"সব দোষ আসলে হুজুরদের"
হুজুর বললেন খুশির খবর। "ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি স্থাপনা ভেঙ্গে পড়ে আহত হয়েছেন দশজন শ্রমিক"।
আমি চমকে ওঠে বললাম- এটা খুশির খবর হলো কিভাবে। এটাতো একটা ভয়াবহ বিপদজনক খবর। দেশের যত অনিষ্ঠ হবে -আপনারা তত খুশি হবেন। আপনারা কি আসলে মানুষ?
জ্বিনা। আমরা মানুষ না। আমরাতো হুজুর। কেন খুশি হলাম এটা জানতে না চেয়ে-আপনি উপসংহারে চলে গেলেন। দুধ কখনো চুলায় গরম করেছেন? উথলে পড়ার আগে দুধ কয়েকটা সিগনাল দেয়। তখনই সতর্ক হতে হয়। ম্যাসিভ হার্ট এট্যাক হওয়ার আগেও শরীরে নানা রকম সিগনাল পাঠায়।এই সিগনালের ভাষাটা বুঝতে হয়। না হলে বিপদ। নির্মানাধীন অবস্থায় পারমাণবিক প্রকল্পের স্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে-মানে এটা একটা বড় সিগনাল। একবার চিন্তা করেন- পুরো প্রকল্প তৈরি হওয়ার পর যদি ধ্বসে পড়ে তখন কি ভয়াবহ বিপদজনক অবস্থা হতো। এক রানা প্লাজা ধ্বংসের বিভৎসতা মনে আছে? একটা পারমানবিক প্রকল্প দূর্ঘটনার ভয়াবহতা হবে এর চেয়ে হাজারো গুণ বেশি। রাশিয়ার চেরোনোবিল দূর্ঘটনায় এখনো সেখানে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়।
আমিতো মনে করেছিলাম আপনারা শুধু আলিফ, বা , তা , চা'র খবর রাখেন। এখন দেখছি- চেরোনোবিলের খবরও আপনাদের আছে।
ভাই, সারাজীবন শুধু আপনারা আমাদের নিয়ে উপহাসই করে গেলেন। কারণ-আপনারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ইংরেজি বলতে পারেন।
উপহাস করিনা। তবে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে আপনারা যে পিছিয়ে আছেন-সেটাতো অস্বীকার করতে পারবেন না।
তা পারবোনা। হয়তো আমরা পিছিয়ে আছি।কিন্তু সত্যি করে বলুনতো -যে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আপনারা এতো বাহাদুরি করেন- দেশে শ য়ের বেশী সাধারণ ভার্সিটি আর প্রকোশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে-সেখানে বিজয়ের পণ্চাশ বছরের মাঝেও আপনারা ৫০ জন ভালো প্রকৌশলি বানাতে পারলেন না। নিজ দেশের ইণ্জিনীয়ার দ্বারা একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। এখনো এদেশে বিদেশি ইন্জীনীয়াররা প্লান তৈরি করে আর দেশের শ্রমিকরা সেখানে মাথায় করে ইট-পাথর টানে।
ভালো প্রকৌশলি হচ্ছেনা এটা ঠিকনা। বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা বিদেশের মাটিতে বেশ নাম করেছে।
জনগনের ট্যাক্সের টাকায় সম্পূর্ণ পড়ালেখা শেষ করে এবার অন্য দেশে গিয়ে যদি সেই মেধা খরচ করে- তাতে দেশের কি লাভ হলো? একদিকে দেশের অর্থে পাশ করে বিদেশের উন্নয়ন করছে। আবার অন্য দিকে বিদেশ থেকে প্রকৌশলীদের হায়ার করে নিয়ে এসে তাদের কোটি ডলারে বেতন দিতে হচ্ছে। এটাতো দু দিকেই ক্ষতি। এ দেশের সব বড় মেগা প্রকল্প মহেশখালি-কুতবুদিয়া থেকে ঈশ্বরদি-পাবনা সব কিছু বিদেশীদের হাতে। কারণ - হয় আমাদের ভালো প্রকৌশলি নেই। অথবা যারা আছে তাদের কাজে লাগাতে পারছিনা। কিন্তু কোনো দূর্ঘটনা, বিষ্ফোরণ যদি ঘটে এর বোঝাতো এই দেশকেই বহন করতে হবে। আর দুঃখটা কি জানেন? আমাদের সন্তানেরাও তো আন্তর্জাতিক ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করে। কিন্তু কবিতা, গান, খেলায় কেউ আন্তর্জাতিক সম্মান লাভ করলে আপনারা যেভাবে প্রচার করেন। এই খবরটা আপনারা সেভাবে প্রচার করেন না। কারণ এ খবরে মজা নেই। মজা আছে- কোন হুজুর কোন জায়গায় বলাৎকার করেছে-সেটাতে। তাই এই খবর আপনারা একেবারে প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রচার করেন।
