somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ ও রাসুলের নামে প্রচারিত অলৌকিক ছবি গুলো কতটুক সত্য ? ভূয়া ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক ঘটনার ছবি প্রচার ( ছবি পোস্ট)

০৪ ঠা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তবে এই পোস্ট নাস্তিকদের জন্য ও নয়। বরং এই পোস্ট প্রকৃত ধর্ম-বিশ্বাসীদের জন্য। আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য কিছু ভণ্ড ধর্ম-ব্যবসায়ী ভূয়া ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক ঘটনার ছবি প্রচার করে একদিকে যেমন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তেমনি অন্যদিকে নাস্তিক ও বিধর্মীদের কাছে ইসলাম ধর্মকে হাস্যাস্পদ করছে। আবার কিছু ধর্ম-বিদ্বেষীও ধর্মকে হেয় করার জন্য এসব ছবি ব্যবহার করে। এই পোস্টে সেসব ‘ভূয়া’ মিরাকলের ‘আসল’ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।


সবচেয়ে বিখ্যাত ‘মিরাকল’টি দিয়েই শুরু করি। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে নীচের ছবিটি বাঁধানো অবস্থায় শোভা পাচ্ছে:



এটি নাকি জার্মানির একটি খামারের ছবি–এর গাছগুলি আল্লাহ্‌র কুদরতে এমনভাবে আকৃতি নিয়েছে, যাতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ কথাটি পরিষ্কার ফুটে উঠেছে! এটি দেখে নাকি অনেক জার্মান নাগরিক মুসলমানও হয়েছে। তারপর জার্মান সরকার নাকি জায়গাটি বেড়া দিয়ে আড়াল করে দিয়েছে–আল্লাহ্‌র এই কুদরত দেখে আর কেউ যাতে মুসলমান হতে না পারে।


অথচ আসল ঘটনা হল, এটি মোটেই বাস্তব কোন দৃশ্য নয়, বরং ডাঃ সাঈদ আল-খুদারি নামে এক মিশরীয় ব্যক্তির হাতে আঁকা তৈলচিত্র! একই ব্যক্তির ‘আঁকা’ মানুষের শ্বাসনালীর নীচের ছবিটিকেও দেখুন কীভাবে এর পরের ছবিতে আল্লাহ্‌র কুদরতের নিদর্শন হিসেবে চালানো হয়েছে:




পরবর্তীতে অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী মিশরীয় ব্যক্তি আসল ঘটনা উন্মোচন করে ই-মেইল পাঠালে একটি ইসলামী ওয়েবসাইট গাছের ও ফুসফুসের ছবি দুটি সরিয়ে নেয়।

এবার দেখুন নীচের ছবিতে ক্যাকটাস গাছকে কীভাবে ‘আল্লাহু’ লেখা মিরাকল হিসেবে দাবি করা হয়েছে -




বক-ধার্মিকগণ নীচের গাছটিতেও ‘আল্লাহু’ লেখা খুঁজে পেয়েছে:




আরও দেখুন অস্ট্রেলিয়ার এক বনে রুকুর ভঙ্গিতে থাকা গাছের ছবি -




উপরে গাছের ছবিগুলি যদি আল্লাহ্‌র কুদরতই হয়, তবে নীচে দেখানো গাছের ছবিগুলির ব্যাখ্যা কী?


১। মানুষের মুখের আকৃতির গাছ:



২। হাতির আকৃতির গাছ (কোন হিন্দু যদি এটি দেখে ‘গণেশ’ বলে দাবি করে, তবে আপনি কী বলবেন!



৩। ব্যালে নর্তকীর ভঙ্গীতে গাছঃ




৪। আরেকটি মানুষের আকৃতির গাছ:




৫। সিঙ্গাপুরের হনুমান গাছ (যা দেখে হিন্দুরা ‘হনুমানদেবের’ কীর্তি ভেবে ভক্তিভরে পূজা শুরু করেছে!):






বরং সাগরের বুকে মানুষের তৈরি কৃত্রিম ‘খেজুর গাছ’ আকৃতির দ্বীপকে আমার বিজ্ঞানের ‘মিরাকল’ মনে হয়। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে কত জ্ঞানই না দিয়েছেন! নীচে দেখুন দুবাইয়ের ‘আল-নাখীল’ দ্বীপ:




এবার দেখুন মেঘের গায়ে ‘আল্লাহু’ লেখা মিরাকল:



