কলেজের টেস্ট পরীক্ষা শেষ। এইচ এস সি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে অসম্ভব ব্যস্ত। জানুয়ারির এক তারিখ পত্রিকা খুলে মন খুব ভালো হয়ে গেল। মুহম্মদ জাফর ইকবাল নববর্ষের লেখায় প্রসংগ হিসেবে নিয়ে এসেছেন ওপেন সোর্স। ২০০৬ এর কথা। তখন ওপেনসোর্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই কম আমার তখন মনে হয়েছিল জাফর ইকবালের মত একজনের ওপেনসোর্সের পক্ষে কথা বলা খুবই প্রয়োজন ছিল। কিছুদিন পর মুনির হাসান আরেকটা লেখা দিলেন প্রাসংগিকভাবে। মিডিয়ায় এভাবে ওপেনসোর্সের কথা উচ্চারণ হওয়া খুবই ইতিবাচক ব্যপার। অদ্ভুত একটা লেখা পড়লাম ১৮ তারিখ, পড়ে মেজাজ পুরাই খারাপ। লেখক আমাদের জব্বার কাগু।
তার কথা হচ্ছে ওপেনসোর্সের কথা বলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
তিনি কিভাবে সফটওয়্যার ফ্রি বিতরণ করে তার প্রোগ্রামারকে বেতন দিবেন তা ভেবে পান না(যদিও এখন অনেকেই জানি পাপ্পানা ভাইকে তিনি বেতন দেননি http://www.youtube.com/watch?v=UrMVnOotPO8
এই লোক এখন ডিজিটাল কনসেপ্টের প্রণেতা =)) =)) কই যাই!!!!!)।
এরপর চলল ওপেনসোর্স সফটওয়্যার দিয়ে আসলে যে কোন কাজ করা সম্ভব না তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা। মেজাজ দ্বিতীয় দফায় খারাপ। আমার মত এইচএসসি পরীক্ষার্থী যা বুঝে জব্বার কাগু তা বুঝে না। আবার নতুন প্রজন্মকে নিয়ে তার দুষ্চিন্তার অন্ত নেই। জাফর ইকবালের ছাত্রদের নিয়েও একটা মন্তব্য ছিল, যে তারা হয়তো ওপেনসোর্স নিয়ে জীবিকা চালাতে পারবে, কিন্তু আসলে এই বস্তু হচ্ছ সোনার পাথর বাটি।
বন্ধু ওয়াসিকে ফোন করলাম। দুইজনই খুব উত্তেজিত। দুজন আলোচনা করে রাতেই
লিখে ফেললাম একটা প্রতিক্রিয়া। মনে মনে প্রস্তুত জব্বার কাগু আবার কি নিয়ে অ্যাটাক করেন। কিছুদিন পর প্রথম আলোতে নিজেদের লেখা আবিষ্কার করে বিশাল খুশি হয়ে গেলাম। অনেকদিন পর লেখাটা পেলাম বিডিলাগের একটা থ্রেডে। জামিল ভাই পোস্ট করেছিলেন লেখাটা। লেখাটা শেয়ার করলাম....
(বলে রাখি লেখাটায় অনেক ভুলভ্রান্তি আছে আর নটরডেম লিনাক্স ইউজার গ্রুপ বলে এখন কিছু নাই, তখন আমরা কয়েকজন লিনাক্স ইউজার উদ্দ্যোগ নিচ্ছিলাম এধরণের কিছু একটা করার জন্য, যদিও শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেনি )
.............................................
.............................................
.............................................
.............................................
