বেদাতী রিজভীদের সাথে হক পন্থী ওলামায়ে কেরামগনের মতভেদের অণ্যতম একটি বিষয় হলো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইলমে গাইব বিশ্বাস করা। বেদাতীরা হক্ব পন্থী ওলামায়ে কেরামগনের বিরোধীতায়, আল্লাহর কুরআন ও সহিহ হাদিসকে অস্বীকার করে, শরীয়তকে অস্বীকার করে, মাযহাবের ইমামদের মতামতকে অস্বীকার করে নিজেরাও কুফরিতে নিমজ্জিত আছে এবং হাজারো সরলমনা মুসলমানকে বিপদগামী করছে। এই বিরোধীতা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, নিজেরা কুফরিতে নিমজ্জিত থেকেও অন্যকে যখন তখন কাফের ফতোয়া দিচ্ছে। ওলামায়ে কেরামগন যতই দলিল দিচ্ছে ততই তারা দলিল অস্বীকার করে দৃঢ় পদে বিরোধীতায় নামছে। কারন হয়তো একটাই, আর তা হলো-
"তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।" [সূরা বাক্বারাহ-১০]
আসুন দেখে নেই কুরআন ও সহিহ হাদিসে ইলমে গাইব সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
*** কুরআনে যা বলা হয়েছে ***
১. “তুমি বল (হে নবী) আমি তোমাদেরকে এ কথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন ভাণ্ডার আছে, আর আমি অদৃশ্য জগতেরও কোন জ্ঞান রাখিনা, এবং আমি তোমাদেরকে একথাও বলিনা যে, আমি একজন মালাক (ফেরেশতা)। আমার কাছে যা কিছু ওহী রূপে পাঠান হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। তুমি জিজ্ঞেস করঃ অন্ধ আর চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? সুতরাং তোমরা কেন চিন্তা ভাবনা কর না?” [সুরা আন’আম;৫০]
২. “অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তারই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেহই তা জ্ঞাত নয়” [সুরা আন’আম;৫৯]
৩. “তুমি বল (হে নবী!) আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ বিষয় আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্য তত্ত্ব ও খবর জানতাম তাহলে আমি রবের কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতোনা, আমিতো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদবাহী” [সুরা আ’রাফ;১৮৮]
৪. “বল আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না তারা কখন পুনরুত্থিত হবে” [সুরা নামল;২৭]
৫. “কেয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে রয়েছে” [সুরা লোকমান;৩৪]
৬. “তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা” [সুরা জীন;২৬]
৭. “(নুহ নবী তার কাউমকে বলেছেন) আর আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছিনা যে, আমার নিকট আল্লাহর সকল ভাণ্ডার রয়েছে। এবং আমি অদৃশ্যের কথা জানিনা, আর আমি এটাও বলিনা যে, আমি ফেরেশতা” [সুরা হুদ;৩১]
৮. “তুমি বলঃ তারা কত কাল ছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তারই; তিনি কত সুন্দর ভাবে দেখেন ও শুনেন। তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই; তিনি কাউকেউ নিজ কর্তৃত্বের শরীক করেন না” [সুরা কাহাফ; ২৬]
আরো আয়াত রয়েছে কিন্তু আর উল্লেখ্য করলাম না।
*** সহীহ হাদিস সমূহে যা বলা হয়েছে ***
১. একটি দীর্ঘ হাদিসে মা আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এরূপ বলে যে রাসুলে পাক (সাঃ) আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল কি হবে তা জানাতে পারেন। সেও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দিল। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, ‘বলুন, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া গায়েব সংক্রান্ত কোন কিছু কেউই জানে না’ [সহীহ মুসলিম; অধ্যায়-ঈমান, অনুচ্ছেদ- রাসুলুল্লাহ(সা) মিরাজ রজনীতে তার প্রতিপালক কে দেখেছেন কী? হাদীস-৩৩৬; সোলমানিয়া পাবলিকেসন্স; ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর রেফেরেন্স- সহীহ মুসলিম; অধ্যায়-ঈমান, অনুচ্ছেদ-৭৪, হাদীস- ৩৪৭]
২. একটি দীর্ঘ হাদিসে আনাস ইবন মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মদীনায় আগমনের খবর ইহুদীদের বিশিষ্ট আলেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর কাছে পৌছলে একদিন তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে এসে বললেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি প্রশ্ন করবো, যার উত্তর প্রকৃত নবীগন ব্যাতীত অন্য কেউ জানবে না। তার পর বললেন-
(১) কেয়ামতের প্রথম আলামত কি?
