চলচ্চিত্রে ভ্রমণ বরাবরই আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। সে রকমই কিছু চলচ্চিত্রের কথা তুলে ধরা হচ্ছে এখানে -
দ্য দার্জিলিং লিমিটেড (ভারত)
এটি আমার দেখা দি পিয়ানিস্ট খ্যাত অভিনেতা এড্রিয়েন ব্রডির তৃতীয় ছবি । দি পিয়ানিস্ট এর পরে তার অভিনয় দেখেছিলাম দ্য গ্র্যান্ড বুডাপেস্ট হোটেল মুভিটাতে । মজার কথা হচ্ছে , দ্য গ্র্যান্ড বুডাপেস্ট হোটেল এর পরিচালক ওয়েস এন্ডারসন ।দ্য দার্জিলিং লিমিটেড মুভিটাও ওয়েস এন্ডারসনের । ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’ একটি কমেডি সিনেমা, যেখানে বলা হয়েছে তিন ভাইয়ের গল্প। বাবা মারা যাওয়ার পর যারা ভারতে আসে তাদের মাকে খুঁজতে, যিনি অনেক আগেই পরিবার ছেড়ে ভারতে দাতব্য কাজ করতে এসেছেন। ভারতীয় সংস্কৃতি, মন্দির, রাজস্থানের মরুভূমি, সোনালী রোদের ঝলমলে দিনে ট্রেন যাত্রার পাশাপাশি এতে আছে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার কয়েকটি গান, যা বাঙ্গালি দর্শককে বিশেষভাবে টানবে। এড্রিয়েন ব্রোডির সাথে আরও আছেন ওয়েন উইলসন, এবং জেসন শোয়ার্জম্যান ।২৬ অক্টোবর ২০০৭ এ মুভিটি মুক্তি পায় , এর রানিং টাইম ১ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট ।
সেভেন ইয়ার্স ইন তিব্বত (তিব্বত)
সাত বছর হিমালয়ের রাজ্য তিব্বতে কাটানো পর্বতারোহী হেইনরিক হেরারের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘সেভেন ইয়ার্স ইন তিব্বত’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মান পাসপোর্ট থাকায় ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়েন হেরার। এরপর কারাগার থেকে পালিয়ে চলে যান তিব্বতের নিষিদ্ধ নগরী লাসাতে।
লাসায় গিয়ে তিনি জীবনের ভিন্ন এক রূপের সঙ্গে পরিচিত হন, দেখা হয় দালাই লামার সঙ্গে। হেইনরিক হেরারের আত্মজীবনীমূলক বই অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন ফরাসি পরিচালক জন জ্যাক অ্যানো। এতে প্রধান চরিত্রে দেখা গেছে ব্র্যাড পিটকে।মুভিটি মুক্তি পায় অক্টোবর ৮ , ১৯৯৭ ।
এ গুড ইয়ার (দক্ষিণ ফ্রান্স)
বেশিরভাগ হলিউডপ্রেমীর কাছে ‘এলিয়েন’ কিংবা ‘আমেরিকান গ্যাংস্টার’-এর মতো সিনেমার জন্যেই পরিচিত নির্মাতা রিডলি স্কট। কিন্তু ‘এ গুড ইয়ার’ সিনেমাটি বর্ষীয়ান এই পরিচালকের অন্য একটি দিকে সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়।
নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যস্ত পরিবার পরিজনহীন লন্ডনের স্টক ব্রোকার ম্যাক্স স্কিনার (রাসেল ক্রো), অর্থের পাহাড় গড়া যার একমাত্র স্বপ্ন। কিন্তু তার স্বপ্নের জোয়ারে ভাটা পড়ে একদিন, যখন তার দূর সম্পর্কের এক চাচা মারা যান। চাচার সম্পত্তি বুঝে নিতে ম্যাক্সকে যেতে হয় দক্ষিণ ফ্রান্সের এক আঙুর বাগানে, যেন না চাইতেই অবকাশ যাপনের সুযোগ পায় সে। আর সেই অবকাশ তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়।
এতে রাসেল ক্রোর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন ফরাসি সুন্দরী ম্যারিয়ন কোটিলার্ড। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে ইংরেজ লেখক পিটার মেইলের গ্রন্থ থেকে।মুভিটি মুক্তি পেয়েছে ১০ নভেম্বর ২০০৬্ ।
সিক্রেট লাইফ অফ ওয়াল্টার মিটি (আইসল্যান্ড ও আফগানিস্তান)
