প্রাচীন ভারতে হেকিম ও কবিরাজগণ যেমন মানুষের চিকিৎসা করতেন, তেমনি প্রাণিরও চিকিৎসা করতেন এবং তা ছিল মূলত আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মোতাবেক। ১৭৭৪ সালে ‘ঘোড়া প্রজনন খামার’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ উপমহাদেশে আধুনিক ভেটেরিনারি পেশার যাত্রা শুরু হয়। ঐ সময় Williams Frazer নামক Cavalry বিভাগের এক ব্রিটিশ সেনা অফিসার ঘোড়া ও গরুর জাত উন্নয়নে উৎসাহী হয়ে উঠেন। তার ফলে ইংল্যান্ড থেকে ৬টি গাভী ও ২টি ষাড় এনে ভারতের পুনে’তে একটি গরু প্রজনন খামার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে London Court of Directorate এর অনুমোদনক্রমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের Cavalry বিভাগের ঘোড়াগুলির প্রজনন ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের লক্ষে ১৭৯৬ ভারতের পুষ্কার (Pushkar) নামক স্থানে একটি প্রজনন খামার স্থাপণ করে। বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রাথমিকভাবে
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রজনন ব্যবস্থাপনা সাফল্য লাভ করতে পারে নি।
১৮০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটেনে তাদের সদর দপ্তরের কাছে একজনকে পেশাদার ভেটেরিনারিয়ান হিসাবে চেয়ে আবেদন করেন যিনি ঘোড়ার প্রজনন ব্যবস্থায় দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। ঐ সময় William Moorcroft নামে একজন ভেটেরিনারিয়ান Westminster Volunteer Cavalry কাজ করতেন যিনি ১৭৯১সালে ইউরোপের প্রথম ভেটেরিনারি কলেজ, লিঁও, ফ্রান্স থেকে Veterinary ডিগ্রি নেন এবং লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটে ঘোড়ার জন্য প্রথম হাসপাতাল চালু করেন এবং ১৭৯২ সালে ব্রিটেনে প্রথম ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপনে সহায়তা করেন। তাঁর দক্ষতা ও পেশাদিরিত্ব দেখে Edward Parry নামক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন পরিচালক তাঁকে পুষ্কারস্থ ঘোড়া প্রজনন খামারের তত্ত্বাবধায়ক ও ভেটেরিনারি সার্জন পদে নিয়োগ দেন।
তিনিই ভারতবর্ষের প্রথম পেশাদার ভেটেরিনারিয়ান।
তাঁর প্রচেষ্টায় প্রাণির রোগ নির্ণয়, প্রতিকার, জাত উন্নয়ন এবং খাদ্য ও ব্যবস্থাপনায় অনেকটা উন্নয়ন ঘটে। ভেটেরিনারি পেশার সম্পর্কে আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৮২০ নাগাদ ব্রিটেন থেকে অনেক পেশাদার ভেটেরিনারিয়ানগণ ভারতবর্ষে আসতে থাকেন।
কর্নেল J.H.B Hallen এর প্রচেষ্টায় ১৮৬২ সালে ভারতবর্ষের পুনে’তে সর্বপ্রথম সামরিক ভেটেরিনারি হাসপাতাল স্থাপন করা হয় যেখানে ১ বছর মেয়াদী ভেটেরিনারি কোর্স প্রদান করা হতো।
কর্নেল J.H.B Hallen কে ঐ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ভেটেরিনারি সার্জন পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান তৈরির উদ্দেশ্যে পরবর্তীতে ১৮৭৭ সালে
ভারতের বাবুগড়ে প্রথম ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন করেন। তারই
ধারাবাহিকতায় ১৮৮২ সালে লাহোরে, ১৮৮৬ সালে বোম্বে এবং ১৮৯৩ সালে কোলকাতা ও মাদ্রাজে ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন করা হয় যেখানে ৩ বছর মেয়াদী ভেটেরিনারি কোর্স (Diploma in Veterinary Science) প্রদান করা হতো।
প্রাণীসম্পদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন সেবা নির্বিঘ্ন করার জন্যে কর্নেল J.H.B Hallen এর নেতৃত্বাধীন The Cattle Plegue
Commission এর সুপারিশের প্রেক্ষিতে ভারতের ইজ্জতনগরে ১৮৮৯ সালে Imperial Bacteriological Laboratory প্রতিষ্ঠা করা হয় যা বর্তমানে Indian Veterinary Research
Institute (IVRI) নামে সুপরিচিত। কর্নেল Hallen সামরিক বাহিনীর প্রাণী চিকিৎসার পাশাপাশি বেসামরিক জনসাধারণের পশু-পাখি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৮৯৩ সালে
Civil Veterinary Department প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিভাগটি মূলত পশু-পাখির সংক্রামক রোগ দমন ও নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাণিসম্পদ
উন্নয়নের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে সমাধান দেয়ার কাজ করতো। তৎকালীন ভারতবর্ষের ভাইসরয় Lord Linlithgow এর
পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৩৮ সালে দিল্লীতে সর্বপ্রথম All India Cattle Show n নামে গবাদি পশু প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এ
প্রদর্শনীতে দেয়া অঙ্গীকার হিসেবে Lord Linlithgow সিভিল ভেটেরিনারি বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তরে উন্নীত করে মহকুমা ও থানা পর্যায়ে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। প্রাণিসম্পদের বিকাশ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষে ভারতের প্রথম এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি কমিশনার Sir Arthus Oliver ১৯৩৬ সালে মাদ্রাজ! ভেটেরিনারি কলেজে সর্বপ্রথম ডিগ্রি কোর্স চালু করেন।
(কৃতজ্ঞতা Dunlop and Williams, 1996, ও ডা. মইন, এসি(ল্যান্ড), জামালপুর সদর।)