মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে, প্রতিটি দিনই নতুন উদ্যমে বাঁচার লড়াই শুরু করতে হয়েছে, প্রতিটি সুর্যোদয় প্রতিকূল পরিবেশে তার বেঁচে থাকা আর প্রতিটি সূর্যাস্তে আরও একটা দিন বেঁচে থাকার কৌশল উদ্ভাবনে কেটে গেছে।
অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের স্পষ্ট পার্থক্য আছে, এ পার্থক্য যতটা না প্রবৃত্তিগত তার চেয়েও বেশী আকৃতিগত। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রাণীত্বের বাইরে মানুষের আকৃতিগত বিকাশ অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় তার বেঁচে থাকবার সম্ভবনা অনেক বেশী বৃদ্ধি করেছে। এখন পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য মতবাদ মানুষের আদিমপুরুষের জন্ম হয়েছিলো আফ্রিকায়- কিংবা আমরা যাদের আধুনিক মানুষ বলছি তাদের জন্ম হয়েছিলো আফ্রিকায়। যদিও বহিরাবরণ দেখলে মনে হয় না এরপরও বাস্তবতা হলো আফ্রিকা এবং ইউরোপের মানুষের ভেতরে আভ্যন্তরীণ কাঠামোতে তফাত খুবই কম। এদের ডিএনএ'র গঠনেও অনেক মিল, যদিও দীর্ঘ সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটিয়ে এদের বহিরাঙ্গে অনেক ধরণের পরিবর্তন এসেছে তারপরও তাদের ডিএনএ এবং মাইটোকন্ড্রিয়াল কনটেন্ট পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে তারা একই উৎস থেকে বিবর্তিত হয়েছে।
রাসায়নিক পরীক্ষাগারে যখন আবিস্কৃত হলো মানুষের রক্তে বিশেষ ধরণের প্রোটিন রয়েছে যা বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিক্রিয়া করে তখন থেকে মানুষকে রক্তের ভিত্তিতে ৪টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে- ও, এ, বি এবং এবি- অন্য একটি রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতি- অনুপস্থিতি বিবেচনা করে এই চার ভাগকে আরও দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে- সুতরাং পৃথিবীর প্রতিটি মানুষেরই ধমনীতেই রক্ত এই আট ভাগের কোন না কোনটি প্রবাহিত হচ্ছে।
কোনো কোনো গোত্রে ও পজিটিভ রক্তধারী মানুষের সংখ্যা বেশী- এমন কি মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশী মানুষের রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ, বিজ্ঞানীদের অনুমাণ কোন একটি সময়ে কোনো একটি সংক্রামক ব্যাধীর সংক্রামনের পরিমাণ যদি রক্তের গ্রুপের উপরে নির্ভর করে তাহলে এ ধরণের প্রবনতাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ও পজিটিভ রক্তের মানুষের বিভিন্ন ধরণের জীবানু সংক্রামণের বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিদ্যমান- যে কারণে অন্য তিনটি রক্তের গ্রুপের মানুষজন জীবানু সংক্রামণে মৃত্যুমুখে পতিত হলেও ও পজিটিভ রক্তধারী মানুষেরা সে জীবানুর সংক্রামণে মৃত্যুবরণ করে নি।
প্রতিটি অঞ্চলের নির্দিষ্ট আঞ্চলিক বৈশিষ্ঠ্য আছে- সে বৈশিষ্ঠ্য নির্ধারণ করে সেখানে কি কি জীবানুর অবাধ বিস্তার সম্ভবপর- এসব পরিসংখ্যানগত বিবেচনায় যদিও চুড়ান্ত কোনো রায় দেওয়া অনুচিত তারপরও বলা যায় পৃথিবীর মানুষদের বর্তমানের বৈচিত্র নিছকই প্রাকৃতিক বিবর্তনের প্রভাব- আলাদা আলাদা উৎস থেকে এখানে মানুষের উৎপত্তি হয় নি। পৃথিবীর বিশাল সংখ্যক মানুষের মাইটোকন্ড্রিয়াল কনটেন্ট যাচাই করে দেখা গেছে এদের ভেতরে মাত্র ৭টি নারী এবং ৪জন পুরুষের অস্তিত্ব আছে- কোন না কোন ভাবে আমরা এই ৭ নারী এবং ৪ জন পুরুষের উত্তরপুরুষ। সেই ধারাবাহিক যাত্রাপথের একটা পর্যায়ে আমরা এখানে উপস্থিত। এ যাত্রাপথ মসৃণ ছিলো না, নানাবিধ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে আমাদের এ অবস্থানে আসতে হয়েছে।
সংঘবদ্ধ জীব হিসেবে একটি গোত্রে তাদের বসবাস ছিলো, গোত্রবদ্ধ জীব হিসেবে অন্যান্য জীবের সাথে আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে হয়েছে, বিভিন্ন চিহ্ন , শাররীক ভঙ্গি এবং উচ্চারিত শব্দে আমরা আমাদের মনোভাব প্রকাশ করতে প্রশিক্ষিত হয়েছি। মানুষকে দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে অর্থবোধক শব্দ উচ্চারণ শিখতে হয়েছে, একটি সমাজে কিংবা একটি গোত্রে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একধরণের ভাষারীতিতে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। যদিও তেমন কোনো কারণ নেই এরপরও ভাষাবিজ্ঞানীদের অনুমাণ মানুষের উচ্চারিত প্রাথমিক শব্দগুলো একস্বর কিংবা দ্বিস্বর বিশিষ্ট শব্দ ছিলো, সময়ের সাথে মানুষের উচ্চারণ পারদর্শিতা বেড়েছে , শব্দে স্বরের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবেই একটা সময় সরল এক শব্দ বিশিষ্ট বাক্য থেকে যৌগিক ও জটিল ভাবপ্রকাশউপযোগী ভাষার জন্ম হয়েছে।
ভাষা পারস্পরিক যোগাযোগে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে- শব্দ সম্ভার বেড়েছে, বেড়েছে প্রকাশযোগ্যতা। আজ যে শিশুটা ২ বছর বয়েসেই ৪০ শব্দের অভিধান নিয়ে তার জীবন শুরু করছে তার এই অনায়াস উচ্চারণ সক্ষমতার নেপথ্যে মানুষের ২ লক্ষ বছরের গোপন পরিশ্রমের স্মৃতি লুকিয়ে আছে।
১. ২৪ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:৪২ ০
http://www.bigganblog.com/