দৈনন্দিন ক্যাচাল আর ভালো লাগেনা।তাই ঝামেলা শেষ করেই আসলাম।এখন,গাড়িতে বসে চিন্তা করছি বাড়ী যাবো কিনা। কেন যেন আজ বাসায় যেতে মন চাইছেনা। ড্রাইভারকে বললাম, পার্কের সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ী নিয়ে চলে যেতে।
আমি হেঁটে হেঁটে মোটামুটি একটা ছায়া ঢাকা নির্জন গাছের নীচে এসে বসি। হঠাৎ কে যেন বলে ওঠলো-
স্যার, ভালো আছেন?
আশেপাশে দেখি । না কেউ নেই। ভুল শুনলাম না তো।
আবার, কিছুক্ষণ পর। স্যার , ভালো আছেন?
এবার একেবারে স্পষ্টই শুনলাম। কোনো ভুল নাই।
আমি আবার চারদিকে থাকাই। না, কাউকে দেখছিনা।
তবে- আমাকে স্যার বলে সম্বোধন করলো কে?
এই যে স্যার , ওপরের দিকে থাকান।
আমি ওপরের দিকে থাকাতেই চমকে ওঠলাম। গাছের ডালে আরাম কেদারার ওপরে বড় আয়েশ করে একটা কুকুর বসে আছে।
আমার মাথা ঘুরতে থাকলো। এ হতেই পারেনা। আমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি। নিশ্চয় আমি উদ্ভট কোনো স্বপ্ন দেখছি। আমি হাতের থালু দিয়ে চোখ মুছি। আঙুল দিয়ে শরীরে চিমটি কাটি। না কোনো স্বপ্ন নয়।
কি স্যার , বিশ্বাস হচ্ছেনা? একটা কুকুর গাছের মগডালে আরাম কেদারায় বসে কথা বলছে।এতো স্যার, বিশ্বাস না হওয়ারই কথা।
এমন সময় দেখি পাশে এক হকার। হেঁকে হেঁকে কচি ডাব বিক্রি করছে। আমি ২০ টাকা দিয়ে মাথা ঠান্ডা হওয়ার জন্য একটা ডাব কিনি।
কুকুরটি এবার ওপর থেকে বলে ওঠে,
আপনি কি স্যার ডাবের পানি খেলেন, নাকি কুকুরের মুত খেলেন? আজকে যে এতো বড় অপরাধ করে আসলেন, তাতে তো আপনার কুত্থার গু খাওয়া দরকার। একবারে তাজা গু। কিছু নিজে খাবেন, আর কিছু নিজের বউকে খাওয়াবেন।
এবার আমি সমস্যা ধরতে পারলাম, আমার ভিজ্যুয়াল এবং অডিটরি হ্যালুসিনেশান দুটোই একসাথে হচ্ছে। এটা খুব বিরল প্রজাতির একটা রোগ। পৃথিবীর .০১% ও কম মানুষের এ সমস্যা হয়। কিন্তু আমার তো এ সমস্যা হওয়ার কথা না। যারা সাধারণত নিদ্রাহীন রাত কাটায় দিনের পর দিন তাদের এরকম সমস্যা হতে পারে।
আমি বুঝলাম এখানে আর বেশিক্ষণ বসে থাকা ঠিক হবেনা। ড্রাইভারকে ফোন করে হাঁটা শুরু করলাম পার্কের গেটের দিকে।
হঠাৎ খেয়াল হলো,ডাব কিনে ওয়ালেট থেকে টাকা দিয়ে সেটা আর পকেটে রাখা হয়নি। পার্কের বেন্চের ওপর ফেলে এসেছি। অগত্যা আবার ফিরলাম পার্কের সেই বেন্চে।
ওয়ালেট কোথাও খুঁজে পেলাম না। ওয়ালেট হারিয়ে গেলো সেটা বড় ব্যাপার না, কিন্তু ওয়ালেটে আমার অফিসের এ্যাকসেস কার্ড।
কি খবর স্যার, ওয়ালেট খুঁজে পাচ্ছেনা। টাকার খুব দরকার তাই না?
