামরাঙ্গির চরে হাফেজ্জি হুজুরের মাদ্রাসার বার্ষিক সভায় আমাকে কিছু বলার জন্য আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল । আমাদের দেশের মুখ চেনা বুদ্ধিজীবীদের একটা বিরাট অংশ মোল্লা – মাওলানাদের মানুষ মনে করতে চান না ।আমি এই মনোভাবটির বিরুদ্ধে অনেক দিন থেকেই প্রতিবাদ করে আসছি ।একজন মানুষ টুপি পরে ,দাঁড়ি রাখে , লম্বা জামা পরে এ সকল কারণে মানুষটি অমানুষ হয়ে যায় – এই রকম একটি ধারণা সৃষ্টি করার জন্যে এক ধরণের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় ।নাটক সিনেমায় ক্রিমিনাল দেখাতে হলে একজন টুপিপরা দাড়িওয়ালা মানুষকে ষ্টেজে হাজির করতে হয় ।এই মনোভাব বর্ণবৈষম্যবাদের মতই জঘন্য এবং নিন্দনীয় ।
যা হোক , আসল কথায় ফিরে আসি ।আমি যখন হুজুরদের সভায় গিয়ে বসলাম ,তার অল্পক্ষণ পরেই দেখা গেল সভার উপস্থিত লোকজনদের মধ্যে একটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ।তার একটু পরেই এলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।একেবারে নিকট থেকে এই প্রথম তাকে দেখার সুযোগ হল ।ছিমছাম চেহারার দীখলদেহি মানুষ।পাঞ্জাবি পায়জামা এবং টুপিতে এরশাদ সাহেবকে সত্যি সত্যি একজন মুসল্লির মতন দেখাচ্ছিল ।এরশাদ সাহেব এত সুন্দর চেহারার মানুষ আগে কোন ধারণা ছিল না ।
দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে তার বক্তৃতা শুনলাম ।আমার ধারণা হল, এই ভদ্রলোক ইচ্ছা করলে অত্যন্ত নরম জবানে গুছিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন ।এরশাদ সাহেব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে একটানা প্রায় দশ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছেন ।একজন স্বৈরাচারী একনায়কের পক্ষে একটানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকা কম কৃতিত্বের কথা নয় ।এরশাদ সাহেবের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হয়েছিল ।কারণ তিনি সামরিক শাসনের কড়াকড়ির মধ্যে নরম জবানের একটা সুন্দর সমন্বয় সাধন করতে পেরেছিলেন। আমার ধারণা , এরশাদ সাহেবের মানুষকে বোকা বানানোর ক্ষমতা ছিল অসাধারণ ।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে রাজনৈতিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল ।এক পর্যায়ে বি এন পি আওয়ামী লীগ এবং এগারো দল সহ সমস্ত রাজনৈতিক দল এরশাদ সাহেবকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য রাজপথে নেমে এসেছিল । সে বিষয়ে কোন কিছু পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই ।সকলে জানেন বিক্ষুব্দ জনগণের দুর্বার গণআন্দোলনের মুখে এরশাদকে ক্ষমতা ছেড়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল ।
আমি এরশাদ সাহেবের উপর শুরু থেকেই একটা বিরোধী মনোভাব পোষণ করে আসছিলাম । কারণটা রাজনৈতিক নয় ।তিনি ক্ষমতা দখল করার পর কবিতা লিখতে আরম্ভ করলেন। সবগুলো দৈনিকের প্রথম পাতায় তাঁর লেখা পদ্য ঘটা করে ছাপা হতে থাকল ।এটুকুর মধ্যে যদি এরশাদ সাহেব সীমাবদ্ধ থাকতেন আমার ক্ষোভটা হয়ত অত তীব্র আকার ধারণ করতো না । তিনি তাঁর অধীনস্থ আমলাদের মধ্যে কবিতা লেখার বাতিকটা এত অধিক পরিমাণে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন যে সেক্রেটারিদের মধ্যে কেউ কেউ অফিসে আসামাত্রই অন্য সেক্রেটারিদের বিগত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কত লাইন কবিতা লেখা হয়েছে সেটা পাঠ করে শোনাতেন ।
এরশাদ সাহেব রাজনীতিতে যেমন একটা দল গঠন করলেন , কবিদের নিয়েও আর একটা কবিতার দল বানালেন।সে এক মহা রমরমা কাণ্ড । বঙ্গভবনে কবিতা পাঠের আসর বসে। সেখানে এরশাদ সাহেব স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন এবং মোসাহেব কবিরা দাড়ি নেড়ে মাথা দুলিয়ে কর্তাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আপনার কবিতা বাংলা কাব্যে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে । কথাগুলো পত্র - পত্রিকায় এত জোরের সঙ্গে প্রচারিত হয় যে আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হত, ক্ষমতা দখল করার পর থেকে এরশাদ সাহেবের মধ্যে ক্রমশ একটা নতুন কবিসত্তা জন্ম নিতে আরম্ভ করেছে । এরশাদ সাহেবের সঙ্গে অন্যান্য স্বৈরাচারী একনায়কদের ফারাক কোথায় সে ব্যাপারেও সামান্য ধারণা জন্মাল । এরশাদ সাহেব রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর শুধু কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন না , দিকে দিকে একজন মস্ত প্রেমিক হিসেবেও তাঁর সুনাম রটে গেলো। এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতার মধ্যগগনে সে সময় আমরা কতিপয় বন্ধু মিলে ‘উত্তরণ’ নামাঙ্কিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা চালাতাম। বাংলা একাডেমীর এক তৎকালীন কর্মকর্তা আমাকে একটা গান দেখালেন। গানটির লেখক ছিলেন সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা। এই ভদ্রলোক রাঙ্গামাটিতে উপজাতীয় একাডেমীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন । তিনি একটি গান লিখেছিলেন , সে গানটির প্রথম যে পক্তি ছিল – ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা / নতুন করে আজ শপথ নিলাম’ ।এই গানটি উপজাতীয় একাডেমী থেকে প্রকাশিত বার্ষিক সংকলনটিতে ছাপা হয়েছিল।এই বার্ষিক সংকলনটি দেখে আমি ভীষণ ক্ষিপ্ত এবং মর্মাহত হয়েছিলাম। কারণ প্রায় প্রতিদিন এ গানটি রেডিও টেলিভিশনে গাওয়া হত এবং রচয়িতা হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম দেখান হত। একটি দেশের প্রেসিডেন্ট একজন সাধারণ নাগরিকের লেখা একটি গানকে নিজের গান বলে চালিয়ে দিয়ে গীতিকার খ্যাতি পেতে চান , এটা আমার কাছে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ বলে মনে হয়েছিল।
আমি এটাও অনুভব করছিলাম যে এই গানচুরির সংবাদটি দেশের মানুষদের জানানো প্রয়োজন ।অনেক দৈনিক সাপ্তাহিকের পেছনে আমি ছোটাছুটি করেছি ।দেখলাম তাদের অনেকেই এই গানচুরির বিষয়টি জানেন।কিন্তু খবরটি ছাপাতে কেউ রাজি নন। রাঙ্গামাটির এক চাকমা বন্ধু জানালেন, আমি যদি এই গানটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করি তাহলে সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরাকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে।একাডেমী থেকে তাঁর চাকরিটা যাবে এবং মাথা বাঁচানো দাঁয় হয়ে পড়বে ।অগত্যা আমাদের কাগজে সংবাদটি ছাপলাম। ‘এরশাদ সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরার গান চুরি করেছে’ । সংবাদটি এভাবে ছাপলে আমাদের পত্রিকার সেটি শেষ প্রকাশিত সংখ্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই উল্টো করে খবরটা ছাপতে হল । আমরা ছাপলাম, সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা দেশের রাষ্ট্রপতি গীতিকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গান চুরি করে উপজাতীয় একাডেমীর বার্ষিক সংকলনে ছেপেছে । সুতরাং সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরার শাস্তি হওয়া উচিত । এই ঘটনাটির পর থেকে এরশাদ সাহেবের প্রতি আমার মনে একটা ঘৃণা এবং অনুকম্পা গভীরভাবে রেখাপাত করেছে।