এটাতো ঠিক। নিষ্পাপ শিশুগুলোর উপর এই অত্যাচারটা আপনারা কিভাবে করেন। প্রতিটি মাদ্রাসায় আসলে সিসিটিভি লাগানো দরকার অথবা এই জগণ্য কাজ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসাগুলোও বন্ধ করে দেয়া দরকার।
কয়েকজন মানুষ নামের পশু হুজুরের বদনাম একচেটিয়াভাবে কয়েক লাখ হুজুরের উপর চাপিয়ে দেয়াটা কি উচিত হলো। শুধু হুজুর কেন- যে কোনো মানুষই এই জঘন্য কাজটি করে- তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। দেশের একজন হুজুরও কি বলেছে- এটা অপরাধ না । এদেরকে শাস্তি দেয়া যাবেনা। আর ঐ যে বললেন- মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় সিসিটিভি লাগাতে হবে। অথবা বন্ধ করে দিতে হবে। কেন ভাই- বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধর্ষণ হয়না। আবরারকে কি নির্মম ভাবে পিটিয়ে মারা হয়নি। তখন কি কেউ বলেছিলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমে রুমে সিসিটিভি লাগাতে, অথবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হবে।
আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু এটা বলুন। ইয়াতিমরা না খেয়ে থাকে আর আপনারা ওয়াজ করে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। হেলিকপ্টার ছাড়া যাতায়াত করেন । এটা কি ঠিক?
এবার একটা সত্য কথা বলেছেন। আর সত্যি কথা হলো - লাখ লাখ ইয়াতিমের মতো এ দেশের লাখ লাখ হুজুরেরও একই অবস্থা। সারা বছরে শুধু দুয়েক বেলা এরা ভালো খাবার খাওয়ার সুযোগ পায়। একবার গিয়ে যদি এদের খাবারের প্লেট গুলো দেখেন অবাক হয়ে যাবেন। মাসের পর মাস-খাবারের একটাই মেন্যু। খিচুড়ি আর সব্জি । দেশের সতেরোকোটি মানুষের মাঝে হেলিকপ্টার চড়ে হয়তো বড় জোড় সতেরোজন। আর সতেরলাখ হুজুরের বলতে গেলে পেটেভাতে অবস্থা। অথচ এই হেলিক্পটার চড়াকেই আপনারা বড় করে দেখেন। হুজুররা ওয়াজ করে টাকা কামায় সেটাতে দোষ খুঁজেন। কিন্তু আপনারাও যে মোটিভিেশনের একটা টিকেট শ, হাজার টাকায় বিক্রি করেন- সেটাতো কোনো দোষ খুঁজে পান না।
আপনারা ইয়াতিম শিশুদের ঘরে ঘরে পাঠিয়ে চাল, ডাল, চিনি এগুলো সংগ্রহ করেন। আর নিজেরা জর্দা দিয়ে পান খান। এসবতো ভালো না।
এ কথাও ঠিক। আমাদেরতো বড় কোনো ফান্ড নেই। তাহলে- মাদ্রাসা , মক্তবগুলো চলবে কেমন করে। তাছাড়া, এগুলোতো কেউ জোর জবরদস্তি করে আদায় করেনা। মানুষ ভালোবেসেই দেয়। কিন্তু একজন হুজুর কিংবা মাদ্রাসার ছাত্র কি দেখেছেন চাঁদাবাজি করতে। চাঁদা না পাওয়ায় কোন ভবন সেতু বানানোর কাজ বন্ধ করে দিতে। দেশের কোথাও কোনো টেন্ডারবাজি করতে। আর জর্দা দিয়ে পান খাই। সেটাও আপনাদের কষ্টের কারণ হয়। মদ , গাঁজাতো ভাই খাইনা। এবং খেয়ে কোথাও মাতলামিও করিনা। কোনো হুজুর কোথাও মদ খেয়ে মাতাল হয়েছে- এরকম কোনো উদাহরণ দিতে পারবেন?
