somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রানি ভানুসিংহীর ব্লগ

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রানি ভানুসিংহীর ব্লগে প্রথম পোস্ট করা কবিতার নাম ‘আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে।’ এ কালে রমণীগণের মধ্যে সাহিত্যচর্চাকারিণীর সংখ্যা একান্তই অপ্রতুল। এটা সকলেই জানেন যে সাহিত্য ও কলা শিক্ষিতা নারীকে যতটা না আকর্ষণীয় করে তোলে, তার চেয়ে বেশি লোভনীয়, এবং তারও চেয়ে বড় তাৎপর্য এই যে এ গুণগুলো তাকে করে তোলে অনন্যসাধারণা; এটা রানি ভানুসিংহী ভালো করেই জানেন। আরও জানেন, এ জন্যই তাঁর বাগানের ফুলগুলিকে নিয়ে লেখা কবিতায় বর্তমানের কবিকুল বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।

কাজী নজরুল ইসলাম কবিতাটা বার কয়েক মনোযোগ দিয়ে পড়েও কোনোকিছু উদ্ধার করতে না পেরে লিখলেন: কবিতাটা জটিল হো গিয়া।

জসীম উদ্‌দীন লিখলেন: স্বরবৃত্তে লিখতে চেষ্টা করুন। আমি বাংলার ছড়ার ছন্দে কবিতা লিখে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছি; আমার ‘কবর’ কবিতাটা আমি ছাত্র থাকা অবস্থায়ই সরকার ডিগ্রি শ্রেণির পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছে। আপনিও পারবেন।

বেগম সুফিয়া কামাল: এসব কী লিখেছেন বুঝতে পারলাম না আপামণি। তবে কবিতা হয়েছে বলে মনে হয় না।

পূর্ণেন্দু পত্রী কবিতাটা পড়ে হাসলেন। তারপর লিখলেন: কবিতা খুব সহজলভ্য বস্তু নয় মহাশয়া। আমরা তো আপনাদের জন্য কবিতা লিখছি, তা থেকে কিছু কিছু পড়তে হবে তো, নইলে কবিতা আসবে কেন?

বুদ্ধদেব বসু ঘুম থেকে উঠেই পিসি অন করে ব্লগে ঢুকলেন চোখ ডলতে ডলতে। তিনি খুব বিরক্ত হলেন। লিখলেন: কী লিখেছেন? মাথামুণ্ডু কিছু হয়েছে বলে মনে হয় আপনার? আমাদেরকে নিষ্কৃতি দিন, দয়া করে ব্লগে এসব ছাইপাশ পোস্ট করবেন না। আমি কবিতার বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছি। রবীন্দ্রনাথকে ঢেকে ফেলবো।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেজার হলেন না। লিখলেন: বাক্যগুলো আরও প্রাঞ্জল করে লিখুন। আপনার দ্বারা হলেও হতে পারে।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ঃ রমণীরা যুগে যুগে সাহিত্য রচনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের লেখার কোনো সাহিত্যমূল্য নেই। তথাপি তাঁরা এতো নাম কুড়ালেন, তাঁর কারণ কিছু লুলকবি তাঁদেরকে ‘বাহবা’ দিতে দিতে গাছের আগায় উঠিয়ে দিয়েছেন। কবিতা লিখা আপনার দ্বারা অসম্ভব। তবে পরামর্শ দিই আপনাকে, রবীন্দ্রনাথ আর কাজী নজরুলের লেখাগুলো বেশি করে পড়ুন।

এমন সময় জীবনানন্দের প্রবেশ: কবিতা না বুঝলেই তাকে আবর্জনা বলার পক্ষপাতী আমি নই। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাঁকেও লোকেরা অনেক খোঁচা দিত। আপনারা তো আমার কবিতাকে কবিতাই বলতে চান না। তবে, রানি ভানুসিংহীর এই কবিতাটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। অভিনন্দন মহাশায়।

হুমায়ুন আজাদ: ব্লগে ‘কবিতা লিখবার সহজ উপায়’ শীর্ষক সিরিজ লিখতে যাচ্ছি শীঘ্রই। আপনাদের কথা মাথায় রেখেই এ কাজটা করতে যাচ্ছি যাতে আপনারা উপকৃত হতে পারেন। আর আপনার এ কবিতাটি সম্পর্কে কিছু বলছি না এ মুহূর্তে- তবে এক কথায় বলতে গেলে এটাই বলবো, আপনার হাত বড্ড কাঁচা।