এরশাদ সাহেব গণআন্দোলনের দাপটে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ছাড়লেন । বেগম খালেদা জিয়া সরকার তাকে কারাগারে পাঠাল। তাকে কি ধরণের করুণ জীবন যাপন করতে হচ্ছে , সে সংবাদ মাঝে মধ্যে কাগজে ছাপা হত । পাঠ করে আমার মনে এক ধরণের কষ্ট জন্ম নিত। আহা মানুষটা অল্প কিছুদিন আগেও প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে বারো কোটি মানুষকে শাসন করেছে । আজ তাঁর কি দুর্দশা ।
এরশাদ অনেক ধরণের নালিশ করতেন । তাকে ঘিঞ্জি সেলে রাখা হয়েছে , সংবাদপত্র দেওয়া হয় না। যে সব খাবার দেওয়া হয় সেগুলো মুখে দেওয়ার অযোগ্য ইত্যাদি ইত্যাদি ।এরশাদের কারাবাসের সময়ে কারারুদ্ধ রাষ্ট্রপতির বেগম জিনাত মোশাররফের উথলানো দরদের কথাও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। বেগম জিনাত এরশাদকে প্যান্ট , শার্ট , পায়জামা , পাঞ্জাবি , গেঞ্জি এবং অন্তর্বাস জেলখানায় নিয়মিত পাঠাতেন এবং তাঁর মন কম্পাসের কাঁটার মত কারারুদ্ধ এরশাদের প্রতি হেলে থাকত। এরশাদের জন্য কষ্ট পেতাম ঠিকই , কিন্তু তাঁর সৌভাগ্যে এক ধরণের ঈর্ষাও বোধ করতাম।
এরশাদ এখন ক্ষমতায় নেই। তিনি কারাগারে দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন। এই চরম দুঃসময়েও সুসময়ের বান্ধবী জিনাত মোশাররফ অনেকটা ঝুকি নিয়ে এরশাদের সুখ সুবিধার দিকে মনোনিবেশ করছেন ।বেগম জিনাত এরশাদের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁর নিজেরসংসারটি ভাঙতে বাধ্য হয়েছিলেন । আমি মনে মনে এই মহিলার খুব তারিফ করতাম । এরশাদ যখন জেল থেকে মুক্তি পেলেন তখন পত্র পত্রিকার সাংবাদিকদের কাছে পাঁচকাহন করে জিনাতের প্রতি তাঁর অনুরাগের কথা প্রকাশ করলেন। কিন্তু একটা সময়ে যখন তিনি অনুভব করলেন যে , তিনি জিনাতকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন না , তখন তাকে পচা কলার খোসার মত নির্মম অবজ্ঞায় ছুঁড়ে দিলেন।
এরশাদের এই কাজটি আমার গানচুরির কাজটির চাইতেও অধিক জঘন্য মনে হয়েছিল।
এরশাদ লোভী , প্রতারক এবং ভণ্ড নয় শুধু একজন কাপুরুষও বটে । পশ্চিমা দেশগুলোতে নারী – পুরুষের সম্পর্ক অধিকতর খোলামেলা । সেখানে কোন রাজনিতিবিদ যদি কোন নারীর সঙ্গে ধরণের কাপুরুষোচিত আচরণ করত তাহলে সেখানেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটতো । আমি মনে মনে এরশাদকে এই ভাবে মূল্যায়ন করেছিলাম ।এরশাদের কবিতা নকল , গান নকল , পুত্র নকল , প্রেম নকল এমনকি আস্ত এরশাদ মানুষটাই একটা নকল মানুষ । আমাদের এই জাতি অত্যন্ত ভাগ্যবান কারণ একজন আগাগোড়া নকল মানুষ দশটি বছর এই জাতিকে শাসন করেছে।
আমার মূল্যায়নের পদ্ধতিটা কিছুটা ভাবাবেগজনিত । যে সমস্ত মানুষ খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করতে অভ্যস্ত , এরশাদ সম্পর্কে সে রকম অনেক মানুষের মতামত আমি জানতে চেষ্টা করেছি । তাদের মধ্যে যে সমস্ত মানুষ সরাসরি এরশাদের দ্বারা বিশেষভাবে উপকৃত হয়নি সে সমস্ত ব্যাক্তি ছাড়া অন্য সকলেই আমাকে বলেছে , এরশাদ অত্যন্ত খারাপ মানুষ। আর এরশাদ যে খারাপ মানুষ সে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ একমত ।
এখন এরশাদ সম্পর্কে আমার মনে যে একটা বিস্ময়বোধ জন্ম নিয়েছে , সে বিষয়ে কিছু কথা বলব । এরশাদকে যখন মামলার পর মামলায় অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া সরকার জেলখানায় ঢোকাল, অনেকের মত আমিও ধরে নিয়েছিলাম এরশাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ । যে কৃষ্ণগহবরের মধ্যে এরশাদ ঢুকেছেন সেখান থেকে কোনদিন বেরিয়ে আসতে পারবেন না । দু’বছর না যেতেই আমার ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হল । ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর হাসিনা এবং খালেদা দুই নেত্রীকে করজোড়ে এরশাদের সামনে হাজির হতে হল । খালেদা জিয়া বললেন , আপনি আমার দলকে সমর্থন করুন , আপনার সমর্থনে আমার দল যদি সরকার গঠনে সক্ষম হয় , আপনাকে রাষ্ট্রপতি বানাব। এরশাদ খালেদার আবেদনে কর্ণপাত করলেন না , কারণ এই মহিলার উপর তিনি ভয়ানক ক্ষুব্ধ । মহিলা তাঁকে জেলখানায় পাঠিয়েছেন । সুতরাং তাঁর সঙ্গে কোন রকমের বোঝাপড়া কিছুতেই হতে পারে না।
