ধলেশ্বরীর বাঁক
২১/১১/২০১৪ইং
প্রিয়তমেষু!
পত্রের শুরুতে আমার আঁচল পূর্ণ আশীষ নিও। জানিনা কেমন আছো, প্রার্থণা করি, আজীবন ভাল থাকো। সব নারী তার নর ভাল থাকুক, এই প্রার্থণাই করে। তারপরও কেন যে সারা জীবন অতিবাহিত করেও বোঝাতে পারেনা, সে কত ভালবাসে তার নরকে। তুমি বুঝবে এমনটা এখন আর আমি আশা করিনা। তবুও কিছু কথা আজ লিখতে বড় বেশি ইচ্ছে করছে। সময় হলে একটু মন দিয়ে চিঠি পড়ে নিও। যদিও আমি জানি যে, তোমার সময় অনেক মুল্যবান। তবু চিঠিটি পড়লে এই হতভাগী তার দায় মুক্ত হবে, তাই এ অনুরোধ করছি।
প্রিয়তম! একদিন আমি তোমার জীবনে এসেছিলাম, কত প্রাণবন্ত আর উদ্যম ছিল প্রাণ। আদম (আঃ) এবং হাওয়া (আঃ) এর মত একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য জীবন নামক অচেনা এক দ্বীপে। তুমিও চেয়েছিলে আমি জানি। আমরা তৈরি করতে চেয়েছিলাম নর-নারীর শশ্বত এক প্রেমের বলয়। হ্যা, বলয়ও তৈরি করতে পেরেছিলাম। তবু ভেঙ্গে গেল কেন বলয়? কারন,কোন জাগতিক মোহ আর স্বার্থ বলয়কে আর বাঁচিয়ে রাখতে পারেনা। তুমি হয়ত বলবে, পৃথিবী এমনই গিভ এ্যান্ড টেক এর নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু আমি তো গতানুগতিক কোন কিছু চাইনি, চেয়েছিলাম তুমি আমি আর ব্যতিক্রম কিছু। আমি তোমাকে আমার চেতনা বোঝাতে চেয়েছিলাম। সবাই যখন কি পেল আর কি পেলনা তার হিসাব মেলাবে রোজ। আমরা তখন মানুষের জন্য কিছু একটা ভাল কাজ করব। বেলা শেষে সুর্যাস্তের রক্তিম আলোয় নিজেদের স্বপ্ন পূরণ হবে । নতুন ভোরের আলোয় নতুন বিশ্ব দেখার
প্রত্যাশায় জেগে উঠব কাকভোরে। কত্ত মজা হবে। না হয়নি, কষ্টে অর্জনের সে বলয় ভেঙ্গে গেছে এতটা পাষান না হলেও পারতে, সব ভেঙ্গে চুরমার করে চলে না গেলেও পারতে। একজন প্রেয়সীর এর থেকে খুব বেশি চাওয়ার কিছু নেই। অবশ্য আমি সেই সব প্রেয়সীর কথা বলছি, যারা যাকে তাকে যখন তখন তার ভালবাসার নীল পদ্মগুলি দিয়ে বেড়ায়না। সে প্রেয়সীর কথা বলছি, যে প্রেয়সীকে মানুষ তার সৌভাগ্য গুণে পায়। এই কথার মানে এটাও নয় যে, আমি তোমাকে পিছু ডাকছি। আমি বিশ্বাস করি, “যে যাবে সে যাবেই চলে, আসবে কে সে সময়ই বলে।”
প্রিয়নর! তোমাকে কোন ছোট চিন্তুা স্পর্শ করুক এ আমি চাইনি। তুমি হবে বিশাল চিন্তার, মনের, কর্ম এর মানুষ। তুমি আমার হাত ধরে অসীমের শূণ্যতায় পাড়ি দিতে সাহস করবে। আমরা আমাদের উপর আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করব এই দুনিয়ার জীবনে, আখিরাতেও একসাথে থাকব এমনটাই ভেবেছিলাম । মানুষ এ পৃথিবীতে বেশি খাওয়া, বেশি পরা, বেশি ভোগের জন্য আসেনি। এসেছে অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে। পৃথিবীতে একা একা বেশি খেয়ে, পরে কেউ ভাল নেই। অল্প কিছুকে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্যেই মানুষের আনন্দ লুকানো থাকে। এর থেকে বেশি কিছু লাগেনা সুখী হতে। জানোতো, স্বার্থপরতা আর হীনমন্যতায় ভোগে তারাই যারা আনন্দহীন আর অসুখী মানুষ । আর তাই সব প্র্রেয়সীর মতো আমিও তোমাকে কোন অসুখী নয় সুখী করতে চেয়েছিলাম।
প্রিয় প্রেয়ান! তুমি আমার আলো আধারী ছায়াখানি দেখে দূরে চলে গেলে। শীতের সকালের নরম রোদেলা মন তুমি চিনলেনা। আমি তোমার মতো করে নিজেকে সাজালে তুমি হয়তো খুব খুশি হতে, কিন্তু জীবন এর মানে পাল্টে এর অন্য মানে হতো। লোকেরা সাধারণত বিয়ের পরে মেয়েদের জীবনকে পুতুলের জীবন মনে করে। কিন্তু এটাতো ঠিক না। একজন নারী তো পুরুষের মতোই মানুষ, পুরুষের জীবনের মতো তারও জীবনের প্রবাহ রয়েছে। তারও আছে স্বপ্ন দেখার আর তা বাস্তবায়নের অধিকার। নারী শুধু পরিশ্রম করে অন্যদের জীবনের প্রবাহকে বাঁচিয়ে রাখবে, তার জীবনকে তুচ্ছ করে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। তুমি অন্তত তোমার প্রেয়সীকে সহযোগীতা করতে পারতে। আমার প্রত্যাশাতো এতোটুকুই ছিল, তুমি তা ভাল করে জানো। পৃথিবীর সব মায়াবতী প্রেয়সী তার প্রেয়ানকে মায়া করে, আগলে রাখে, ভালবাসে। এটা তার দূর্বলতা নয়, পবিত্র শক্তি। একে অবজ্ঞা করা খুব অন্যায়। মানুষ বেশি টাকার লোভ করে, প্রেয়সী করে নিঃস্বার্থ ভালবাসা পাওয়ার লোভ। যা সে খুব কম সময়ই পায়। অথচ পাওয়াটাই তার অধিকার আর প্রাপ্য মূল্যায়ন হতে পারত। লোকেরা জানেনা একজন নারী তার হৃদয় নিঃসৃত ভালবাসার বিনিময়ে পায় কন্টকময় পথ। আর নিরব আর্তচিৎকারে আঁধার রাত্রি মৃত্যুপুরী হয় রোজ। নাহ! কেউ জানেনা। আমি জানি এ চিঠি পড়ে তুমি এমন কিছু করবেনা, যা আমি তোমার কাছে প্রত্যাশা করি। সবাই শুধু মুখোশ এঁটে থাকে। আমি মুখোশ ছাড়া তোমাকে একটু দেখাতে চাই পৃথিবীকে কালের স্বাক্ষী করে। আর সবাইকে বলতে চাই, যদি কখনও কিছু চাও তবে চাইবে, সৃষ্টিকর্তার কাছে, মানুষ দিতে পারেনা কিছু। মানুষ ফিরিয়ে দেয়। সৃষ্টিকর্তা ফিরিয়ে দেন না।
প্রিয়তম! ভাল থেকো। আমি ছাড়া যেমন ভাল তোমার থাকতে ভাল লাগে।
ইতি-
তারাবতী
এক টুকরো মানবী