তখন রবীন্দ্রনাথের আত্মা ব্লগে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ে ‘আমার বাগানের ফুলগুলিকে’ নামক একটা কবিতার উপর। তিনি দেখেন ‘রানি ভানুসিংহী’ নামক জনৈকা ব্লগার এ কবিতাটাকে তাঁর নিজের ব্লগে স্বনামে পোস্ট করেছেন। তিনি হাসবেন, নাকি কাঁদবেন, এ কথা ভাবতে ভাবতে যখন হাটে হাঁড়ি ভাঙার উদ্দেশ্যে লগিন করে একটা কমেন্ট লিখে ‘সাবমিট’ করলেন, দেখলেন যে ব্লগে ম্যালফাংশান শুরু হয়ে গেছে। এরপর যতবারই কমেন্ট সাবমিট করলেন, কেবলই ডাটা এরর আসতে লাগলো। অবশেষে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে নিজের সুবিশাল সাহিত্যভাণ্ডার থেকে একটামাত্র কবিতা খোয়া গেলে কোনো বিরাট ক্ষতি হয় না এই মর্মে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে ব্লগ ছেড়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন।


আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে

আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে বাঁধব না আজ তোড়ায়-
রঙ-বেরঙের সুতোগুলো থাক্‌,
থাক্‌ পড়ে ওই জরির ঝালর।।

শুনে ঘরের লোকে বলে,
‘যদি না বাঁধো জড়িয়ে জড়িয়ে
ওদের ধরব কী করে-
ফুলদানিতে সাজাব কোন্‌ উপায়ে?’

আমি বলি,
‘আজকে ওরা ছুটি-পাওয়া নটী,
ওদের উচ্চহাসি অসংযত,
ওদের এলোমেলো হেলাদোলা
বকুলবনে অপরাহ্নে,
চৈত্রমাসের পড়ন্ত রৌদ্রে।
আজ দেখো ওদের যেমন-তেমন খেলা,
শোনো ওদের যখন-তখন কলধ্বনি,
তাই নিয়ে খুশি থাকো।’

বন্ধু বললো,
‘এলাম তোমার ঘরে
ভরা পেয়ালার তৃষ্ণা নিয়ে।
তুমি খেপার মতো বললে,
আজকের মতো ভেঙে ফেলেছি
ছন্দের সেই পুরোনো পেয়ালাখানা!
আতিথ্যের ত্রুটি ঘটাও কেন?’
আমি বলি, ‘চলো-না ঝর্নাতলায়,
ধারা সেখানে ছুটছে আপন খেয়ালে-
কোথাও মোটা, কোথাও সরু।
কোথাও পড়ছে শিখর থেকে শিখরে,
কোথাও লুকোলো গুহার মধ্যে।
তার মাঝে মাঝে মোটা পাথর
পথ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বর্বরের মতো,
মাঝে মাঝে গাছের শিকড়
কাঙালের মতো ছড়িয়েছে আঙুলগুলো-
কাকে ধরতে চায় ওই জলের ঝিকিমিকির মধ্যে!’
সভার লোকে বললো,
‘এ যে তোমার আবাঁধা বেণীর বাণী-
বন্দিনী সে গেল কোথায়?’
আমি বলি, ‘তাকে তুমি পারবে না আজ চিনতে;
তার সাতনলী হারে আজ ঝলক নেই,
চমক দিচ্ছে না চুনি-বসানো কঙ্কণে।’
ওরা বললো, ‘তবে মিছে কেন?
কী পাব ওর কাছ থেকে?’
আমি বলি, ‘যা পাওয়া যায় গাছের ফুলে
ডালে-পালায় সব মিলিয়ে।
পাতার ভিতর থেকে তার রঙ দেখা যায় এখানে সেখানে,
গন্ধ পাওয়া যায় হাওয়ার ঝাপ্‌টায়।
চার দিকের খোলা বাতাসে দেয় একটুখানি নেশা লাগিয়ে।
মুঠোয় করে ধরবার জন্যে সে নয়,
তার অসাজানো আটপহুরে পরিচয়কে
অনাসক্ত হয়ে মানবার জন্যে
তার আপন স্থানে।’
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৫২

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩২

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

বিএনপি মিডিয়া সেল এর সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সকল পত্রিকা কতৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর্মসূচি শুরু করেছেন- বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×