আমাদের সফটওয়্যার ও কিছু বিভ্রান্তি
মোঃ রেজাউর রহমান ও মীর ওয়াসি আহমেদ
গত ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত 'আমাদের সফটওয়্যার, আমাদের সংকট' শীর্ষক লেখায় মোস্তাফা জব্বার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের প্রভাবকে অত্যন্ত ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথমত, তিনি এই যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন যে, কেবল প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার বিক্রির মাধ্যমেই সফটওয়্যার শিল্পে অর্থাগমন ঘটানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সবাই যদি ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা শুরু করে তাহলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ধস নেমে যাবে। তার অন্তত এই বিষয়টি জানা উচিত ছিল, পৃথিবীর অত্যন্ত প্রভাবশালী তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন (আইবিএম), রেডহ্যাট, হিউলেট-প্যাকার্ড (এইচপি)-এর সফটওয়্যারভিত্তিক ব্যবসা মূলত ওপেনসোর্সভিত্তিক। এসব প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যারভিত্তিক আয়ের বড় অংশ হচ্ছে বিক্রয়োত্তর সেবা। ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের লাইসেন্সের ব্যাপারটি একটু অন্যরকম। এ সফটওয়্যারগুলো কম মূল্যে বিক্রয় করা হয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। যেকোনো ব্যবহারকারী এ সফটওয়্যারের পরিবর্তন সাধন করে তা বিতরণ করতে পারেন, কিন্তু বিক্রয় করতে পারেন না। আবার ওই
সফটওয়্যারের যেকোনো সমস্যার সমাধান দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চার্জ নিতে পারে।
অর্থাৎ ওপেনসোর্স সফটওয়্যার সব সময় ব্যবহারকারীর চেতনার স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করে। ব্যবহারকারী চাইলে নিজে ওই সফটওয়্যারের বিভিন্ন ত্রুটি সমাধান করতে পারে অথবা ওই সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে পারে। কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকেও সফটওয়্যার সমাধান গ্রহণ করতে পারে।
আমাদের দেশেই যদি সর্বস্তরে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের ব্যবহার শুরু হয় তাহলে যেসব সফটওয়্যারভিত্তিক সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের বিদেশী কোম্পানিগুলোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে, তা হয়তো দেশেই করা সম্ভব হবে। ফলে দেশে সফটওয়্যারের বিক্রয়োত্তর সেবায় বিশাল বাজার সৃষ্টি হবে। কারো যদি ওপেনসোর্সভিত্তিক ব্যবসায়িক সমাধান সম্পর্কে জানতে আগ্রহ থাকে তাহলে তারা
Click This Link http://www.ibm.com,
http://www.novell.com/success ইত্যাদি সাইট দেখতে পারেন।
এ কথা সত্য যে, প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যার ব্যবসাতেও বিক্রয়োত্তর সেবা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রোপ্রাইটারি সফটওয়্যারের বৈধ ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই কম। ফলে দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যারেরই বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। অথচ কম মূল্যে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি করা হলে আফটার সেলস সাপোর্টের বাজার তৈরি করা সহজতর হবে। জনাব মোস্তাফা জব্বার সফটওয়্যার বাজার সম্প্রসারণে বাণিজ্যিক সফটওয়্যারের ভূমিকার কথা বলছেন, কিন্তু তিনি নিজেও জানেন এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো শক্তিশালী করার জন্য প্রথমত দরকার সফটওয়্যার পাইরেসি প্রতিরোধ। কিন্তু তা করা হলে এ দেশের জনগণ অবশ্যই কম মূল্যের পণ্যের দিকে ঝুঁকবে। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে তাই ওপেনসোর্স সফটওয়্যারই ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তিতে
উন্নতির সোপান হিসেবে কাজ করবে।
দ্বিতীয়ত, পূর্বোক্ত রচনায় লেখক ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের মান প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। এখানে একটি বিষয় জানিয়ে রাখি, কিছুদিন আগেও খুব উন্নতমানের ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ছিল না। কিন্তু দিনে দিনে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব সফটওয়্যারের মানও বাড়ছে। ওপেনসোর্সের সবচেয়ে বড় শক্তি এর ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত এসব সফটওয়্যারের অনলাইন ডেভেলপ করে চলেছে; বাণিজ্যিক সফটওয়্যারগুলোর বাগ ফিক্সার যেখানে গুটি কতক প্রোগ্রামার, সেখানে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারগুলোর বাগ ফিক্সার অসংখ্য। সে কারণে ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের নিরাপত্তাজনিত ত্রুটিও কম। এ কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ সার্ভারেই ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে।