(২) বেহেশতীরা বেহেশতে প্রবেশ করার পর প্রথম কি খাবেন?
(৩) কি কারনে সন্তান-সন্ততি পিতার এবং কি কারনে মাতার সদৃশ হয়ে থাকে?
এতচ্ছ্রবনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, হযরত জিব্রাইল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক্ষুনি আমাকে এ সম্পর্কে অবহিত করে গেছেন। [সহীহ বোখারী,অধ্যায়- নবীদের আলোচনা পর্ব, ৬ ষষ্ঠ খণ্ড, হাদীস-৩০৯৪]
মাসয়ালাঃ উপরক্ত হাদীসের শেষাংশে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, “হযরত জিব্রাইল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক্ষুনি আমাকে এ সম্পর্কে অবহিত করে গেছেন” অর্থাৎ, জিব্রাইল (আঃ) জানানোর আগে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে জানতে না কেননা যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ব্যাপারে আগে থেকেই জানতেন তাহলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানানোর জন্য জিব্রাইল আসতেন না, অর্থাৎ জিব্রাইল জানানোর আগে এই ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
৩. আনাস ইবনে মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, জিব্রাইল যখন [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহ] ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি [ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেছিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন] আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি (জিব্রাইল) জবাব দিলেন, ইনি ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (দীর্ঘ হাদীসের সংক্ষিপ্ত) (সহীহ বোখারী, অধ্যায়- নবীদের আলোচনা পর্ব, ৬ ষষ্ঠ খণ্ড, হাদীস-৩১০৬; সোলেমানীয়া পাবলিকেশন্স;;;;সহীহ বোখারী,অধ্যায়-নবীদের আলোচনা, খণ্ড-৬, অনুচ্ছেদ- ২১৫১- মিরাজের ঘটনা, হাদীস-৩৬০৮)
মাসয়ালাঃ উপরক্ত হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইনি (ইদরীস) কে? জবাবে জিব্রাইল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- ইনি ইদরীস। এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেও চিনতে পারেন নি যার কারনে জিব্রাইল কে তিনি এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন, যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব হতেন তাহলে তিনি ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখা মাত্র চিনতে পারতেন যে ইনি নবী ইদরীস, কিন্তু যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইদরীস (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে চিনতে পারেন নি সেহেতু এতি প্রমানিত হয় যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব নন, কেননা যদি তিনি আলীমুল গায়েব হতেন তাহলে তিনি নবী ইদরীস কে দেখা মাত্র চিনতে পেতেন।
৪. একটি দীর্ঘ হাদীসের কিছু অংশঃ
১ম অংশঃ মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, সকাল বেলা আমি কাদছিলাম। এ সময় ওহী আসতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রী অর্থাৎ, আমার বিচ্ছেদের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে হযরত আলী ইবন আবী তালেব ও উসমান ইবন যায়েদ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) কে দেকে পাঠান।
মাসলাঃ অপরক্ত অংশে বলা হয়েছে- এ সময় ওহী আসতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রী অর্থাৎ, আমার বিচ্ছেদের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে , অর্থাৎ ওহী ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু জানতে পারতেন তা অর্থাৎ তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
২য় অংশঃ মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, অপবাদ রটনার পর থেকে আর তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] কোন দিন আমার কাছে এসে বসেননি। এদিকে তিনি একমাস অপেক্ষা করার পরও আমার ব্যাপারে কোন অহী আসে নি।
মাসয়ালাঃ উপরোক্ত অংশ থেকে এটি স্পষ্ট যে ওহী ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুই জানতে পারতেন না, কেননা যদি তিনি জানতে পারতেন তাহলে ওহী আসার অপেক্ষা করতেন না, সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
৩য় অংশঃ মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে বসার পর প্রথমে কালেমা শাহাদাত পরলেন, তারপর বললেন, হে আয়েশা! আমি তোমার ব্যাপারে এরুপ অনেক কথা শুনতে পেলাম। যদি তুমি এ ব্যাপারে নিষ্পাপ হও, তা হলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করবেন। আর যদি তোমার দ্বারা কোন গুনাহ সংঘটিত হয়েই থাকে, তা হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর।
মাসয়ালাঃ উপরোক্ত অংশে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ) মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে তার পবিত্রতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন, তিনি বলেছেন-“যদি তুমি এ ব্যাপারে নিষ্পাপ হও” আর “আর যদি তোমার দ্বারা কোন গুনাহ সংঘটিত হয়েই থাকে” অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহ আনহা) এর ব্যাপারতা জানতেন না যার কারনে তিনি এরকম ভাবে জিজ্ঞাসা করেছেন, সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
৪র্থ অংশঃ মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি এততুকু আশা করতাম, তিনি (আল্লাহ) স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমার পবিত্রতা সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন।
মাসলাঃ অর্থাৎ, যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানতেন তাহলে তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানানোর প্রয়োজন পড়তো না, কিন্তু যেহেতু তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানানোর প্রয়োজন পড়তো সেহেতু এতি স্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
উপরক্ত ৪ অংশে বিভক্ত হাদিসটির রেফারেন্সঃ {সহীহ বোখারী, খণ্ড- ৭ম, অনুচ্ছেদ- মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) এর বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা, হাদীস- ৩৮৩৫; সোলেমানীয়া পাবলিকেশন্স;;; সহীহ বোখারী, খণ্ড-৭,অধ্যায়-যুদ্ধাভিযান অনুচ্ছেদ- ২১৯৮-ইফকের ঘটনা, হাদীস-৩৮৩৫;ইসলামিক ফাউন্ডেশন}
৫. এক দীর্ঘ হাদীসে, আবু হোরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (কেয়ামতের দিন) সব মানুষ বেহুশ হয়ে পড়বে। তখন আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যে দণ্ডায়মান হব। তখন (দেখতে পাব) মুসা (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর আরশ ধরে আছেন। আমি জানি না, যারা বেহুশ হয়ে পরেছিল তিনি তাদের মদ্ধে ছিলেন কি-না। (সহীহ বোখারী, খণ্ড-১০, অধ্যায়-কোমল হওয়া ,হাদীস-৬০৭৩, অনুচ্ছেদ- ২৭২৪-শিঙ্গায় ফুকদান; ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
মাসয়ালাঃ উপরোক্ত হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি জানি না, যারা বেহুশ হয়ে পরেছিল তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন কি-না” এথেকে প্রমানিত হয় যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না এমন অনেক জিনিস রয়েছে, সুতরাং তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না, কেননা যদি তিনি আলীমুল গায়েব হতেন তাহলে তিনি এই বিষয়টি জানতেন, কিন্তু যেহেতু তিনি জানতেন না সুতরাং তিনি আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
৬. ইবন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ গায়েবের কুঞ্জি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
(১) মাতৃগর্ভে কি গুপ্ত রয়েছে তা জানেন একমাত্র আল্লাহ।
(২) আগামীকাল কি সংগঠিত হবে তাও জানেন একমাত্র আল্লাহ।
(৩) বৃষ্টিপাত কখন হবে তাও একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
(৪) কে কোন ভুমিতে মারা যাবে তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
(৫)আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না, কেয়ামত কবে সংগঠিত হবে। (সহীহ বোখারী, অধ্যায়-তাওহীদ, অনুচ্ছেদঃ ৩১০৬, খণ্ড-১০, হাদীস- ৬৮৭৫)
মাসায়ালাঃ এখানে উক্ত হাদীসটি ব্যাখ্যা করার আর কোন প্রয়োজন নেই কেননা, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই বলেছেনঃ গায়েবের কুঞ্জি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। সুতরাং এই ৫ টি বিষয় তিনি নিজেও জানতেন না অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
উপরোক্ত হাদীসগুল থেকে স্পষ্ট হয় যে, মা আয়েশা (রাঃ) ও এই আকীদা রাখতেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আলীমুল গায়েব ছিলেন না। এবং মোট ৬টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীমুল গায়েব ছিলেন না।
ইমাম ইবন কাসীর বলেনঃ “বাতিল পন্থিদের এটাই রীতি যে, তারা স্পষ্ট আয়াতকে পরিহার করে অপষ্ট আয়াতের পিছনে লেগে থাকে” [তাফসীর ইবন কাসীর; খণ্ডঃ১-৩, পৃঃ৯৮-৯৯]
উপরে আমি বাতিল পন্থীদের পেশ করা দলীলের জবাব দিয়েছি এবং কোরআনের স্পষ্ট ৮টি আয়াত পেশ করেছি এবং ৬টি সহীহ হাদীস পেশ করেছি এই মর্মে যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানতেন না।
যদিও আমি আগেই বলেছি যে, কোন আলেমের কোন কথা এখানে গ্রহণযোগ্য নয়, তার পরও আপনাদের জানানোর জন্য, ইমাম ইবন কাসীর এর কিছু তাফসীর উল্লেখ্য করছিঃ
১. “তুমি বল (হে নবী) আমি তোমাদেরকে এ কথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন ভাণ্ডার আছে, আর আমি অদৃশ্য জগতেরও কোন জ্ঞান রাখিনা, এবং আমি তোমাদেরকে একথাও বলিনা যে, আমি একজন মালাক (ফেরেশতা)। আমার কাছে যা কিছু ওহী রূপে পাঠান হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি। তুমি জিজ্ঞেস করঃ অন্ধ আর চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? সুতরাং তোমরা কেন চিন্তা ভাবনা কর না?” [সুরা আন’আম;৫০]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুহাম্মাদ (সাঃ) -কে বলেছেনঃ ‘হে রাসুল! তুমি বলে দেও, আর আমি এই দাবীও করি না যে, আমি ভবিষ্যতের বিষয় অবগত রয়েছি’। ভবিষ্যতের জ্ঞানতো একমাত্র আল্লাহ’র রয়েছে। তিনি আমাকে যে টুকু জানিয়েছেন আমি শুধু ঐটুকুই জানি” [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮-১১, পারা-৭,সুরা-আন’আম, আয়াতঃ৫০]
২. “অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি তারই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেহই তা জ্ঞাত নয়” [সুরা আন’আম;৫৯]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“ইরশাদ হচ্ছে- অদৃশ্যের কথা আল্লাহ ছাড়া আর কেহ জানেনা” [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮-১১, পারা-৭,সুরা-আন’আম, আয়াতঃ৫৯]
৩. “তুমি বল(হে নবী!) আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ বিষয় আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্য তত্ত্ব ও খবর জানতাম তাহলে আমি রবের কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারতোনা, আমিতো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য একজন ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদবাহী” [সুরা আ’রাফ;১৮৮]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“এখানে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসুল (সাঃ) কে নির্দেশ দিচ্ছেন- হে নবী! তুমি সমস্ত বিষয়ের সম্পর্ক আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দাও। নিজের সম্পর্কে তুমি বলে দাও, ভবিষ্যতের জ্ঞান আমারও নেই। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ যেটা বলে দেন একমাত্র সেটাই আমি বলতে পারি। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ ‘তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেননা’ (কোরআন-৭২:২৬)” [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮-১১, পারা-৯,সুরা-আ’রাফ, আয়াতঃ১৮৮]
৪. “বল আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না তারা কখন পুনরুত্থিত হবে” [সুরা নামল;২৭]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসুল (সাঃ) কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন সারা জগতবাসীকে জানিয়ে দেন যে, অদৃশ্যের খবর (আল্লাহ ছাড়া) কেউ জানে না। অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কোন মানব,দানব এবং ফেরেশতা গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানে না” [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ১৫, পারা-২০,সুরা-নামল, আয়াতঃ২৭]
৫. “(নুহ নবী তার কাউমকে বলেছেন) আর আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছিনা যে, আমার নিকট আল্লাহর সকল ভাণ্ডার রয়েছে। এবং আমি অদৃশ্যের কথা জানিনা, আর আমি এটাও বলিনা যে, আমি ফেরেশতা” [সুরা হুদ;৩১]
তাফসীর ইবনে কাসীর এ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেছেনঃ
“নুহ (আঃ) তার কাওমকে খবর দিচ্ছেন যে, আল্লাহর ধন-ভাণ্ডারকে হেরফের করার ক্ষমতা তার নেই। তিনি অদৃশ্যের খবরও জানেন না। তবে আল্লাহ যা জানিয়ে দেন তা জানতে পারেন” [তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ড ১২-১৩, পারা-১২,সুরা-হুদ, আয়াতঃ৩১]
আল্লাহ পাক আমাদের কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক আক্বীদা বিশ্বাস রাখার ও আমল করার তৌফিক দান করুন।