somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে দুটি গান পুরোটা জীবন জুড়ে

১৮ ই জুন, ২০০৯ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গানের আগে


গান গাইতে পারি না, যদিও শুনি অনেক- এখন যেমন তারচে অনেক গুণ বেশি শুনতাম একাদশ শ্রেণীতে প্রেমে পড়ার আগে আগে।

আজ থেকে ২৪-২৫ বছর আগের কথা- বয়স আর সময়ের হিসেবে দুই যুগ। দুই যুগে পৃথিবীতে কতো কিছু পাল্টে গেছে- আর সেই সময়ের অনেক কৃষ্টি আজ যেমন হারিয়ে গেছে, তেমনি সেসব আজকাল আর আছে কি নেই তা জানা ও উপভোগের সুযোগও হয় খুব কমই।

আজকাল বিয়েবাড়িতে নাচগানের আসর হয়, নামিদামি ব্যান্ডপার্টিও আনা হয়। তখন বিয়েবাড়িতে রাতভর মাইক বাজতো। নীনা হামিদ আর আব্দুল আলীমের গানে রাতের চরাচর সুরের মূর্ছনায় ভরে যেত। আর আমি- যেমন এখনও- ঘুমের ভেতর, কিংবা স্বপ্নের ভেতর সেই গানের সাগরে ভেসে ভেসে বহুদূরে হারিয়ে যেতাম।

সেবার প্রতিবেশী এক মেয়ের বিয়ে ছিল। দুদিন ধরে অনবরত মাইক বাজছিল। মাঝে মাঝে 'রেকর্ড' বন্ধ করে খালি গলায় মেয়েরা বিয়ের গীত গায়; কেউ কেউ ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, বা সিনেমার গান।

তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। কিছু আগে থেকেই রেকর্ড বন্ধ করে কয়েকজন ছেলে আবোলতাবোল গাইছিল। শীতের শেষ, বসন্ত আসবে হয়তো, অল্প অল্প শীত- আমি একটা চাদর গায়ে জড়ালাম।

'খলিল ভাই একটা গান গাইবেন?'
'বোকা!' মনে মনে বলি। আমি তো গান গাইতেই এসেছি। বললাম, 'গলাটা বসে গেছে। তবু একটা গাই দেখি। মাইক্রোফোন দাও।'

তার আগে মাত্র একদিন মাইকে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল, অতএব লজ্জাটা খুব কেটে গেছে মনে হলো।

এ গানটা এলাকার এক বয়োজ্যোষ্ঠ ভাইকে অনেক গাইতে শুনেছি। তার গাওয়া শুনে শ্রোতাদেরকে খুব মুগ্ধ হতে দেখেছি। গানটা মাইকে শুনেছি খুব কম। গানটা আমার খুব খুব প্রিয়।

কারো সমানে গান গাইতে কি যে লজ্জা হয়। তার উপর আমার এ গান শুনবে বাড়িতে আমার বাবা, মা, চাচা ও চাচি- খুব খুব লজ্জা লাগে। কিন্তু আমি গান গাইব, অবচেতনে একজনের জন্য।

আমি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে গাইলাম- আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়..... আশ্চর্য, আমি যে এতো ভালো গাইতে পারবো তা নিজেও কখনো ভাবি নি।

পরদিনের পরের দিন খালাতো বোন এসে সেই খবরটা দিল- গান শুনে তো সে পাগল হয়ে গেছে।


আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়

আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায় মনে পড়ে মোরে প্রিয়
চাঁদ হয়ে রবো আকাশের গায় বাতায়ন খুলে দিও

সেথা জোছনার আলোর কণিকা
যেন সে তোমার প্রেমের মণিকা
প্রেমের কলঙ্ক সাথে জড়ায়ে রয়েছে আঁখি ভরে নীর প্রিয়

ভুলি নাই প্রিয় ভুলি নাই
খুলি নাই রাঙা রাখি
মুছি নাই প্রেমচন্দনলেখা দিয়েছ যা ললাটে আঁকি
ভুলি নাই প্রিয় ভুলি নাই

চৈত্রদিনের অলস বেলায়
যদি গানখানি মোর মনে পড়ে হায়
ঝরানো পাতার মর্মর গানে সেই সুরগীতি শুনিও
চাঁদ হয়ে রবো আকাশেরও গায় বাতায়ন খুলে দিও

গানের লিংক

এ গান দিয়েই তার সাথে একটা বিনি সুতোর মালা গাঁথা হতে থাকে। তারপর সুদীর্ঘ করুণ কাহন।

প্রেমিকার সাথে আমার প্রেমের পরিণতি সুনিশ্চিত হয়ে গেছে। ৬-৭ মাস ধরে ও বাসায় বন্দিনী। আমার পাখা আছে, ওদের বাড়ির উপর দিয়ে মাঝে মাঝে উড়ে উড়ে উঁকি দিয়ে ওকে দেখার চেষ্টা করি- দেখতে পাই না।

আমার অবস্থা কেমন তা আমি জানি না। কখনো পাগল- আমার মুখে সুনীলের 'বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল' খইয়ের মতো ফোটে, যত্রতত্র, যখন তখন। পাগল ঠাওরায় মানুষ। কখনো বা গম্ভীর মুখ, বিষণ্ন পাখি- ফ্যাল ফ্যাল আঁখি- অনায়াসে চোখ আর্দ্র হয়ে ওঠে। আমার অবস্থা কেমন তা সত্যিই জানি না। সে কোনোদিন আমার হবে না, অথবা আমি তার - এ অবস্থায় নিজেকে চেনা যায় না।

একদিন বিকেলে একটা গানের আসর ছিল পাশের গাঁয়ে। বর্ষার পানি নেমে যাচ্ছে। বাতাসে মরা পানির ঘ্রাণ- আমি হাসতে ভুলে গেছি কতোদিন হলো!

কবে যেন গেয়েছিলাম 'আধো রাতে'- বছর খানেক তো হবেই। মাইকে আমার কণ্ঠে মানুষ গান শুনবে! এতোগুলো মানুষের সামনে! আমার লজ্জা হলো না। মানুষের মধ্যে এতো প্রাণচাঞ্চল্য কোথা থেকে আসে? তারা কলকলিয়ে হাসে। আনন্দ করে। ঠাট্টাতামাসা করে। আমি হাসতে ভুলে গেছি।

মাইকে আমার নাম ঘোষিত হওয়া মাত্র লজ্জা আমাকে জেঁকে ধরে। আমি তো গায়ক নই, কেন খামোখা লোক হাসাতে মঞ্চে যাব?

কিন্তু লজ্জার মাথা কিভাবে খেলাম জানি না। আমি খুব দরদ দিয়ে গাইলাম- যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই কেন মনে রাখো তারে?

এতোদূর থেকে এ গান ওর কানে গান ভেসে যেতে পারে না। কিন্তু হায়, সন্ধ্যাতেই খালাতো বোন এসে জানালো- ও খুব কেঁদেছে গান শুনে।

তারপরও সে অনেক কেঁদেছে। আমি খবর পেয়েছি। আমি অনেক কেঁদেছি- ওর অজানা থাকে নি কিছুই।

ও যেদিন পালকি চড়ে যাচ্ছিল আর কাঁদছিল, আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম- বলেছিলাম- কাঁদিস না। আমার 'কাঁদিস না' শুনে ওর কান্নার বেগ বহু গুণ বেড়ে গেলো, আর আমার বুক ভেঙে খান খান হতে থাকলো।



যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই

যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই
কেন মনে রাখো তারে
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও
ভুলে যাও একেবারে

আমি গান গাহি আপনার সুখে
তুমি কেন এসে দাঁড়াও সমুখে
আলেয়ার মতো ডাকিও না আর নিশীথ অন্ধকারে

দয়া করো দয়া করো আর আমারে লইয়া খেলো না নিঠুর খেলা
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না সেই শুভ লগনের বেলা
প্রিয় শুভ লগনের বেলা

আমি ফিরি পথে তাহে কার ক্ষতি
তব চোখে কেন সজল মিনতি
আমি কি ভুলেও কোনোদিনও এসে দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে
যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই
কেন মনে রাখো তারে

গানের লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৩:১৪
৪৫৬ বার পঠিত
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশরের ঝটিকা সফর ২০২৪ _ প্রস্তুতি পর্ব

লিখেছেন নতুন, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৭

দুনিয়াতে অনেকের কাছেই টাকা-পয়সা হাতে ময়লা। দুবাইয়ে থাকার সুবাদে সত্যিই অনেক মানুষকে দেখছি যারা এত টাকা খরচের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। এ কারণেই লুই ভিতন ২০ লক্ষ টাকার টেডি বিয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমাদের অভিবাদন হে বিপ্লবী!

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৫


তোমাদের অভিবাদন হে বিপ্লবী!

বিপন্ন সময়ে, ইতিহাসের ক্রান্তিকালে
চাটুকারিতা আর মোসাহেবির আবশ্যিকতাকে দলে
স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে-
ছররা গুলি, টিয়ার শেল, গুপ্ত আক্রমন
সব কিছু ছাপিয়ে দৃঢ় চেতনায় অবিচল- বিজয়ের স্বপ্নে।

তোমাদের অভিবাদন হে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবশেষে রিক্সালীগ সফল!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২২


অবশেষে আবারো সরকার হার মানলো। হার মানলো রিক্সালীগের কাছে। এটা শুরু মাত্র। এখন সবকিছুতেই হার দিয়েই চলতে হবে হয়তো। যেটা কারোরই কাম্য ছিলনা। কাম্য ছিল তাদেরই যারা অন্যায়ভাবে শত শত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেগা মানডে: সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও অহিংস প্রতিবিপ্লবের ভূত চেপে বসেছে ঢাকাবাসীর ঘাড়ে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬



ঢাকায় নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। আজকে তার সাথে ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো অহিংস অভ্যুত্থান কর্মসূচীর! বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হল কোন উদ্দেশ্যে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৯

আমার ধারণা চিন্ময় ব্রহ্মচারী প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য। ভালো উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয় নাই। চিন্ময় ব্রহ্মচারীর কথা বার্তা আমার ভালো লাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×