মানলাম। কাউকে মাতলামি করতে দেখিনি। কিন্তু দেশে যে অরাজকতা তৈরি করছেন- ভাস্কর্যের নামে- এসবতো মাতলামির চেয়ে কমনা। দেশটাকে আপনারা দিন দিন পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের উন্নয়নে আপনারা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
ভাস্কর্য নিয়ে হুজুরদের হঠাৎ করে এই আন্দোলন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এটা নিয়ে আর কথা কাটাকাটি করতে চাইনা। শুধু এই যে বললেন- হুজুরদের জন্য উন্নয়ন থেমে গেছে। বুকে হাত দিয়ে বলুন কথাটা কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা। আজ নিজস্ব অর্থে দেশে পদ্মা ব্রিজ হচ্ছে সরকারকে লাখো সালাম। অথচ, যে লাখো হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে- সেগুলো যদি দেশে ফিরানো যেতো তবে এরকম পদ্মাসেতু ডজন খানেক তৈরি করা যেতো। আপনিই বলুন- এই অর্থ কারা পাচার করেছে? হুজুররা না কি আপনাদের মতো শিক্ষিত , স্মার্ট লোকেরা। এ দেশের প্রতিটি অফিস যদি দূর্নীতি মুক্ত হতো দেশকে সোনা দিয়ে মোড়ে দেয়া যেতো। আপনিই বলুন- এই দূর্নীতিগুলো করে কারা। হুজুররা না কি আপনাদের মতো শিক্ষিত দূর্নীতিবাজরা। এইতো কিছুদিন আগে মহেশখালি -ককসবাজার পারাপার হতে ভাঙা জেটির কারণে একটা ছেলে মারা গেছে। এই খবরটা কয়টি পত্রিকা ছাপিয়েছে। মিথিলা সৃজিতকে রাতভর গান শুনিয়েছে -এটা জাতীয় পত্রিকার সংবাদ হয় কিন্তু মৃত সন্তানের জন্য দিশেহারা মা রাতভর কেঁদেছে-এটা কোনো সংবাদ হয়না। কারণ -মারা যাওয়া ছেলেটা তো কোনো সেলিব্রেটি না। শুধু ঘটি বাটি, বটি, বালিশে যে পরিমাণ দূর্নীতি হয় -সেই টাকায় দিয়েই এই সমস্ত ভঙ্গুর জেটিগুলো মেরামত করা যেতো। এই দূর্নীতি কারা করে- হুজুররা নাকি আপনাদের মতো শিক্ষিত টেন্ডারবাজরা। ঘৃণা বাদ দিয়ে শুধু একবার বিবেকের চোখ দিয়ে বলুন-এই দেশের প্রতিটি মুয়াজ্জিন দিনের পর দিন- মাসের পর মাস, বছরের পর বছর , প্রচন্ড শীতে, গ্রীষ্মে, ঝড়ে- বর্ষায় নিষ্টার সাথে মসজিদে গিয়ে ঠিক মতো আযান দেয়-ইমাম নামাজ পড়ায়। এ দেশের কয়টি অফিসে কয়জন কর্মকর্তা এমনি নিষ্টার সাথে কাজ করে। বলুন ভাই। একবার সত্য কথাটি বলুন। জানি বলবেন- এটা নৈতিক দায়িত্ব। আখেরাতের জন্য করি। কিন্তু যার যার অফিসে ঠিক ঠিক মতো কাজ করা কি নৈতিক দায়িত্ব না?
