বিশেষ দ্রষ্টব্যঃএই গল্প পুরোটাই কাল্পনিক।বাস্তবের কোনো কিছুরই সাথে এর মিল থাকার কথা নয়,আর মিল পাওয়া গেলেও সেটা কাকতাল ছাড়া আর কিছুই নয়।
দায় স্বীকারঃ লেখায় বানান ভুল থাকলে লেখক ক্ষমাপ্রার্থী।
অংশ ১২ (ফ্ল্যাশব্যাক ৩)
মির্জাগঞ্জের একমাত্র জমিদার বাডি,সপ্নপুরীর সামনে বিশাল এক শতবর্ষী বটগাছ।যতই বয়স বেড়েছে গাছটির ততই তা প্রকান্ড হয়ে উঠেছে।শাখা-প্রশাখার বিস্তার আর মূলের শক্ত গাথুঁনি গাছটির পরিচয় আলাদা করে দেয় মির্জাগঞ্জের অন্য সব গাছের থেকে।এই বটগাছের বটতলা মির্জাগঞ্জের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এখানকার সব ধরনের সালিশ বৈঠক,বিচার-আচার কাজ,প্রতি বছরের বৈশাখী মেলা,প্রতি বছরের বাউল মেলা,প্রতি বছরের ঈদ মেলা - সব কিছুর সাথেই এই বটতলা জড়িত।তাই তো এই বটতলা অনেক আদরের মির্জাগঞ্জের মানুষদের কাছে।সপ্নপুরীর সবার কাছে এই বটগাছের আলাদা এক মর্যাদা আছে।এই বটগাছটি মির্জা বংশের প্রথম স্থপতি, মির্জা খানের লাগানো।তাই জমিদারির সব কাজের সূত্রপাত হয় এই বটতলা থেকেই।আজকেও এই বটতলাকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে।আজও জড়ো হয়েছে গ্রামের সব মানুষ।কি সেই উপলক্ষ?
মির্জা শাব্বির আজকে ৩ বছর পর আবার গ্রামের সবার সামনে আসবে,কথা বল্বে।গ্রামের সবাইও অনেক কৌতূহলী মির্জা শাব্বিরের ব্যাপারে।কারণ মির্জা শাব্বির এখন গ্রামের গর্ব।বিদেশ থেকে যে সে পড়াশুনা করে এসছে!তাই তো সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মির্জা শাব্বিরের এক ঝলক দেখার জন্য।সপ্নপুরীর মূল ফটক দিয়ে একে একে বের হয়ে এলেন মির্জা আলি এবং তার পুরো পরিবার।সাথে সাথেই উপস্থিত মানুষের তুমুল উল্লাস,করতালি আর হর্ষধ্বনি।বটতলায় উঠলেন মির্জা আলি।তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে কথা বলা শুরু করলেনঃ
মির্জা আলিঃ কেমন আছেন সবাই?
উপস্থিত জনতাঃ (একসাথে) ভাল!
মির্জা আলিঃ আলহামদুলিল্লাহ।আপনারা তো নিশ্চয়ই জানেন আজকে আপনাদের এখানে কেন ডাকা হয়েছে।আজকে শুধু আমাদের জমিদার বাড়ির জন্যই না,আপনাদের জন্যও একটা খুশির দিন।আপনাদেরই ছেলে ৩ বছর পর বিদেশ থেকে ভালভাবে পড়াশুনা করে আপনাদের দোয়ায় সহি সালামতে আবারও আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছে আপনাদের গর্ব হয়ে।আপনারা তাকে বরণ করে নেন,এই তো মির্জা শাব্বির!