ওয়াল্টার মিটিকে কেউ পাত্তা দেয় না। লাজুক স্বভাবের এই লোকটি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছে ‘লাইফ' ম্যাগাজিনের মাটির নিজের এক অন্ধকার কক্ষে, যেখানে সে কাজ করে স্থিরচিত্র সম্পাদনার। একবার এক বিখ্যাত আলোকচিত্রীর ছবির নেগেটিভ হারিয়ে ফেলে মিটি, এরপর চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে শুরু হয় সেই নেগেটিভ খোঁজার পালা।
একটি ছবির নেগেটিভ খুঁজতে গিয়ে মিটি বের হয় বিশ্ব ভ্রমণে। আইসল্যান্ডে শুরু হওয়া তার এই যাত্রা গিয়ে শেষ হয় আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ে। বেন স্টিলারের নিজস্ব পরিচালনা এবং অভিনয়ের কারণে ওয়াল্টার মিটির সঙ্গে এক উত্তেজনাপূর্ণ অভিযানে খুব সহজেই যোগ দিতে পেরেছে দর্শক। তাই সিনেমাটি সমালোচকদের কাছে তেমন ভালো না লাগলেও বক্স-অফিসে সফল হয়।মুভিটি মুক্তি পায় ডিসেম্বর ২৫ , ২০১৩ ।
কায়রো টাইম (কায়রো, মিশর)
‘কায়রো টাইম’ সিনেমাটির গল্প গড়ে উঠেছে মধ্যবয়স্ক এক নারীকে নিয়ে, যিনি স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে প্রথম বারের মত মিশরের কায়রো ভ্রমণে যান। কিন্তু পেশাগত কারণে ফিলিস্তিনে নানা কাজে আটকে যান তার স্বামী, ফলে কায়রোতে তার ভ্রমণসঙ্গী হন স্বামীর এক মিশরীয় সহকর্মী।
পিরামিড কিংবা মমি দেখানো বাদ দিয়ে মিশরকে নিয়ে একটি ভিন্ন ধরনের ভ্রমণমূলক সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন কানাডার পরিচালক রুবা নাদ্দা। যারা কখনও মিশর যাননি, তাদের জন্য এটি হতে পারে মিশর ভ্রমণের একটি ছোট্ট সুযোগ। এতে অভিনয় করেছেন সুদানি অভিনেতা আলেকজান্ডার সিদ্দিগ এবং প্যাট্রিসিয়া ক্লার্কসন।মুভিটি মুক্তি পায় ৬ অগাস্ট ২০১০ , এর রানিং টাইম এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট ।
লস্ট ইন ট্রান্সলেশন (টোকিও, জাপান)
‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন’এ দেখা যায় দুজন মার্কিন পর্যটককে, যারা এসেছেন জাপানে। ভাষাগত সমস্যার কারণে জনবহুল টোকিওতেও অনেকটা একাকী বোধ করেন দুজনই। পরিচয় হবার পর তারা অদ্ভুত এক বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন।
পরিচালক সোফিয়া কপোলার নির্মাণশৈলীর জাদু অনুভব করা যায় এই সিনেমাতে, যেখানে মূল দুই চরিত্রে অভিনয়ের দক্ষতা দেখিয়েছেন বিল মারে এবং স্কারলেট জোহানসন। চারটি অস্কার মনোনয়ন ছাড়াও এতে অভিনয়ের জন্য বাফটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মারে এবং জোহানসন দুজনই। মুভিটি মুক্তি পায় সেপ্টেম্বর ১২ , ২০০৩ ।
ইনটু দ্য ওয়াইল্ড (আলাস্কা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
আমাদের সবার ভেতর বাস করে এক অভিযাত্রী। তাই মাঝে মাঝে সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা হয় সবারই। অ্যালেকজান্ডার সুপারট্র্যাম্প নামের এই যুবকের গল্প আমাদের সেই অভিযাত্রী সত্তাকে যেন ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে।
‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’ হলো ক্রিস্টোফার ম্যাকান্ডলেস নামের এক যুবকের সত্যি কাহিনি, সদ্য স্নাতক পাশ করার পর যিনি আলাস্কার দুর্গম এলাকায় পাড়ি জমান। দুটি গোল্ডেন গ্লোব এবং দুটি অস্কার মনোনয়ন পাওয়া এই সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এমিল হির্শ। ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’ নির্মাণ করেন অভিনেতা-পরিচালক শন পেন। মুভিটি মুক্তি পায় সেপ্টেম্বর ২১ , ২০০৭ ।
ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা (বার্সেলোনা, স্পেন)
গরমের ছুটিতে হঠাৎ করেই এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বার্সেলোনা যাওয়ার নিমন্ত্রণ পেয়ে যায় ভিকি, তার সঙ্গী হয় ক্রিস্টিনা। দুই বান্ধবীর পরিচয় হয় এক রহস্যময় চিত্রকরের সঙ্গে। বার্সেলোনার উষ্ণ আবহাওয়া আর সেই শিল্পীর সঙ্গ ভিকি ও ক্রিস্টিনার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই পাল্টে দেয়।
স্প্যানিশ ওয়াইনের স্বাদ না পেলেও স্প্যানিশ গিটার, স্প্যানিশ গান এবং ঐতিহ্যবাহী বার্সেলোনার অলিগলির চিত্র ভালই পাওয়া যায় সিনেমাটির মাধ্যমে। ‘ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সেলোনা’ নির্মাণ করেছেন উডি অ্যালেন। এতে অভিনয় করেছেন রেবেকা হল, স্কারলেট জোহানসন, হাভিয়ার বারডেম এবং পেনেলোপি ক্রুজ। এতে অভিনয়ের জন্য পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার এবং বাফটা পুরস্কার জেতেন ক্রুজ। মুভিটি মুক্তি পায় অগাস্ট ১৫ , ২০০৮ এ ।
আন্ডার দ্য টাস্কান সান (টাস্কানি, ইতালি)
মধ্য বয়সে এসে ফ্রান্সিস জানতে পারে, তার স্বামী যুবতী এক নারীর সঙ্গে সংসার পাতার জন্য তাকে ডিভোর্স দিচ্ছে। বিচ্ছেদের পর তাকে বাড়ি ছাড়া করে সাবেক স্বামী। অতঃপর কিছু না ভেবেই ইতালির টাস্কানির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় ফ্রান্সিস। টাস্কানিতে গিয়ে নিজের সবটুকু সম্বল দিয়ে ফ্রান্সিস একটি বাড়ি কিনে ফেলে।
মার্কিন লেখিকা ফ্রান্সিস মেয়েসের আত্মজীবনী অবলম্বনে এই সিনেমাটি নির্মাণ করেন অড্রে ওয়েলস। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে গোল্ডেন গ্লোব অর্জন করেন অভিনেত্রী ডায়ান লেইন। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা টাস্কানির ছোট ছোট কুটিরে কেমন কাটে মানুষের জীবন, তার খানিকটা স্বাদ পাওয়া যাবে এই সিনেমার মাধ্যমে। মুভিটি মুক্তি পায় সেপ্টেম্বর ২০ , ২০০৩ এ ।
দ্য লিপ ইয়ার (ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড)
আইরিশদের মধ্যে প্রচলিত আছে একটি বিশেষ প্রথা। চার বছর পর পর যে অধিবর্ষ আসে, সেদিন যদি কোনো পুরুষ তার প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তবে প্রেমিকাকে বাধ্য হয়ে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। এ কথা মাথায় রেখে ২৯ ফেব্রুয়ারির আগে ডাবলিনে পাড়ি জমায় অ্যানা। উদ্দেশ্য, প্রেমিককে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া। কিন্তু অ্যানা তখনও জানতো না, ডাবলিন ভ্রমণ তার জীবন পাল্টে দেবে।
বৃষ্টিস্নাত ডাবলিন, ঐতিহ্যবাহী আইরিশ বিয়ের পাশাপাশি একটি হালকা প্রেমের গল্পই হল ‘দ্য লিপ ইয়ার’এর বৈশিষ্ট্য। এতে অভিনয় করেছেন এমি অ্যাডামস, ম্যাথিও গুড এবং অ্যাডামস স্কট। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লিপ ইয়ার’ নির্মাণ করেছেন ব্রিটিশ পরিচালক আনন্দ টাকার। মুভিটি মুক্তি পায় জানুয়ারী ৮ , ২০১০ এ ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ গুগল ও jenifer de paris
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