অথচ আপনি চাইলে আকাশের মেঘের গায়ে হাতি, ঘোড়া, গাছ, ইত্যাদি অনেক কিছু কল্পনা করতে পারেন। এরকম ‘মিরাকল’ দেখতে চান? তাহলে নীচে দেখুন:

১। গাড়ি আকৃতির মেঘ (এটি দেখে জাপানের টয়োটা কোম্পানি যদি নিজেদের ‘স্বর্গীয়’ বলে দাবি করে, তবে কেউ এর জন্য দায়ী না!: )



২। হাতি আকৃতির মেঘ:



৩। আরেকটি হাতি-মেঘ (হিন্দুদের দেবতা গণেশের মিরাকল?):




নীচে ‘গনেশ’ আকৃতির একটি ফুলও দেখুন তাহলে:



এবার দেখুন প্রাণীর গায়ে ‘আল্লাহু’ ও ‘মুহাম্মদ’ লেখা ছবি:






উপরের প্রাণীর ছবিগুলি যদি আল্লাহ্‌র কুদরত হয়, তবে নীচের ছবিগুলি কার কুদরত?

১। গরুর গায়ে হিন্দুদের ‘ওম’ লেখা:



২। গরুর গায়ে খ্রীস্টানদের ‘ক্রশ’ আঁকা:




কেউ কেউ নীচের ছবিতে পাহাড়ের গায়ে অলৌকিক ‘আল্লাহু’ লেখা দেখতে পায়:




এখন পাহাড়ের গায়ে ‘ওম’ লেখা নীচের ছবিটি দেখে কী বলবেন?




এখন দেখুন এক পাকিস্তানি নাকি চাপাতিতে ‘আল্লাহু’ লেখা বলে দাবি করেছে:




তাহলে নীচের ‘ওম’ পরোটা দেখে সে কী বলবে?:




আবার নীচের ছবিটাতে সাগরের মাঝে পাথরের দ্বীপটি নাকি ‘সেজদারত’:



তাহলে নীচের ছবির ভালোবাসার প্রতীক ‘হার্ট’ আকৃতির দ্বীপটা দেখে যদি কেউ দাবি করে ১৪ ফেব্রুয়ারি 'ভালোবাসা দিবস' ইসলাম-সম্মত, তবে তাকে কী বলবেন?:




সুতরাং এসব ছবির বেশির ভাগই প্রকৃতির খেয়াল, কাকতালীয়, দৃষ্টিবিভ্রম কিংবা দুষ্ট লোকের কারসাজির উদাহরণ মাত্র। অথচ আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ওইসলামের মহিমা প্রমাণের উদ্দেশ্যে এরকম হাজার হাজার ভূয়া ‘মিরাকল’ প্রচার করছে ইন্টারনেটের বহু ইসলামী ওয়েব-সাইট।

তাই এসব ছবি দিয়ে যারা আল্লাহ্‌র অলৌকিকত্ব প্রমাণ করতে চায়, তারা আসলে নিজেরা বিভ্রান্ত, অন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেও বিভ্রান্ত করে এবং একই সাথে ইসলাম ধর্মকে হাস্যাস্পদ বা হেয় করে। আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আলাদা মিরাকল দরকার নেই, তার প্রতিটি সৃষ্টিই মিরাকল।


পাদটীকাঃ জাতি হিসাবে আমরা মিথ ছড়াতে ভালবাসি ।আমাদের দেশে পীর ফকীরদের অভাব নাই । আপনাদের দুটো তথ্য দিচ্ছি -
সেদিন ফরিদপুরের এক বিখ্যাত পীরের পুত্রের বই পড়লাম ( বর্তমান গদিনশীন কেবলা হুজুর )। তিনি তার এক বইয়ে লিখেছেন , তার বাবা পীর সম্রাট অমুক ,প্রতি এক রাতে , এশা থেকে ফজর পর্যন্ত ১ হাজার নফল নামায পড়তেন ।
আমি চিন্তা করলাম , দুই রাকাত নামায পড়তে যদি কম করে হলেও যদি দুই মিনিট লাগে ( খুব দ্রুত পড়লে) , তাহলে পাঠক হিসাব করুন এক হাজার নফল নামায পড়তে কত সময় লাগার কথা ।

মতিঝিলের বাবে রহমতের আর এক বিখ্যাত পীর দাবি করেছেন স্বয়ং কাবা শরীফ , তার চার পাশ তাওয়াফ করে ।
অতি অদ্ভুত ভাবে এদের ভক্তের সংখ্যা অগণিত ।

আফসোস এই জাতির ।
( ছবি ও তথ্য সংগৃহীত )
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×