মির্জা শাব্বির প্রচন্ড উল্লাস-ধ্বনির মধ্য দিয়ে বটতলায় উঠে এসে নিজের বাবা,মির্জা আলির পাশে এসে অবস্থান নিল।যোগ্য বাবার সুযোগ্য ছেলে।উপস্থিত জনতার হাততালি শেষ হলে মির্জা শাব্বির কথা বলা শুরু করলঃ
“কেমন আছেন আপনারা সবাই?আল্লাহর রহমতে আমিও আপনাদের দোয়াতে ভালি আছি।৩ বছর পর আবার আপনাদের মাঝে আসতে পেরেছি,আপনাদের গর্ব হতে পেরেছি - এতেই আমার আনন্দ।আপনারা আমাকে ভালবাসেন বলেই আজকে আমি উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে আসতে পেরেছি।আপনাদের সবার কাছেই আমি অনেক কৃতজ্ঞ আমাকে সম্মান দেবার জন্য,দোয়া দেবার জন্য।আপনারা সাধারণ জনগণ হয়ে আমাদের এই জমিদার পরিবারের প্রতি যুগ যুগ ধরে আপনাদের যে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন সেটার মূল্য আমরা সবসময় দেবার চেষ্টা করব।আশা করি আপনারা সবাই ভাল থাকবেন আর আপনাদের সাথে আমরা সবসম্য আছি এবং থাকবও।”
মির্জা আলিঃ “আমার ছেলে,এই গ্রামের ছেলে মির্জা শাব্বিরের আমাদের মাঝে ফিরে আসা উপলক্ষে আপনাদের সবার জন্য জমিদার বাড়ি,সপ্নপুরীর বাগান বাড়িতে আজ বিকেলে থাকবে আনন্দ উৎসব।আপনারা সবাই আসবেন।এছাড়াও আপনাদের আগামী ৩ মাসের জমির খাজনাও মওকুফ করা হল,আপনাদের যাদের ঋণ রয়েছে সেগুলোর সুদও মওকুফ করা হল,যারা অভাবী আছেন তাদেরকে আগামী এক সপ্তাহের জন্য সপ্নপুরী থেকে তিন বেলা খাবার দেয়া হবে।এসন সুযোগ-সুবিধা শুধুমাত্র আপনাদের জন্যই।আজকের বৈঠক এই পর্যন্তই।আপনাদের সাথে দেখা হবে আজকে বিকেলে,কষ্ট করে এখানে এসেছেন এই জন্য সবাইকে ধন্যবাদ আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ”
মির্জা আলির এই কথাগুলো শেষ হওয়া মাত্রই উপস্থিত জনতা প্রচন্ড উল্লাসে ফেটে পড়ল।সবার মুখেই খুশির ঝিলিক।অনেকেই ছুটে এল মির্জা শাব্বিরের কাছে,তাকে পরালো ফুলের মালা,কেউ কেউ তাকে জড়িয়ে নিল বুকে,কেউ কেউ দিল মাথায় ধরে আশির্বাদ।এক পর্যায়ে কয়েকজন মিলে মির্জা শাব্বিরকে কাধেঁ তুলে নিয়ে স্লোগান দিতে লাগলঃ “মির্জাগঞ্জের গর্ব, তোমার আমার মির্জা শাব্বির”। এভাবে স্লোগান দিতে দিতে লোকজন মির্জা শাব্বিরকে নিয়ে অর্ধেক গ্রাম প্রদক্ষিণ করে ফেলল।সবাইকে বিদায় দিয়ে মির্জা শাব্বির ফিরে এল সপ্নপুরীতে।সবার মুখেই আনন্দ।মির্জা শাব্বির ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ল খানদানি আসনে।
সেদিন বিকেলে সপ্নপুরীর বাগান বাড়িতে দারুণ এক জমজমাট আনন্দ উৎসব হয়ে গেল।ছিল যাত্রাপালা,পুথিঁপাঠের আসর,নানা-নাতির গম্ভীরা,বাউল গান,নর্তকীদের নাচের আসর,আতশবাজির খেলা আর ধুমধাম খাওয়া-দাওয়া।পুরো মির্জাগঞ্জ হাজির ছিল এই আনন্দ মেলায়।এই উৎসব চলে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।সবাই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশে,মনে হচ্ছিল বুঝি আজ মির্জাগঞ্জে ঈদ এসেছে।পুরো মির্জা পরিবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই আনন্দ মেলাতে সাধারণ জনগণের সাথে উৎসবে মেতে উঠে।সবমিলিয়ে শুধু খুশি আর আনন্দের বন্যা মির্জাগঞ্জের সবার মনে।১৯৭১ সালে একজন বিলেত থেকে ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে আসার খুশি কোনো অংশে ঈদের খুশির চেয়ে কম নয় মির্জাগঞ্জবাসিদের জন্য।সুখী মির্জা জমিদার পরিবার,সুখী মির্জাগঞ্জবাসী আর সেই সাথে আলো ঝলমলে সপ্নপুরী।
পরের অংশঃ ফ্ল্যাশব্যাক ৪
ব্লগ পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
শারিফ শাব্বির
ইমেইলঃ sharif_shabbir@yahoo.com
টুইটারঃ http://www.twitter.com/kliptu
ফেইসবুকঃ http://www.facebook.com/kliptu
ওয়েবসাইটঃ
http://bdbuzz.ucoz.net
http://grou.ps/bdlinks
http://kotharbuli.blogspot.com