মুসলমান মাত্র-ই স্বীকার করবেন যে, দ্বীনের মুল দাওয়াত হচ্ছে নিরংকুশভাবে আল্লাহর আনুগত্য করা। এমনকি নবী (স) এর অনুসরন এই জন্য অপরিহার্য যে, তিনি তার কথা ও কাজে আল্লাহর হুকুম আহকামের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কোন জিনিসটি হালাল? কোনটি হারাম? কোনটি বৈধ কোনটি অবৈধ? এ সকল বিষয়ে একনিষ্টভাবে কেবল আল্লাহ ও তার রাসুল (স) এর অনুসরন করতে হবে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও রাসুল (স) ব্যাতিত অন্য কারো আনুগত্যের কথা বলে এবং তাকে স্বাধীন সত্বা হিসাবে অনুসরনীয় মনে করে সে নিশ্চয় ইসলামের গণ্ডি বহির্ভূত।
তাই কুরান সুন্নাহর আহকামের আনুগত্য সকলের উপর ফরজ।
কুরান সুন্নাহর এমন অনেক বিধান আছে যেগুলো সাধারন শিক্ষিতরা ও বুজতে পারে। যাতে অস্পষ্টতা দুর্বোধ্যতা কিংবা বিরোধ নেই। যেমন, কুরানে কারীমে এরশাদ হয়েছেঃ-
لايغتب بعضكم بعضا .
"তোমরা একে অন্যের অসাক্ষাতে বদনাম করোনা"
যিনি-ই আরবী ভাষা জানেন তিনি এ
বাণীর অর্থ বুজতে পারবেন। আর যেহেতু এতে কোন জটিলতা নেই এবং শরীয়তের অন্য কোন দলিল ও এর বিরোধী নয়, তাই এখানে কোন দুর্বোধ্যতা নেই।
আরেকটি উদাহারণ দেখুন। রাসুল (স)
বলেনঃ-
لا فضل لعربي على عجمي
" কোন অনারবের ওপর কোন আরবের মর্যাদা নেই"
এ বক্তব্য ও সম্পুর্ণ দ্বয়ার্থহীন। যাতে কোন দ্বিদা সন্দেহ নেই।
আরবী জাননেওয়ালা সবাই এর অর্থ অনুধাবন করতে পারবেন।
পক্ষান্তরে কুরান সুন্নাহর এমন অনেক হুকুম আহকাম রয়েছে যাতে জটিলতা ও একাধিক অর্থ গ্রহনের অবকাশ রয়েছে। কিংবা কুরান মাজিদের অপর একটি আয়াত বা নবী (স) এর কোন হাদিসের সাথে বাহ্যত সংঘাতমুলক বলে প্রতীয়মান হয়।
যেমনঃ
১/ পবিত্র কুরানে এরশাদ হয়েছেঃ-
والمطلقت يتربصن بانفسهن ثلثة قروء
" তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীরা যেন তিন "কুরু" অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে"
এখানে তালাকপ্রাপ্তা নারীদেরকে ইদ্দতের কথা বলা হয়েছে। আর এ জন্য তিন "কুরু" শব্দ ব্যাবহার করেছেন। কিন্তু কুরু শব্দটি আরবো ভাষায় মহিলাদের মাসিক অসুস্থতা (মেনস) এবং পবিত্রকাল অর্থে ব্যাবহার হয়। যদি ১ম অর্থ নেওয়া হয়, তো আয়াতের অর্থ হবে, " তালাকপ্রাপ্তার ইদ্দত তিন মাসিক অতিবাহিত হওয়া".
আর যদি দ্বিতীয় অর্থ গ্রহন করা হয় তো অর্থ হবে "তিন পবিত্রকাল" ( طهر ) অতিবাহিত হওয়া। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল সাধারণ মানুষ কোন অর্থের উপর আমল করবে?
২/ এক হাদিসে রাসুল (স) বলেনঃ-
من لم يترك المخابرة فليؤذن بحرب من الله ورسوله .
" যে ব্যাক্তি মুখাবারাহ চাষাবাদ ছাড়বেনা সে যেন আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষনা শুনে রাখে".
এই হাদিসে শর্ত করে জমি বর্গা দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ বর্গা দেওয়ার আবার অনেক পদ্ধতি আছে, হাদিস শরিফ এ ব্যাপারে নীরব। শর্ত সাপেক্ষে কত টুকু দেওয়া জায়েজ,নাজায়েজ? ঊভয় অর্থ গ্রহনের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিবে যে, মুখারাবাকে সম্পুর্ণ নাজায়েয বলা হবে নাকি এতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের সুযুগ আছে?
৩/ রাসুল (স) বলেনঃ-
من كان له إمام فقرائة الامام له قرائة
" যার (নামাযে) ইমাম আছেন, তার ইমামের ক্বিরাত তার ক্বিরাত বলে গন্য হবে"
আবার আরেক হাদিসে রাসুল (স) বলেনঃ-
لاصلوة لمن لم يقرأ بفتحة الكتاب
"যে ব্যাক্তি সুরা ফাতেহা পড়েনি তার নামায হয়নি"
এবার প্রশ্ন দেখা দিল যে, আমি কোন হাদিসের উপর আমল করব?
ভাইয়েরা, কুরান হাদিস গবেষনা করে আদেশ নিষেধ করনীয় বর্জনীয় বিধান বের করতে গিয়ে এ ধরনের অনেক জটিল সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়।
এখন আমাদের সামনে দুটি পথ খুলা আছে।
(১) আমরা নিজ নিজ জ্ঞান বুদ্ধির উপর নির্ভর করে তদনুযায়ী আমল করব।
(২) নিজে কোন সিদ্ধান্তে না গিয়ে দেখব যে, কুরান সুন্নাহর এসব বানীর অর্থ আমাদের জ্ঞানীগুণী পুর্বপুরুষগন কি বুজেছেন।
চলবে....
জাযাকাল্লাহ, বাশার আহমদ।।