ইমরান খানের পাশে বসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসিনার এই ছবিটি আমি সম্মানের চোখে দেখি। শুধু তাইনা- হাসিনা, মোদী, ইমরান তিনজনে যদি একসাথে বসেন -সেটাও ইজ্জতের হবে। বরং এরকমই হওয়া উচিত। স্বাধীনতার পর ভূট্টোর হাত যখন বঙ্গবন্ধু স্পর্শ করেন-সেটাও ইজ্জতের। রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের। দুই সতীনের নয়।
আমেরিকা জাপানে বোমা মেরেছিলো। জাপান পার্ল হারবার উড়িয়ে দিয়েছিলো। এখন প্রতি বছর আমেরিকা জাপানের মাঝে দুই লক্ষ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়।
কিন্তু যে জিনিসটা খারাপ লাগে। তা হলো ডাবল স্টাণ্ডার্ড, হিপোক্রিসি, বায়াসড জাজমেন্ট।
বেশীরভাগ পাকিস্তানীদের আমি ঘৃণা করি। কারণ- আমি ডাইরেক্ট ভুক্তভোগী। পাকিস্তানী এক ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো -আটলান্টার এক মসজিদে।
আচরণে মার্জিত, কথাবার্তায় ভদ্র, চলাফেরায় নম্র। বাড়ি ভাড়া চাইলে কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করেই আমি তাকে বাড়ি ভাড়া দেই।
প্রথম দু মাসের ভাড়া দেয়ার পর তাকে আর পাওয়াই যায়না। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হলেও- অনেক সময় আমি লজ্জায় চাইতেও পারিনা। এভাবে গেলো ছয়মাস।
একদিন ফোন করলাম-
আজিজ ভাই- আপনি কই?
আমিতো ভাই আটলান্টার বাইরে। আগামী সপ্তাহে ফিরবো। দুঃখিত ভাই আপনার ভাড়া দিতে দেরি হয়ে গেলো। শহরে ফিরেই দিয়ে দিবো।
ঐদিনই- আব্বা-আম্মাকে নিয়ে আমি বিকেলে গ্রোাসারি কিনতে বের হয়েছি। গ্রোসারি করে ফিরার পথে মনে করলাম- যে বাড়ীতে আজিজ থাকে সেই বাড়িটা একটু দেখে যাই। ওমা বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি- আজিজ মিয়ার গাড়ী পার্ক করা।
মনে করলাম- হয়তোবা নিজের গাড়ি রেখে অন্য কোনোভাবে শহরের বাইরে গেছে।
নক করলাম- আজিজ মিয়া দরজা খুললো। আমাদের দেখে একটু লজ্জিত।
দু ব্যাগ আম ছিলো। আম্মা আমাদের জন্য এক ব্যাগ রেখে আজিজকে এক ব্যাগ দিলেন।
আমরা নীচে বসা। আজিজ ওপরে গিয়ে ফিরে এলো। হাতে দুটো চেক।
আজিজ খুবই নম্র ভাষায় বললো- এই তোমার গত ছয়মাসের বাকি চেক। আর এটি অগ্রিম আগামী ছয়মাসের। কারণ-আমি প্রায় সময়ই শহরের বাইরে থাকি। তোমার সাথে নিয়মিত দেখা হয়না। ফলে, আমার ঠিকমতো বাড়ী ভাড়াও দেয়া হয়না।
আমি লজ্জায় মরে গেলাম। ছিঃ।আমার মনমানসিকতা। এরকম একটা ভালো ছেলেকে নিয়ে আমি কি খারাপ ধারণাই না পোষণ করেছি।
পরদিন অফিসের ব্রেকে ব্যাংকে গিয়ে আজিজের চেক জমা দিলাম। প্রায় এক সপ্তাহ পর-চ্যাক বাউন্স হলো। আজিজের একাউন্টে কোনো টাকাই নেই। আমার কাছ থেকে ৫০ ডলার জরিমানা হলো। পাকিস্তানীদের বাটপারির এরকম নানা ঘটনার আমি সাক্ষী। অথচ, এই ছেলেটির সাথে আমার মসজিদেই পরিচয় হয়েছিলো।
কিন্তু তারপরও একচেটিয়াভাবে সব পাকিস্তানীদের গালাগালি করতে পারিনা। কারণ- শুধুমাত্র রাষ্ট্র নায়ক, সেনানায়করাই এদেশের নিরাপরাধ মানুষকে খুন করে রক্তের হোলি উৎসবে মেতে ওঠেছিলো। তাই, শাসকগোষ্টীর বিরুদ্ধে অবস্থান বৈধ । কিন্তু একচেটিয়াভাবে দেশের সব জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে অবস্থান-বোকামি। প্রতিটি দেশেই শোষিত আছে, শান্তিকামী মানুষ আছে। তাছাড়া, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শুধু রাষ্ট্র কেন কোনো মানুষই আরেক মানুষের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেনা। এটা শুধু সামাজিকতা না এটা বাস্তবতা। এটা আত্মিক না এটা আর্থিক।
সবচয়ে খারাপ লাগে যখন দেখি- মানুষের ভণ্ডামি। মানুষের ডাবল স্টান্ডার্ড।
বিশেষ করে এ ব্যাপারগুলো বিদেশে খুবই চোখে পড়ে।
নিজের চোখে দেখা- বিশাল বড় নেতারা সারাদিন বক্তৃতায়, ফেসবুকের পাতায়-পাকিস্তানকে গালাগালি করতে করতে চেতনাকে একেবারে মঙ্গলে পৌঁছে দিয়ে- বিকেলেই পাকিস্তানী মালিকানাধীন গ্যাস স্টেশন কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে দিব্যি কাজ করছেন। রোগী হয়ে পাকিস্তানী ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পাকিস্তানীদেরও দেখেছি- বিশ্বাসঘাতক বাংগালী বলতে বলতে 'তুম হামারা ধোকা দিয়া'' জপ করতে করতে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানে মন উজাড় করে কাজ করছে।
বাংলাদেশী অধ্যাপকের অধীনে পিএইচডি'র থিসিস তৈরি করে-নিজের জৌলুস বাড়াচ্ছে।
এসব দেখি আর হাসি। শয়তানেরও কিন্তু একটা নীতি আছে। কিন্তু এদেরতো কোনো নীতিগ্যান নেই। এরাতো গিরগিটি। শুধুই রং বদলায়। গালাগালি করে জোশ আনা যায়। কিন্তু পেটের ক্ষুধাতো মিটানো যায়না।
ফেমাস সোসিওলজিস্ট ডার্কহেইম একটা ডার্ক সত্য কথা বলেছিলেন-"আইডিয়া আর চেতনায় পেট ভরায় না। অর্থই পেট ভরায়। অর্থের কাছে চেতনা-আইডোলজি সবকিছু ফুটা বেলুনের মতোই চুপসে যায়"।