পার্কের মাগীদের জন্য অবশ্য স্যার বেশী টাকা লাগবেনা? তবে, এখনকার ওঠতি রুপালি পর্দার মাগীদের ভোগ করতে হলে ভালোই খসাতে হবে। সোনার কৌটার দামতো সোনা দিয়েই দিতে হবে, তাই না, স্যার। সোনার ভিতর সোনা দিবেন, কিন্তু দামে সোনা দিবেন না, তাতো হবেনা।
আমি বললাম, চুপ মুখ সামনে কথা বল। বদমাশ কুকুর।
হ, আমাকে বদমাশ বলেন। আর নিজেতো পুরা হাজিসাব।কিন্তু ভিতরে ভিতরে চুদখোর।চামেচিকনে ড্রাইভারকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। রাত নিশী হচ্ছে ক্রমশঃ। ভিতরের সারমেয়টা জাগছে। আর আমাকে বলছেন মুখ সামনে কথা বলতে।হাঃ হাঃ হাঃ।
কি জঘণ্য মুখের ভাষা। ছিঃ । এরকম খিস্তিতো বস্তির মানুষেও করেনা।
হ, স্যার । বস্তির মানুষে করেনা। কিন্তু আপনাদের সংসদের ভিতর করে।ওরা যদি শালীনতার ভাঁজে চুদুরবুদর বলতে পারে , যে সংসদ গরীবের ট্যাক্সের টাকায় চলে, মিনিটে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে চুদুরবুদর নিয়ে আলোচনা হয়, সেটা আবার দেশে বিদেশের পত্রিকায় রসালো করে গু-মুতের মতো ঘাঁটাঘাটি হয় । তবে আমরা বললেই খিস্তি হয়ে যায়।
বাজে বকবিনা। জানিস কার সাথে কথা বলছিস?
জানবোনা কেন স্যার, এক চুতমারানি, পাষন্ড,জানোয়ার মাগীখোরের সাথেই তো কথা বলছি।
আবার খিস্তি। ছিঃ। তোকে আমি মেরে হাড়গোড় ভেঙগে দিবো।
কি যে বলেন না স্যার। প্রমোশনের টোপে ফেলে সুন্দরি সেক্রেটারীকে কোলে বসিয়ে ব্রা আর প্যান্টির ভিতর হাত ঢুকিয়ে রাখেন।তারপর আয়েশ করে জঙঘা আর স্তন মর্দন করেন, সেটা খুব জায়েজ আছে।আর আমি মুখে বললেই সেটা হয়ে যায় আপনাদের মুখোশ পরা সভ্য সমাজের জন্য খিস্তি। আর সত্য কথা বলতে কি- কুত্থার মুখ দিয়ে চুতমারানি বের না হয়ে কি স্যার রবীন্দ্রসংগীত বের হবে?
হারামজাদা, সাহস থাকলে নিচে নাম।লাত্থি মেরে তুর দাঁত ফেলে দেবো।
স্যার , আপনি ইচ্ছে করলেও এখন আমাকে লাত্তি দিতে পারবেন না। তবে আমি চাইলে গাছের উপর থেকে ডাইরেক্ট আপনার মুখে সড়সড় করে মুতে দিতে পারি। দেবো নাকি স্যার। ঐ যে ডাবের পানির মতো খেয়ে নিবেন।
কুকুরটার কথা শুনে আমার মাথা পুরো আওলা হয়ে গেলো। চীৎকার করে বললাম, আসলে তোর জন্য একটা বড় মুগুরের দরকার ছিলো। জানিসতো, যেমন কুকুর তেমন মুগুর।
আর আমরা কি বলি জানেন স্যার। আমরা বলি- যত বড় মানব, তত বড় দানব। মানব যখন স্যার দানব হয় তখন তাকে মুগুর দিয়েও পিটালে কিছু হয়না। তখন তার মুখে সড়সড় করে মুতে দিতে হয়। সে তখন কুকুরের মুত খাবে, কুকুরের গু খাবে। আসলে সত্যি করে বলেনতো স্যার,আপনি আর মানুষ আছেন কিনা? আপনিতো একটা দুর্ধর্ষ জানোয়ার, বিদঘুটে হায়েনা।
আমার মগজের ভিতরে কুটকুট শব্দ হয়। মনে হচ্ছে রক্তচোষা ছারপোকা মগজের ভিতর ঢুকে গিয়ে বসে বসে বাটিতে করে রক্ত পান করছে। ইতোমধ্যে তারা দলবেঁধে আমার মগজের সেরিবেলাম,টেম্পোরাল ল্যুব ইত্যাদি খেয়ে হজম করে ফেলেছে।যেকোনো সময় মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারি। আমি মাথা ধরে বেন্চের ওপর বসি। মনে হয় জীবন শেষ। আমি নির্ঘাত মারা যাচ্ছি।
না স্যার, আপনি এতো সহজে মারা যাবেন না। কর্পোরেট অফিসের বড়কর্তা হয়েছেন। বাসায় বউ রেখেও মাগীর পুঁদের রস খুঁজে বেড়ান। আর জুমাবারে মসজিদের সামনের কাতারে গিয়ে বসেন । নামাজে দাঁড়িয়েও মাগি চিন্তা করেন।
আমি মনে মনে বলি,দেশটাতো কর্পোরেট মাগীতেই ভরে গেলো তাই নয়কি? সেটা কি অস্বীকার করতে পারবি? সচিবালয়ের ভদ্রমাগীদের সুশীল শব্দে লবিস্ট বলা হয়ে জানিসতো।দুর, আমি কার সাথে কি বলছি? এটাতো একটা বিকৃত মস্তিষ্কের কুকুর।
ও, বুঝছি। পুরুষত্বের কামনার রসে তৃপ্ত হয়ে নারীদের "মাগী" নাম দেন ।একটা কবিতা শুনেন স্যার- এটা একেবারে আপনার জন্য খাপেখাপ কবিতা।
বাংলা ব্লগ থেকে মুখস্থ করেছি।
"কামের ত্বষ্নায় তুমিও মাগ,
মাগী হয়ে নারী কেন শুধু অচ্ছুত?
শত নারীকুন্জে -
তোমার ও কি পড়েনি স্খলনের দাগ? "
কুত্থার কথায়, এবার আমার হাসি আসে। আজকাল কুত্থাও দেখি ব্লগের খবর রাখে। কিরে তুই দেখি ব্লগেরও খবর রাখিস।
জ্বি স্যার। আপনাদের পত্র-পত্রিকা যে ভাবে বায়াসড খবর ছাপায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে সম্পাদকের টেবিলে বসে গু মুতু করে দেই। তাই ব্লগই ভরসা। মোটামুটি কবিতা, গদ্য, সাহিত্য, নানারকম খবর, মানুষের সেবামূলক কর্মকান্ডের কাজ, ভ্রমণকাহিনী সব কিছুই পাওয়া যায়।
আচ্ছা ,আপনার গোপন প্রেয়সি গুলশানের বাসায় যাকে নিয়ে মাঝে মাঝে নিবিড় অভিসার করেন, সেই রুবা মেডাম কেমন আছে স্যার? দারুন একখান মাল । যখন, বুকের ক্লিভস আর মসৃণ পেটের চকচকে নাভী দেখিয়ে,নিতম্ব দুলিয়ে রুবা মেডাম হেঁটে যায়, তখন আমার চৌদ্দপুরুষ কুত্তার কসম স্যার একরাতের জন্য আমারও পুরুষ হতে ইচ্ছে করে।
রুবার কথাতো কেউ জানেনা। একেবারে গোপন। তুই জানলি কেমনে?
আরে স্যার , আমি হলাম মহাকুকুর। আপনাদের যেমন, মানবের মাঝে কেউ কেউ মহামানব আছে, আমিও তেমনি কুকুরের মাঝে মহাকুকুর। আর মহাকুকুরেরা স্যার সব জানে। রাতের অভিজাত শহর পুরো ন্যাংটা হয়ে যায় স্যার।কামনার রসে যৌনাংগ আর যোনি ভিজতে থাকে। স্কুল পড়ুয়া টিনএজ থেকে শুরু করে আমলা,রাজনীতিবদ,সাংবাদিক, শিক্ষক,ইমাম, পাদ্রি, ভান্তে সবাই এ রসে সামিল হয়।সভ্যতা হয়ে গেছে নগ্নতা। নগর হয়ে গেছে যেন কামনগর।জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো -"অন্ধকারের স্তনের ভিতর, যোনির ভিতর' আপনাদের সভ্যতা ঢুকে পড়ে স্যার।
মর্দি থাকবে শরীরে আর ব্যাংক ভর্তি টাকা থাকবে কিন্ত এ সমাজে লাম্পট্য থাকবেনা , তাতো হতে পারেনা স্যার।
চুপ করো বদমাশ। লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তোর সবগুলো দাঁত আমি গুড়ো গুড়ো করে দিবো।
তবে স্যার, আজকে যে কাজটা করলেন, সেটা কোনো বদমাসেও করবে না, কোনো লম্পটেও করবেনা। যৌবনের ক্ষুধায় যা করার করছেন, ক্ষমা করা যায়। কিন্তু নিজের বিবেক খাটিয়ে বলুন স্যার , কাজটা কি ঠিক করলেন?
