ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করেছিল এ দেশের মুসলমান আলেম সমাজ। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত দীর্ঘ একশ’ বছর মুসলমানরা একাই এই স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে গেছে। হিন্দুরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয় ১৯০০ সালের পর। ১৯০৫ সালে নতুন প্রদেশ পূর্ববংগ ও আসাম গঠণের সময় সবচেয়ে বিরোধিতা করেছেন নিখিল বংগের নামজাদা হিন্দু জমিদার, বুদ্ধিজীবী ও এলিটশ্রেণী। এর আগ পর্যন্ত হিন্দুরা ছিল ইংরেজ শোষণের সহযোগী ও বন্ধু। অতীব বেদনার বিষয় হলো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিবার নতুন পূর্ব বংগ প্রদেশ গঠণের বিরোধিতা করেছেন তাঁদের জমিদারী ও ব্যবসার স্বার্থে।
প্রসঙ্গত ইংরেজরা নতুন প্রদেশ গঠন করতে চেয়েছিল নিজেদের প্রশাসনিক স্বার্থে। কিন্তু হিন্দুরা যখন এর বিরোধিতা করলো, এমন কি সন্ত্রাসী আন্দোলন শুরু করলো তখন ১৯১১ সালে নতুন প্রদেশ গঠন বাতিল করে দিলো। সোজা ভাষায় বলতে গেলে হিন্দু নেতা, জমিদার, বড় বড় ব্যবসায়ীরা সব সময় চেয়েছে পূর্ববংগের মুসলমানদের শোষন করতে। এটাই ছিল তাঁদের রুটি রোজগারের পথ। তাঁরা মনে করতো পূর্ববংগ আলাদা প্রদেশ হয়ে গেলে মুসলমান কৃষকদের আর শোষণ করা যাবেনা।
১৯১২ সালে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ কোলকাতার নামী দামী সব হিন্দু নেতারা এর বিরোধিতা করেছেন। কোথাও কোথাও কবিগুরু এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই কবিগুরু আজ স্বাধীন বাংলাদেশে দেবতার মতো পূজনীয়। তাঁর লেখা গাণ আজ আমাদের জাতীয় সংগীত। তাঁর লেখা গাণ ভারতেরও জাতীয় সংগীত। আমাদের জাতীয় সংগীত নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো ৭১ সালে কোলকাতায় ভারত সরকারের নির্দেশেই।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় মুসলমানেরা অখন্ড বাংলাদেশ চেয়েছিল। কিন্তু রহস্যের বিষয় হলো কংগ্রেস ও হিন্দু কমিউনিস্ট নেতারা মুসলীম মেজরিটি বা সংখ্যাগরিস্ঠ স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি। ১৯০৫ সালে ওইসব নেতারা বংগদেশের অখন্ডতা রক্ষা করার জন্যে রক্ত দিতে রাজী ছিলেন। ৪৭ সালে তাঁরা কেন বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করতে রাজী হলেন তা আমাদের নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই জানতে হবে। আবার ৭১ সালে সেই হিন্দু ভারত বা পশ্চিম বংগ কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করেছে তাও জানতে হবে। অখন্ড বংগদেশে মুসলমানেরা ছিল মেজরিটি বা সংগরিষ্ঠ। তাই সাম্প্রদায়িক হিন্দু নেতারা মনে করেছেন সংগরিষ্ঠ গণতান্ত্রিক অখন্ড বাংগদেশে হিন্দুদের মাইনরিটি হিসাবে বাস করতে হবে। তাই তাঁরা বাংগালী মুসলমানদের সাথে না থেকে দিল্লীর অধীনে অবাংগালী হিন্দুদের অধীনে থাকাটাকে মংগলময় মনে করেছে। অখন্ড ভারতে মুসলমানরা হিন্দুদের সাথে রাজী ছিল। কিন্তু হিন্দু নেতারা মুসলমানদের দাবী মানতে রাজী নয়। এখন ভারতীয় লেখক এবং রাজনীতিকরা স্বীকার করছেন যে, ভারত বিভক্ত হয়েছে হিন্দু নেতাদের গোঁড়ামী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে। ৭১ বাংগালী মুসলমানরা স্বাধীনতা চেয়েছে পাকিস্তানীদের অত্যাচার ও শোষণের কারণে। ৪৭ সালে বাংগালীরা পাকিস্তানী মুসলমানদের সাথে একসাথে পাকিস্তান আন্দোলন করেছিল সাম্প্রদায়িক হিন্দু শাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:২৫