চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রদের কলেজ ছাত্রাবাসের পরিবর্তে ছাত্রশিবিরের মেসে ওঠার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্র ও অভিভাবকদের কাছে শিবিরের পক্ষ থেকে মেসে ওঠার জন্য মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫২তম ব্যাচের (প্রথম বর্ষ) ১৫ জন ছাত্রকে শিবির নিয়ন্ত্রিত মেসে ওঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিবছর মেডিকেলের প্রথম বর্ষের প্রায় ২০-২৫ জন ছাত্রকে শিবির পরিচালিত রেটিনা কোচিং সেন্টারসংলগ্ন ভবনসহ বিভিন্ন মেসে বিনা ভাড়ায় রাখা হয়। রেটিনা কোচিং সেন্টার শিবির পরিচালিত। বর্তমানে এর পরিচালক মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জলিল আহমেদ ওরফে জনি। তিনি শিবির চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার সদস্য।
জলিল প্রথম বর্ষের ছাত্রদের মেসে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মেডিকেলের নাসিরাবাদের ছাত্রাবাসে ছাত্রদের পড়ার পরিবেশ নেই। ওটা ছাত্রলীগ দখল করে আছে। তাই শিবির তাদের নিজস্ব তিন-চারটি মেসে নতুন ছাত্রদের রাখার ব্যবস্থা করে। প্রতিবছর ২৫-৩০ জন ছাত্র হয়। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নতুন ছাত্রদের নাসিরাবাদের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। তবে রেটিনা শিবির নিয়ন্ত্রিত হলেও আমাদের নিজস্ব কোনো মেস নেই।’
মেডিকেলের সভাপতি এস এম তালিবুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে আমাদের ছেলেরা ছাত্রাবাসে থাকতে পারে না। তাই তাদের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, আবার আমরা কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করি।’ নতুন ছাত্রদের এভাবে নিজেদের পক্ষে টানাকে কেন্দ্র করে গত ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ হয়। ছাত্রাবাসের ৪০টি কক্ষে অগ্নিসংযোগও করা হয় তখন।
জানা গেছে, মেসে থাকার জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে শিবির কোনো টাকা নেয় না। শুধু খাওয়া-দাওয়া বাবদ টাকা নেয়। এ ছাড়া বইপত্র দিয়েও ছাত্রদের সহযোগিতা করা হয়। মেসে থাকা অবস্থায় মেডিকেলে নবীন ছাত্রদের দলীয় নিয়মশৃঙ্খলা, দায়িত্ব ও কর্তব্য কীভাবে পালন করতে হবে—তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এক বছর পর তাদের কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে শিবিরের নিয়ন্ত্রণাধীন কক্ষে নেওয়া হয়। তাদের দেওয়া হয় সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ নিয়ম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথমবর্ষের দুই ছাত্র বলেন, ‘আমাকে সবুজ নামে এক বড় ভাই ফোন করে বলেন, তুমি ছাত্রাবাসে কেন উঠবে? ওখানে পড়ালেখা করতে পারবে না। তার চেয়ে বরং রেটিনার ছাত্রাবাসে ওঠো। এখানে ফ্রি বই পাবে, থাকার জন্য কোনো টাকা দিতে হবে না।’
ওই ছাত্র অভিযোগ করেন, রেটিনাতে উঠতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। শুধু ছাত্র নয়, ভর্তি ফরম থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ছাত্রদের অভিভাবকদেরও ফোন করা হচ্ছে শিবিরের পক্ষ থেকে। ফোনে রেটিনার নিরিবিলি পরিবেশের গুণাগুণের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রাবাসের দুরবস্থা ও ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যের কথা তুলে ধরা হয়।
এক বছর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলে বসে মেডিকেলের প্রথমবর্ষের ছাত্রদের নাসিরাবাদের ছাত্রাবাসে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু প্রতিবছর কিছু ছাত্রকে শিবির তাদের নিজস্ব মেসে ভাগিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫১তম ব্যাচের ২৫ জন ছাত্রকে শিবিরের ছাত্রাবাসে রাখা হয়েছিল। সেখানে শিবিরের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আস্তে আস্তে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়। এখন ওই ছাত্ররা প্রধান ছাত্রাবাসে থাকেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিন উদ্দিন এ খান বলেন, ‘আমাদের ছেলেদের জন্য পর্যাপ্ত আসনব্যবস্থা রয়েছে। এখন কেউ যদি হলে না ওঠে আমরা কি করতে পারি? তবে কিছু সংগঠন থেকে তাদের মেসে রাখার প্রলোভন দেওয়া হয়—এটা ঠিক। কিন্তু আমরা ছাত্রদের বলি তারা যেন হলে থাকে।’
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো