বইয়ের নাম: বাণিজ্যিক টার্কি উৎপাদন
লেখকবৃন্দ: ডঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির, মোঃ রাশেদুল ইসলাম গাজী ও মোঃ সাঈদ হাসান
প্রকাশনী: খনিভূটা প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৫ (অফসেট, রঙিন ছাপা)
মুদ্রিত মূল্য: ২৭৫ টাকা মাত্র
পোল্ট্রির ১১টি প্রজাতির মধ্যে টার্কি (Meleagris gallopavo) বিধাতার এক অপূর্ব সৃষ্টি। এটি মূলত মেসোআমেরিকান (মেক্সিকো ও কেন্দ্রীয় আমেরিকা) অঞ্চলের বন্য প্রজাতির বৃহদাকার এক ধরনের পাখি। এই পাখির বহু প্রজাতি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চলে এখনও দেখা যায়। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্য তালিকায় টার্কির মাংস একটি অন্যতম উপাদান। টার্কির মাংসে অন্যান্য পোল্ট্রির চেয়ে প্রোটিন বেশি কিন্তু ফ্যাট কম থাকে, এমাইনো এসিড বিশেষত ট্রিপ্টোফ্যান অধিক পরিমাণে থাকায় ইহা মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এতে উপকারী ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড অধিক পরিমাণে রয়েছে যা হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়, এতে ভিটামিন-ই বেশি থাকে যা এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, টার্কির মাংসে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ একেবারেই কম। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে মানব স্বাস্থ্যের জন্য টার্কির মাংস অত্যন্ত উপযোগী।
আমি মনে করি বাণিজ্যিক টার্কি উৎপাদন দিগন্তে বাংলাদেশে মাত্র সূর্যোদয় হতে শুরু করেছে। প্রারম্ভিক এ অভিযাত্রা থেকেই শুরু হওয়া উচিত টার্কি পালনের আদ্যোপান্ত জানা ও মানার। কিন্তু প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞানের অভাবে খামারীগণ কাঙ্খিত সুফল পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজারে বাংলা ভাষায় এ সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য বই তেমন একটা নেই বললেই চলে। এমন এক সময়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল এনিম্যাল সাইন্স এন্ড এনিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির, মোঃ রাশেদুল ইসলাম গাজী ও মোঃ সাঈদ হাসান সচিত্র বারটি অধ্যায়ে বাণিজ্যিক টার্কি উৎপাদন বইটি লিখে প্রকাশ করায় তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। বইটিতে লেখকবৃন্দ টার্কি পাখির ইতিহাস, জাত ও উপজাত, টার্কি পালনের সুবিধা, টার্কি সংক্রান্ত পরিভাষা, টার্কির সহজাত স্বভাব, টার্কির বাচ্চার ব্রুডার ঘর নির্মাণ, ব্রুডিং স্থান জীবাণুমুক্তকরণ, টার্কির বিছানার উপাদানসমূহ, ব্রুডার গার্ড ব্যবস্থাপনা, ব্রুডিং স্বাস্থ্যবিধান সফলভাবে টার্কি খামার পরিচালনার মূলনীতি, মুক্তচারণ পদ্ধতিতে টার্কি খামার ব্যবস্থাপনা, আবদ্ধাবস্থায় টার্কি পালনে বাসস্হান, মেঝের জায়গা, আলো প্রদান, খাদ্য পাত্রের আকার নির্ধারণ, টার্কিছানার দানাপানি গ্রহণ ত্বরাণ্বিত করার কৌশল, টার্কির বিশ্রাম নেয়ার দাঁড় বা দন্ড, বিছানার অবস্থা, টার্কি খামারের দৈনিক স্বাভাবিক কার্যক্রম, ঋতুভিত্তিক (গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতকালে) টার্কি খামার ব্যবস্থাপনা, শিকারি প্রাণি ও পাখি থেকে সুরক্ষা, টার্কির খামারে ইঁদুরজনিত সমস্যা ও তার সমাধান, খাদ্য খাওয়ানোর সহজ কর্মসূচি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, টার্কির আদর্শ রেশনে খাদ্যোপাদানের হার, টার্কিকে খাওয়ানোর জন্য ঘাস চাষ পদ্ধতি, টার্কির ঠোঁট, পাখনা ও পদাঙ্গুলি ছাঁটা, ব্রিডার টার্কি নির্বাচন, ব্রিডার টার্কিকে খাদ্য খাওয়ানো, প্রজনন অভ্যাস ও পদ্ধতি, কৃত্রিম প্রজনন, বীর্য সংগ্রহ ও পরিনিষিক্তকরণ, নিষেক, ডিম গঠন, ডিমপাড়ার বাক্স, ডিম ফোটানো, ইনকিউবেশনের ত্রূটি-বিচ্যুতি শনাক্তকরণ ও সংশোধন, টার্কির রোগ-বালাইসমূহের মৌলিক বিষয়াদি, রোগ ছড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণ কারণসমূহ, রোগ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করা, টার্কি জবাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, খামারী এবং সাধারণ শিক্ষাসম্পন্ন যেকোনো মানুষই বইটি পড়ে উপকৃত হবেন বলে আমি মনে করি। সবাইকে বইটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ।
সবার জন্য শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৪০