এবার আসা যাক, মাল্টিমিডিয়ার কথায়। জিআইএমপি আজ পুরো বিশ্বে আলোচিত ইমেজ ম্যানিপুলেটিং সফটওয়্যার, থ্রিডি অ্যানিমেশনের জন্য আজ হলিউড মুভিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্লেনডারসহ অনেক ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ে স্ক্রিবাস সফটওয়্যারের কর্মোপযোগিতা লক্ষ করে নিউজফোর্স একে আখ্যায়িত করেছিল "One of the
killer applications of linux"। বিস্তারিত জানতে লগইন করুন
http://scribus.net সাইটে।
নবীন প্রোগ্রামার হিসেবে আমরা বলছি, ওপেনসোর্সভিত্তিক কম্পাইলারগুলো পৃথিবীর
যেকোনো বাণিজ্যিক কম্পাইলারের তুলনায় অধিক নির্ভরযোগ্য। এসিএম আইসিপিসিতে লিনাক্সভিত্তিক সফটওয়্যারের সাহায্যে জাজমেন্ট করা হয়। ডেভেলপমেন্ট টুলসের ক্ষেত্রে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার আমাদের দিয়েছে একলিপ্স-এর মতো নির্ভরযোগ্য আইডিই যার সমতুল্য জাভা আইডিই সত্যি বিরল। ওপেনসোর্সের সফলতা দেখে স্বয়ং মাইক্রোসফট তাদের একটি প্রোগ্রাম Wix (Windows Installer XML)-কে ওপেনসোর্স হিসেবে বের করেছে।
ইন্টারনেটে খোঁজখবর নিলেই দেখা যাবে প্রতিদিনই অসংখ্য নতুন ও কর্মোপযোগী ওপেনসোর্স সফটওয়্যার বের হচ্ছে যা আমাদের কম্পিউটিংয়ের অভিজ্ঞতাকে করছে সমৃদ্ধ।
তৃতীয়ত, জনাব জব্বার বাংলা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। এখানে দুটো কথা বলতে হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে-বাংলা লিনাক্সের এখনো উন্নয়ন কাজ চলছে। গত কয়েক বছর ধরে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য এদেশী প্রোগ্রামাররা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আগ্রহীরা খোঁজ নিতে পারেন http://www.bdosn.org, http://www.ekushey.org,
http://www.ankurbangla.org সাইটে। এছাড়া, যে কথাটি এ প্রসঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে তা হলো, বাংলা লিনাক্স মূলত তৈরি করা হয়েছে এ দেশের স্বল্পশিক্ষিত জনগণকে কম্পিউটার সচেতন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কম্পিউটার যেন তাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করাই বাংলা ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেমের উদ্দেশ্য। ফলে এর মাধ্যমে ই-গভর্নেন্সের বিস্তার ঘটানো সহজ হবে। লক্ষ করুন, একজন স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তি কম্পিউটারের সাহায্যে সাধারণ দাপ্তরিক কাজে ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও মাল্টিমিডিয়া অনুষঙ্গ ব্যবহার করবে। বাংলা লিনাক্স কিন্তু এ ধরনের কাজের উপযোগী অত্যন্ত মানসম্মত সফটওয়্যার দিচ্ছে। এ ধরনের সুবিধার কথা চিন্তা করেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ (ভারত,সুইজারল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া ইত্যাদি) তাদের সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে
ই-গভর্নেন্সের বিস্তারের জন্য ওপেনসোর্স সিস্টেম ব্যবহার করে আসছে।
সবশেষে আমাদের একটি কথা বলতে হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তি এখন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে
পরিবর্তিত হচ্ছে। যেখানে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে একই পিসিতে সাতটি টার্মিনাল ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে সেখানে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে তা চিন্তাও করা যায় না। মাল্টিইউজার ধারণাটি প্রথম এনেছিল লিনাক্স তথা ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম। ক্লাস্টার কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে ওপেনসোর্সের আজ জয়জয়কার। গণিতবিদ ও প্রোগ্রামারদের জন্য ওপেনসোর্স আজ খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন জানালা। আইবিএম সান মাইক্রোসিস্টেমস, ওরাকলের মতো টেকনোলজি জায়ান্টদের ওপেনসোর্সের প্রতি ঝুঁকে পড়াই ইঙ্গিত দিচ্ছে ওপেনসোর্স হতে চলেছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।
মোঃ রেজাউর রহমান ও মীর ওয়াসি আহমেদ: নটরডেম লিনাক্স ইউজার গ্রুপের সদস্য।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১০ রাত ৯:৩৩