আপনারা যারা মুক্ত বুদ্ধির, সচেতন, দেশপ্রেমিক, কার্টুন এর মতো নিষ্পাপ শিল্পকে ভালোবাসেন,মায়ের জন্য যাদের অগাধ ভালোবাসা, তাদের কাছে আজ আঁকুতি নিয়ে দু’হাত বাড়িয়েছি, হে সন্তান, আপনার সাহায্যে আমাদের মা ভালো হয়ে উঠবেন, আবার তিনি সুস্থ হবেন, শত দারিদ্রতার মাঝে থেকেও যিনি মফস্বলে মানুষ হওয়া কার্টুনিষ্ট ছেলেটাকে আবারো বলবেন-বাবা কার্টুন আঁকা ছেড়োনা!
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে কার্টুনিষ্ট আরিফ এর মায়ের কিডনি ট্রান্সপান্ট বা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আর তা না করতে পারলে আমৃত্যু তাকে ডায়ালাইসিস করতে হবে আর সপ্তাহে দু’দিন করে সেটা করতে প্রয়োজন আরো অনেক বেশী টাকার। আপনারা এক এক করে সামান্য সাহায্য দিলে,চাইলে, এই অর্থ এর সংস্থান খুবই সম্ভব। সামান্য সাহায্যে আমাদের মা আবারো সুস্থ হয়ে উঠবেন, আবারো আমাদের প্রেরণা দেবেন, মায়ের শাশ্বত ভালোবাসায় আবারো সিক্ত হবে তার প্রিয় সন্তান।
বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ শহরতলীর অদূরে সুমী ফ্যাক্টরী নামক স্থান থেকে আরিফ কার্টুন এঁকে পাঠাতো দেশের সব বিখ্যাত সংবাদপত্রে, সেইসব কার্টুন নির্বাচিত হয়ে ছাপা হতো প্রধান সব দৈনিকের জনপ্রিয় বিদ্র“প ম্যাগে। সেই ২০০৪ সালে দৈনিক যুগান্তরের বিদ্র“প ম্যাগাজিন ‘বিচ্ছু’ থেকে যার শুরু। তারপর একে একে উন্মাদ, আলপিন সহ বিখ্যাত সব ম্যাগাজিনে ছাপা হতে থাকে তার আঁকা কার্টূন। মামার সংসারে মানুষ হওয়া আরিফ এর চিন্তার গভীরতা আর কার্টুনের নির্মল বিনোদন সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখতো। পরিবারে আপন বলতে কেবল মা আর ছোট বোন। বাবা সেই ১২ বছর বয়সে তার মা আর ছোট বোনটিকে ফেলে রেখে আবারো একটি বিয়ে করে হারিয়ে যান আরিফ এর চেনাজানা গন্ডি থেকে। মামার সংসারে বাজার সদাই, টিউশানী করে নিজের পড়াশোনা ঠিকই চালিয়ে যান আরিফ, স্নাতক পাশ করার পর ঢাকায় আসেন একরাশ স্বপ্ন নিয়ে। মফস্বলের ছেলে হয়েও শহরের সব মেধাবী কার্টুনিষ্টকে পেছনে ফেলে ২০০৬ এবং ২০০৮ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-সংক্ষেপে টিআইবি আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় কার্টুন প্রতিযোগিতায় গ্র“প বি তে তৃতীয়, জাতীয় ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টার এর ‘ইনসাইট’ ম্যাগ কর্তৃক আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দৈনিক প্রথম আলো এর বিদ্রুপ ম্যাগ-আলপিন কর্তৃক আয়োজিত দেশব্যাপী কার্টুনিষ্ট খুঁজে বের করবার প্রয়াস ‘কার্টুনিষ্ট হান্ট’ এ তৃতীয় হবার গৌরব অর্জন করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। আলপিন এর তৎকালীন বিভাগীয় সম্পাদক সুমন্ত আসলামের অনুরোধে নিয়মিত প্রদায়ক বাহিনীতে যোগ দেন আরিফ। ২০০৭ এর সেপ্টেম্বরে দৈনিক আলপিনে ছাপা হওয়া একটি কার্টুনকে নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরী করে মুক্ত বুদ্ধির চর্চার বিরোধীতাকারী কিছু মৌলবাদী আরিফকে মুরতাদ ঘোষণা দেয়, দেশজুড়ে শুরু করে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন, ফলাফলে সদ্য যুবক আরিফকে জেলে যেতে হয়(অথচ একই বিষয় নিয়ে মৌলবাদী চক্রের একটি কিশোর পত্রিকায় একটি কৌতুক ছাপা হয়েছিলো), মুখোমুখি হতে হয় এক অমানুষিক নির্যাতনের, গ্রাম থেকে মা একা প্রাণপ্রিয় সন্তানকে দেখতে ঢাকা আসেন, কিন্তু দেখা হয়না জেল গেটে। অশিক্ষিত মা বোঝেন না কি দোষে তার সন্তানকে জেল খাঁটতে হলো, কেন?
সেই মা আজ অসুস্থ, আজ সেই সুযোগ এসেছে মা’কে সাহায্য করে জানিয়ে দেবার, না, মা, আপনার সন্তান কোন দোষ করেননি।
আমরা এদেশের কার্টুনিষ্টরা আর বাংলাদেশ কার্টুনিষ্ট রাইটস্ নেটওয়ার্ক একযোগে ঢাকা চারুকলার বিপরীতে ছবির হাট এ আজ ১লা অক্টোবর সকাল ১০ টা থেকে একটি চ্যারিটি কার্টুন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছি, সেখানে এদশের স্বনামধন্য কার্টুনিষ্টদের পাশাপাশি পৃথিবী বিখ্যাত কার্টুনিষ্ট যারা বাংলাদেশ কার্টুনিষ্ট রাইটস্ নেটওয়ার্ক এর ডাকে সাড়া দিয়ে কার্টুন পাঠিয়েছেন যেমন আমেরিকা থেকে এডিটোরিয়াল কার্টুনিষ্ট ডেরিল ক্যাজল, আফ্রিক্যান এডিটোরিয়াল কার্টুনিষ্ট প্যাট্রিক গ্যাথারা, অস্ট্রেলিয়ান এডিটোরিয়াল কার্টুনিষ্ট কেভিন কুগার, পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কিউবান কার্টুনিষ্ট অ্যারেস, ক্যামেরন কারডো, রাশান এডিটোরিয়াল কার্টূনিষ্ট আ্যান্দ্রে , ভারতীয় কার্টুনিষ্ট আজীস কুমার, শ্রীলংকান নিঁখোজ কার্টুনিষ্ট প্রাগিথ একনালিগোডা(কার্টুন পাঠিয়েছেন তার স্ত্রী সন্ধ্যা একনালিগোডা), স্পেনের বিরা , জর্ডানের এডিটোরিয়াল কার্টূনিষ্ট ওমর আল আব্দুলাহ, মিশরের ইসমাইল কার, তুরস্কের তামের ইউসুফ, ইরানের কিয়ানুস রামেজানি প্রমুখ।
আপনারা আসুন, সবার জন্য উম্মুক্ত এ কার্টুন প্রদর্শনী থেকে একটি কার্টুন কিনে শুভেচ্ছামূল্যের বিনিময়ে একজন মা’ কে সুস্থ করে তুলুন। আমরা জানি সন্তানেরা চাইলে সব সম্ভব হয়,হবে।
কার্টুনিস্ট আরিফের লেখা
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:০২