দূর্নীতি করি আর যাই করি। কিন্তু আপনাদের মতো স্বাধীনতা বিরোধী না। চেরোনোবিলের খবর যেহেতু রাখেন। নিশ্চয়ই এ খবরটিও রাখেন। কিছুদিন আগে একটা সংবাদ ভাইরাল হয়েছিলো- দেশে বীরশ্রেষ্ট, বীরবিক্রম, বীর উত্তমের মাঝে একজনও কোনো মোল্লা নেই , হুজুর নেই। এতেই প্রমানিত হয় আপনারা স্বাধীনতা বিরোধী। স্বাধীনতার পতাকা আজ খামচে ধরেছে আপনাদের মতো পরাজিত শকুন।
ভাইরে দেশ স্বাধীন করেছিলো- দেশের সব মানুষ মিলে। এইভাবে বিভক্ত করা ঠিকনা। মোল্লা, হুজুররা হয়তো সম্মুখ যুদ্ধ করেনি। কিন্তু কোনো মোল্লার ছেলে কি পুলিশে ছিলোনা, কোনো হুজুরের ছেলে কি আর্মিতে ছিলোনা, কোনো ঈমামের ছেলে কি মুক্তিযোদ্ধা করেনি, কোনো মুয়াজ্জিন কি নিস্তব্ধ রাতের গহীনে মসজিদে একাকি বসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চোখের পানি ফেলেনি। কোনো হুজুরের ছেলে কি যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়নি। অনেক হুজুররা রাজাকার হয়ে আঁতাত করেছিলেন এটা যেমন সত্য। ঠিক তেমনি অনেক হুজুররা যুবতি মেয়েদের নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়েছিলেন। জীবন বাঁচিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার তৈরি করে দিয়েছেন। এটাও তো বড় মুক্তিযোদ্ধ। -এসব কথাতো হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসে লেখা আছে। এই যে আমরা জানাযার নামাজ পড়াই। লাশের গোসল করাই, লাশ কবরে নামাই। আমরাও তো কোনোদিন বলিনি- এসব আর আমরা করবো না। আপনারাও করেন। কারণ- সব কাজ সবার করার দরকারও নেই। কেউ ডাক্তার হবে, কেউ মসজিদের ইমাম হবে। কেউ মন্দিরের পুজারি হবে। সবাই কি সব কাজ করতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাওতো সম্মুখ যুদ্ধে যাননি। তাহলে কি ওরা দেশপ্রেমিক না? আর এই যে আমাদের শকুন বললেন। এটা বলে যদি আপনার মনে শান্তি আসে তবে বলতে থাকুন। বারবার তৃপ্তি মিটিয়ে বলুন। শুধু একটা কথা বলে রাখি- কোনো শকুনকে দেখেছেন- কোনো জিন্দা জিনিস খেতে? সে মরা জিনিসই খায়। এতে শকুনের যত না দোষ। তার চেয়ে বেশি দোষ-পতাকাকে যারা মৃত মনে করে তাদের। পতাকাকে যারা মৃত বানায় তাদের। একটি রাষ্ট্রে নানা পথের, নানা মতের মানুষ থাকবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, মোল্লা, হুজুর, শিক্ষিত, পুরোহিত, বুদ্ধিজীবী সব। রাষ্ট্রের কাজই হলো এই নানা পথের -নানা মতের মানুষের মাঝে সংঘাত তৈরি না করে সম্প্রীতি তৈরি করা, দেয়াল তৈরি না করে সেতুবন্ধন তৈরি করা। এই পতাকা সবার। তাই আসেন বিজয়ের এই পণ্চাশ বছর এসে আর শুধু ভাগাভাগি না করে-সব দোষ শুধু হুজুরদের গাড়ে না দিয়ে একসাথে কাজ করি। আর অনেক রক্তের বিনিময় অর্জিত এই দেশের স্বাধীন পতাকাটিকে সবাই মিলেমিশে জিন্দা রাখি।
হুজুর আপনাকে বিজয় দিবসের আগাম শুভেচ্ছা।
জ্বি ভাই আপনাকেও শুভেচ্ছা।