অবশেষে প্রায় দুই মাস পর বু্য়েট আমাদের পরীক্ষা নামক অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছে। অবশ্য এর পিছনে আমাদের নিজেদের কৃতিত্ব(!)ও কম না(বুয়েটিয়ান মাত্রই স্বীকার করবেন)। যাই হোক ইদানীং অনলাইনের প্রতি রীতিমতো বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছি কেননা এটা আমার ব্যক্তিসত্ত্বাকে রীতিমত নাই করে দিয়েছে। তাই আজকে রীতিমতো ঝোঁকের বশেই ফেইসবুকটাকে ডিএকটিভেট করলাম। ভাবলাম হল ছেড়ে বাড়ি যাওয়ার আগে একবার সামহোয়্যারে ঘুরে যাই। আর আসলামই যখন তখন একটা পোস্ট দেওয়ার লোভ আর সামলাতে পারলাম না।
জোসেফ জো সাত্রিয়ানি(Joe Satriani) জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালের এক শরতে, নিউইয়র্ক শহরে। বাবা মা দুজনেই সংগীত প্রেমী হওয়ায় মোটামুটি একটা সংগীতময় পরিবেশেই বেড়ে উঠেছেন। শিশুকালে ফুটবলের দিকেই মনোযোগ বেশি ছিলো। ১৪ বছর বয়সে জিমি হেন্ড্রিক্সের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর তার মধ্যে গিটার বাদনের প্রতি আকর্ষন জন্মে।সেই থেকে শুরু, তার পর থেকে আজ প্রায় তিরিশ বছর হয় ইলেকট্রিক গিটার প্লেয়িংয়ে একটা বিপ্লব এনে দিয়েছেন তিনি। অনেক নামকরা virtuoso তার ছাত্র। উল্লেখ করার মতো দুই একজনের নাম বলছি, Steve Vai, Kirk Hammett । মাঝখানে কিছুদিন ডিপ পার্পলের লীড গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এসময় তার প্লেয়িং এর জনপ্রিয়তা এতোই বৃদ্ধি পায় যে ডীপ পার্পল তাকে ব্যান্ডের পার্মানেন্ট লীড গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু রেকর্ডিং স্টুডিওর সাথে চুক্তি থাকায় তিনি সে অফার গ্রহণ করতে পারেন নি।তাছাড়া রিচি ব্ল্যাকমোরের মতো লিজেন্ডারি গিটারিস্টকে(যাকে তিনি নিজের আইডল মনে করেন) রিপ্লেস করার মত ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য তার ছিল না।বরং তিনি নিজের সলো আর্টকে সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
তারপর তিনি গীটার সংক্রান্ত অনেক লাইভ শো করেছেন। যার মধ্যে সবচে উল্লেখযোগ্য হলো G3 জ্যামিং কনসার্ট, যেখানে বিশ্ববিখ্যাত গীটারিস্টরা অংশ নিয়েছেন।প্রায় প্রতি দুই বছরে এ শো হয়ে থাকে। গিটারপ্রেমিকদের কাছে এটা অত্যাধিক আদরণীয় একটা শো।
দুঃখের বিষয় এই যে এত বড় মাপের একজন শিল্পী হয়েও তিনি কখনো প্রাপ্য মর্যাদা পান নি।
তার বিরুদ্ধবাদীদের সবচে বড় অভিযোগ হল তার বাজনা নাকি অত্যাধিক টেকনিক্যাল, তাতে প্রাণের ছোয়া নেই। তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই ভিতরে প্রাণ না থাকলে এতগুলো এলবাম পাবলিশ করা যায় না।জো-র দুই একটা রোমান্টিক ট্র্যাক শুনে দেখুন ভালো না লাগলে তার পর অন্য কথা।
Always with Me Always with you
Rubina’s Blues Sky Happiness
ব্লুজ বেইসড ইন্সট্রুমেন্টাল রক তার মূল হলেও বিভিন্ন ধরনের genre নিয়ে মিউজিক করেছেন
Oriental Melody
Summer Song
Flying in a Blue Dream
গিটারে টেকনিক্যালিও তার চেয়ে দক্ষ কেউ আছে কিনা তা নিয়ে আমার মনে যথেষ্ট সংশয় আছে। টেকনিক্যাল মানে তো আর শুধু ফাস্ট প্লেয়িং নয়। তার সাথে অনেক কিছু জড়িত। দুটো ট্র্যাক শুনলে মাথা কিছুক্ষনের জন্য ঘোরাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই
Surfing with the Alien
Satch Boogie
জো সাত্রিয়ানি কে যে কারনে সবচে ভালো লাগে সেটা হলো তার স্টেজ পারসোনা। গিটার বাজানোর সময় তিনি অন্য ঘোরে থাকেন, তবে তার বিনয় উল্লেখ করার মত। যেকোন শো এর শেষে আগে সকল Personnel কে শ্রোতাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন,ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, আর সবশেষে নিতান্তই লজ্জার সাথে বলেন “and my name is Joe Satriani”
যেকোন G3 শোতেই দেখেছি অন্য শিল্পীদের আগে সলো নেওয়ার সুযোগ দিয়ে শেষে নিজে বাজান। একজন গিটার প্লেয়ারের মূল লক্ষ্যই থাকে সলো বাজানো, অথচ অন্যকে সুযোগ দিতে তিনি এ সুযোগ হেলায় হারান।
আমি মনে করি একজন ভালো শিল্পীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ তার বিনয়।আর এ ক্ষেত্রে জো সাত্রিয়ানিকে ফুল মার্কস দিতেই হয়।
এহেন গীটারিস্ট , তাকে রোলিং স্টোন ম্যাগজিন প্রথম ১০০ জনের মধ্যেও রাখে নি।সত্যই অসাধারণ তাদের জাজমেন্ট।
আসলে গীটারিস্টদের কদর কমই, কেননা তারা হলেন Cult এর অংশ , Community র না। একটা টানা ছয় মিনিটের ইন্সট্রুমেন্টাল শুনে মজা পাওয়া একটু কঠিনই বটে, তবে তার পরও যারা শোনেন অথবা এ লাইনের সমঝদার তাদের কাছ থেকে এরকম অবহেলা আমাদের হতাশও করে
আমি গিটার বাজাতে পারি না, তবে গিটার বাজানোর স্বপ্ন দেখি । আর এই স্বপ্ন দেখার পিছনে অন্যতম অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে জো-র ট্র্যাকগুলো।
লেখার শুরুতে আমি বলেছি যে মিউজিক সম্পর্কে আমার জ্ঞান অতি নগণ্য। তবে তার পরো এই লেখাটা দিলাম কেননা এইটুক অন্তঃত দাবি করতে পারি যে জো সাত্রিয়ানিকে আমি আত্মিকভাবে কিছুটা হলেও চিনেছি( তার সব এলবাম আমার শোনা-অন্তঃত যে কয়টা সংগ্রহ করতে পেরেছি)
আমার কাছে ইলেক্ট্রিক গিটারের একটা প্রতিশব্দ হলো জো সাত্রিয়ানি।তাই আজকে আমার ব্লগের মাধ্যমে এই বড়মাপের মিউজিশিয়ানটির প্রতি আমার শ্রদ্ধা অর্পণ করলাম।