হাসিনা বললেন, আপনি আমার দলকে সমর্থন করে আমাদেরকে সরকার গঠন করার সুযোগ করে দিন । আমরা আপনার সবগুলো মামলায় জামিনের ব্যাবস্থা করব এবং আপনাকে মুক্তমানব হিসাবে কারাগারের বাইরে নিয়ে আসব ।বাস্তবিকই হাসিনা এরশাদের সমর্থন নিয়ে ঐক্যমতের সরকার গঠন করলেন এবং এরশাদ সাহেব বাইরে চলে এলেন ।এরশাদ সাহেবের সমস্ত রাজনৈতিক ক্রিয়াকালাপের সঙ্গে টান টান দড়ির উপর দিয়ে চীনা অ্যাক্রোব্যাট মেয়েরা যেভাবে সাইকেল চালায় তাঁর সঙ্গে তুলনা করা যায় । পরিস্থিতি যতই খারাপ এবং অনিশ্চিত হোক না কেন , তিনি ঠিকই নিরাপদে তাঁর কাজটি করে যাবেন ।
বেশ কিছুদিন বাইরে থাকার পর এরশাদ আবার নতুন একটা মোচড় দিলেন।সর্বত্র বলে বেড়াতে লাগলেন আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে রসাতলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।এখন থেকে তিনি এই সরকারের বিরোধিতা করবেন । কারণ এই সরকারের ইতিবাচক কোনকিছু অবদান রাখার ক্ষমতা নেই । তারপর বেগম খলেদা জিয়া জামাতের সঙ্গে মিলে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন গঠন করলেন ।চারদলীয় ঐক্যজোটের কর্মপদ্ধতি এবং রূপরেখা যখন আকার পেতে শুরু করেছে সে সময়ে একটি পুরনো মামলায় এরশাদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা । জরিমানার টাকা যদি শোধ করতে না পারে তাহলে আরও দু’ বছর জেল খাটতে হবে ।
এরশাদ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে যাচ্ছেন, এ সময়ের মধ্যে আদালত থেকে জানানো হয়েছে তাঁকে দু’বছরের কম সময় জেলের মধ্যে থাকতে হবে । কেননা আগে যতটা সময় তিনি জেলে ছিলেন , তাতে পাঁচ বছরের মেয়াদ থেকে সে সময়টা কাটা যাবে । এরশাদের আপিলে কি রায় দেয়া হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলার উপায় নেই । হয়ত এরশাদের দণ্ডাদেশ বহাল থাকবে। হয়ত তাঁকে মুক্তি দেয়া হবে । কিন্তু আমি আমার একটা আশংকার কথা উচ্চারণ করতে চাই । এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা পারমাণবিক বর্জ্যপদার্থের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে ।পারমাণবিক বর্জ্যপদার্থের তেজস্ক্রিয়তা অনন্তকাল ধরে টিকে থাকে । বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ একটা নিয়ন্ত্রকের ভুমিকা পালন করছেন । হাসিনা – খালেদার সাধ্য নেই এরশাদকে কোঁথাও ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার ।
কারণ হাসিনা খালেদা যে ধরণের রাজনীতি করছেন এরশাদের অবস্থান সে ধরণের রাজনীতির মধ্যেই । আমাদের দেশে অনেক লোক ব্যাক্তি হিসেবে এরশাদের নিন্দা করে থাকেন। হাসিনা – খালেদা ভালো কি মন্দ সেটা পুরোপুরি আমরা জানি না । কিন্তু তাদের রাজনীতি এরশাদের রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং তাদের রাজনৈতিক নিয়তির নিয়ন্ত্রকের ভুমিকা এরশাদই পালন করে থাকেন । এই দেশের ভাগ্য , দেশের জনগণ অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে সামরিক শাসনের কব্জা থেকে দৃশ্যত একটা গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন । কিন্তু সেই সামরিক শাসনের একনায়ক মানুষটিকে কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