নিজের ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়িয়ে মানুষ বানাচ্ছেন না। কসম,স্যার। এছেলে বড় হয়ে আজকে আপনি যে কাজটা করলেন সেই কাজটিই করবে।
আপনাদের বইয়েতো লিখা আছে" ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।" আজকে আপনি যা করছেন -এই ছেলে বড় হয়ে এর চারডাবল করবে স্যার। পাপ করে করে স্যার আপনার বিবেক, বুদ্ধি সব অন্ধ হয়ে গেছে। এ যৌবন ফুরুত করেই শেষ হয়ে যাবে। গলার চামড়া কুচকে যাবে, চোখে ঝাপসা দেখবেন।কাশির সময় কাপড় ভিজিয়ে দিবেন।
মহাকুকুরের শেষ কথাটায় আমি চমকে ওঠি। নিজের বার্ধক্যের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যে ছেলেকে রোজ আমি স্কুলে রেখে আসি, আর বিকেলে নিয়ে আসি। সে ছেলে একদিন বড় হয়ে বৃদ্ধাবস্থায় আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে। আমি আজ যা করেছি, আমার ছেলেতো তাই করবে। আজ বাবার চোখের পানি, আমি দেখিনি। সেদিন আমার চোখের জলও আমার ছেলে দেখবেনা।
হঠাৎ আমার মাথার ভিতর যেন বিশুদ্ধ বিবেকের এক নির্মল বাতাস ঢুকে পড়ে।পশু হয়ে যাওয়া বিবেক নতুন শিশু হয়ে আবার জন্ম নেয়। উপরে গাছের দিকে তাকাই । না কেউ নেই। আর সময় নষ্ট করার সময় নেই। আমি তাড়াতাড়ি করে বৃদ্ধাশ্রমে আসি।
দেখি, জীর্ণ শীর্ণ বাবা খাবার প্লেটে নিয়ে বসে আছেন। চোখ দিয়ে অবিরাম পানি ঝরে পড়ছে প্লেটে। বাবার ছলছল চোখ।চোখের নুনতা পানি আর ডালের পানি খাবার প্লেটে একাকার হয়ে মিশে আছে।বাবা, একবার খাবারের লোকমা মুখের কাছে আনেন, আবার নীচে নামিয়ে রাখেন। আপন মনে বিড়বিড় করে কি যেন বলছেন।
আমি বাবার কাছে গিয়ে, বাবার পায়ে পড়ি। বাবার পা দুটো বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলি, বড় অন্যায় , বড় পাপ করেছি গো বাবা, তোমার এ কুকুর ছেলেকে ক্ষমা করো গো বাবা, ক্ষমা করো।
বাবা, আমার মাথায় হাত রেখে বলেন,
এতোক্ষণ লাগলো তোর আসতে? তোদেরকে ছাড়া আমি একা একা খেতে পারি বল। বউমা হয়তো খাবার টেবিলে সাজিয়ে বসে আছে।তুই জানিসনা, এসময় ছোট খোকা আমার কাঁধে চড়ে পঙকীরাজ, পঙকীরাজ খেলে। চল, দেরী হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি বাসায় চল।
আমি বাবাকে নিয়ে গেটের কাছে আসি। দেখি সামনের গাড়ী থেকে ঠিক আমারই মতো আরেক কুকুর হাতে ব্যাগ নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের দিকে গটগট করে আসছে আর পিছন পিছন অতি দূর্বল পায়ে অতি বুড়ো এক বৃদ্ধ পুরো প্বথিবীর সব যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে কুকুরটির পিছন পিছন বৃদ্ধাশ্রমের গেটের দিকে এগিয়ে চলছেন।
(সক্ষম সন্তানের পিতামাতাকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই পেতে না হয়, এর চেয়ে বড় কষ্ট , বড় যন্ত্রণা আর নেই। এমন সন্তান বড় অভিশপ্ত সন্তান)
নীচে নচিকেতার সেই বিখ্যাত বৃদ্ধাশ্রম গানটি। যতবার শুনি ততবার গোপনে গোপনে কাঁদতে থাকি।
নচিকেতার অমর সৃষ্টি