প্রারম্ভিক কথা:
আশরাফ আলী থানভী(রহ.) তথা দেওবন্দি আলেমরা নাকি সর্বেশ্বরবাদি!
আল্লাহপাক বলেন:
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। [৪৯:১২]
অবাক হলাম এত বড় অপবাদের পরও মু’মিনদের নীরবতা দেখে। ভাবটা এমন হলেও হতে পারে, ভুলের উর্ধ্বে তো আর কেউ নয়! যে আলেমদের ব্যাপারে আমরা ভালো ধারণা রাখি, তাদের ওপর কোন অপবাদ এলে আমাদের কী করা উচিত? অপবাদটা নির্বিবাদে মেনে নেব, নাকি ভালো ধারণা পোষণ করব যে হয়ত এখানে বুঝার কোন ভুল হচ্ছে, এ অপবাদ তাঁর জন্য কিছুতেই প্রযোজ্য হতে পারে না। খারাপ ধারণা করার জন্য আমরা জিজ্ঞাসিত হব, ভালো ধারণার জন্য নয়:
যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি।[২৪:১১]
তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং PPবলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?[২৪:১২]
মূল ব্ক্তব্য:
যে কাউকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তার বিভিন্ন লেখা থেকে খাপছাড়াভাবে অংশবিশেষ তুলে ধরা ।একজন মানুষের সব কথা হতে তাঁর উদ্দেশ্য বা বিশ্বাসকে অনুধাবণ করা যায় না। বিশেষ করে অনেক সময় মানুষ এমন কিছু কথা বলে, যেগুলো বাহ্যিকভাবে এক অর্থ বহন করে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য ভিন্ন থাকে। কাজেই কারো বক্তব্য হতে তার বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইলে আগে নিশ্চিত হতে হবে এই বক্তব্য দ্বারা তিনি কী বুঝাচ্ছেন। এখানে আমি থানভী(রহ) এর তা’লিমুদ্দীন কিতাবের দ্বিতীয় খন্ড হতে সেই অংশটুকু তুলে ধরছি যেখানে তিনি পরিষ্কারভাবে ‘ওয়াহদাতুল অজুদ’কে ব্যাখ্যা করেছেন:
**********************************************************************************************
ওয়াহদাতুল অজুদ
একথা সুস্পষ্ট যে, যাবতীয় গুণাবলি এবং ক্ষমতা প্রকৃত প্রস্তাবে একমাত্র আল্লাহতা’আলার। তবে সৃষ্টজীবদের ভেতর যাকিছু ক্ষমতা বা গুণ পরিদৃষ্ট হয়, তা তাদের নিজস্ব নয়, অন্যের নিকট হতে ধার করা। অর্থাৎ আল্লাহতা’আলা দান করেছেন বলে তারা পেয়েছে এবং পুন: তিনি রক্ষা করছেন বলে বিদ্যমান আছে। যে জিনিসের আস্তিত্ব এরূপ ধার করা অর্থাৎ নিজস্ব নয়, অন্যের নিকট হতে পাওয়া গেছে, তার অস্তিত্বকে পরিভাষায় ‘অজুদে-যিল্লি’ বা ‘অযুদে আরেযী’ বলে। যিল্লি অর্থ ছায়া। অর্থাৎ ছায়াবৎ অস্থায়ী ও পরমুখাপেক্ষী অজুদ। কিস্তু এখানে ছায়ার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহপাক কোন শরীরবিশিষ্ট জীব, আমরা তাঁর ছায়া স্বরূপ। যিল্লির অর্থ ছায়া বটে, কিন্তু এই স্থানে এইরূপ অর্থ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ ভুল। এখানকার অর্থ এই যে, তাঁর দানে এবং কৃপায় আমরা অজুদ(অস্তিত্ব) পেয়েছি। তাঁর অনুগ্রহে বর্তমান আছি, ভবিষ্যতেও তিনি ইচ্ছা করলে রাখতে পারেন বা যখন ইচ্ছা করেন বিনাক্লেশে কাল বিলম্ব না করে ধ্বংস করে দিতে পারেন। যেমন, আমাদের ভাষায়ও সচরাচর বলা হয় যে, কোন গরিব লোক হয়ত কোন ধনীর আশ্রয়ে বাস করে। সে বলে, “আমি তো হুজুরেই ছায়ায় বাস করি”। এর অর্থ ছায়া নয় আশ্রয়। যখন মাখলুকের এই আরেযী অজুদকে হিসেবে না ধরা হয়, তখন একমাত্র আল্লাহরই অজুদ(আস্তিত্ব) থাকে। একেই ওয়াহদাতুল ওজুদ বা ‘হামা-উস্ত’ (তিনিই সব) বা লা-মওজুদা ইল্লাল্লাহ ( আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো অস্তিত্ব নাই) বলে। অতএব, ‘তিনিই সব’ এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ, পশু, বৃক্ষ, পর্বত সবই খোদা বা খোদার বিশ্লেষণ ও অংশ বের হযে এইসব হয়েছে।(নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। এই অর্থ সম্পূর্ণ ভুল। এই অর্থ নিয়েই অনেক লোক কাফির ও বুতপরস্ত হয়ে গেছে। শুদ্ধ অর্থ এই যে, মানুষ, পশু, পর্বত ইত্যাদির অস্তিত্ব আসল নিজস্ব অস্তিত্ব নয়, আল্লাহর দান করা অস্হায়ী অস্তিত্ব মাত্র।
************************************************************************************************
শেষ কথা:
তাকওয়া ভালো বিষয়, কিন্তু কখনো কখনো তা একটা রোগ হিসেবে দেখা দেয়।
অতি সতকর্তার নামে পূর্ববর্তী নেকবান্দাদের সমালোচনার দরজাকে উন্মুক্ত করা একটা ফিতনা।
কারণে অকারণে বুঝে না বুঝে সবকিছুতে শিরকের গন্ধ খুঁজে পাওয়া একটা অসুখ।
আল্লাহপাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আ-মি–ন