বই পড়ার খুব একটা অভ্যাস ছিল না আমার। অধিকাংশ বই পড়া শুরু করে আর শেষ করতে পারিনি। বেশিরভাগ সময়ে অর্ধেক অথবা তিন ভাগের দুই ভাগ পড়ে রেখে দিয়েছি। যে দুই একটি বই পড়ে শেষ করতে পেড়েছি তার মধ্যে ১৮০০ শকে (১৮৭৪ সাল) প্রকাশিত শ্রী রাজ নারায়ন বসুর "সে কাল একাল" একটি। আমি এর আগেই আমার এক পোস্টে বইটি সম্পর্কে একটু বলেছিলাম। বইটি অনেক আগে লেখা।
এখানে বৃটিশরা ভারত বর্ষে আসার পর থেকে সমাজের ভালো ও মন্দের যে পরিবর্তন অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল তার বর্ননা করা হয়েছে। বইটি ১৯০০ সালের পূর্বে প্রকাশিত হলেও সমাজ পরিবর্তনের এমন কিছু বিষয় বইটিতে উল্লেখ আছে যেন মনে হয় কিছুদিন আগের প্রকাশিত বই এটি।
উদাহরন হিসেবে দু/একটি বিষয় উল্লেখ করছি, তিনি বইটির ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, "শিল্প ও বানিজ্যের প্রতি অমনোযোগের জন্য দিন দিন আমরা দীন হইয়া পড়িতেছি। ইংল্যান্ডের (আমরা এখানে ইন্ডিয়া বসাতে পারি) উপর আমাদিগের নির্ভর দিন দিন বাড়িতেছে। কাপড় হতে শুরু করে লবন পর্যন্ত সবকিছুর জন্য বিলেতের (ভারতের) উপর নির্ভর করতে হয়। দেশ হইতে কিছুই হইতেছে না। আমাদের সকল বিষয়েই সাহেবদের (দাদাদের) উপর নির্ভর, তাহাদের সাহায্য ভিন্ন কিছুই করিতে পারি না। শেষকালে ইংরাজরা (ভারতীয়রা) আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিবেন, তবে কি আমরা আহার করিব? কিসে আমাদের জাতিত্ব থাকে, কিসে যায়, তাহার প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া আমাদের চলা আবশ্যক, নতুবা অত্যন্ত অনিষ্ট হইবার সম্ভাবনা।" (পৃষ্ঠা-৫৭)
"বাঙ্গালী জাতী অত্যন্ত অনুকরণপ্রিয়। কিন্তু বিবেচনা করি না যে, সে অনুকরন আমাদের দেশের উপযোগী কিনা, আর তাদ্দারা আমাদিগের দেশের প্রকৃত উপকার সাধিত হইবে কিনা??" (পৃষ্ঠা-৫৮)
মিলেয়ে নিন বর্তমানে আমরা এতটা ইন্ডিয়া ও বিদেশ প্রেমিক হয়ে গেছি যে, আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সবকিছুর জন্য বিদেশীদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আর বাংলাদেশে বাজার এতটাই ভারত নির্ভর হয়ে গেছে যে বাংলাদেশী পন্য বাজারে খুজে পাওয়া দুষ্কর।
লেখক বইটিতে আর একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন যা বর্তমানে চরম আকাড় ধারন করেছে, "এখন লোকের সঙ্গে কথা কহিয়া শীঘ্র বুঝিবার যো নাই যে, তাহার মনের ভাব কি? এ বিষয়ে তিনি বহরমপুর নিবাসী সুকবি রামদাস সেন এর একটি সত্য কবিতা উল্লেখ করেন,
"কত ভাবে ভ্রম তুমি কত সাজপর।
বঙ্গ-রঙ্গ-আগারেতে অভিনয় কর।।
দেশের হিতের জন্য করি প্রানপন।
এখানে সেখানে ফের মহাব্যস্ত মন।।
পীষূষ বর্ষন মুখে হৃদে ক্ষুরধার।
মরি কি বঙ্গের সুত চরিত্র তোমার।।
(পৃষ্ঠা-৬৮)