নীল, খয়েরি ও হলুদ রঙের ক্ষুদ্রাকৃতির সব প্লাস্টিক কণা, যা মাইক্রোবিডস নামে পরিচিত। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব প্লাস্টিক কণা ব্যবহার হয় ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট ও ফেসওয়াশসহ নানা প্রসাধনীপণ্যে।
ইউনিলিভারের ডিটারজেন্ট ও প্রসাধনীপণ্যে উচ্চমাত্রায় মাইক্রোবিডসের উপস্থিতির বিষয়টি উঠে এসেছে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) সাম্প্রতিক গবেষণায়। ‘মাইক্রোবিডস আনফোল্ড হেলথ রিস্ক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন’ শীর্ষক ওই গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ইউনিলিভারের পন্ড’স ব্র্যান্ডের ৫০ শতাংশ ফেসওয়াশে মাইক্রোবিডসের (১ মিলিমিটারের কম) উপস্থিতি রয়েছে। একই কোম্পানির ডাভ ব্র্যান্ডের ৪০ শতাংশ ফেসওয়াশে পাওয়া গেছে মাইক্রোবিডসের উপস্থিতি।
ডিটারজেন্টের মধ্যে দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহূত ব্র্যান্ড ইউনিলিভারের সার্ফ এক্সেল ও রিন। ডিটারজেন্ট থেকে নির্গত মাইক্রোবিডসের ৬৯ শতাংশই আসে এ দুটি ব্র্যান্ডের পণ্য থেকে। এর মধ্যে সার্ফ এক্সেল নির্গত করে ৪৫ ও রিন ওয়াশিং পাউডার ২৪ শতাংশ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্টের মার্কেট শেয়ার ও ব্যবহারের ভিত্তিতে এ হিসাব করেছে এসডো।
প্লাস্টিক কণামুক্ত নয় বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ইউনিলিভারের টুথপেস্ট ব্র্যান্ড ক্লোজআপও। ক্লোজআপ ব্র্যান্ডের বিভিন্ন টুথপেস্টে রয়েছে উচ্চমাত্রায় মাইক্রোবিডস। ক্লোজআপ ব্র্যান্ডের ৬০ শতাংশ টুথপেস্টে রয়েছে মাইক্রোবিডসের উপস্থিতি।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ডিটারজেন্ট থেকে কাপড়ে লেগে থাকা এসব প্লাস্টিক কণা লোমকূপে জমে ত্বকের ক্ষতি করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বকের কোষ। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায় এসব প্লাস্টিক কণা। বাধাগ্রস্ত হয় হূদযন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া। বিশেষ ক্ষেত্রে কারণ হতে পারে ক্যান্সারেরও।
রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ও সুপারশপ থেকে ৬০টির মতো নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাটি চালায় এসডো। নিউমার্কেট, রাপা প্লাজা, আগোরা সুপারশপ ও মীনা বাজার থেকে সংগ্রহ করা এসব নমুনার মধ্যে রয়েছে ফেসওয়াশ, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট, বডিওয়াশ ও নেইলপলিশ।
২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যে মাইক্রোবিডস ব্যবহার বন্ধ করে ইউনিলিভার। বন্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যেও। একই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অন্যান্য দেশেও। যদিও ঘোষণা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনো উচ্চমাত্রায় প্লাস্টিক কণাযুক্ত পারসোনাল কেয়ার পণ্য বিক্রি করছে ইউনিলিভার।
বিষয়টি জানতে চেয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশে ই-মেইল পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এসডোর গবেষণা অনুযায়ী, ফেসওয়াশ, টুথপেস্ট ও ডিটারজেন্ট থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে প্রতি মাসে নির্গত হয় ৭ হাজার ৯২৮ বিলিয়ন প্লাস্টিক কণা। প্রসাধনীসামগ্রী থেকে নির্গত মাইক্রোবিডসের ৪৩ শতাংশ হয় ফেসওয়াশ থেকে। ডিটারজেন্ট থেকে হয় ৩২ শতাংশ আর ২০ শতাংশ নির্গত হয় টুথপেস্ট থেকে। দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষই প্লাস্টিক কণাযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করে। টুথপেস্ট ব্যবহারে সরাসরি দেহে প্রবেশ করে এগুলো। এছাড়া বডিওয়াশ থেকে ৩ ও বাকি ২ শতাংশ মাইক্রোবিডস নির্গত হয় ক্রিম থেকে।
প্রত্যক্ষ ক্ষতির পাশাপাশি পরোক্ষভাবেও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে এসব প্লাস্টিক কণা। এসব প্লাস্টিক কণা খাদ্যের মাধ্যমে মাছের শরীরে জমা হয়। এসব মাছ খাওয়ার মাধ্যমে তা মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে। ঢাকার আশপাশের জলাশয়ের ৪০ শতাংশ মাছের শরীরে প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এসব প্লাস্টিক কণা কমিয়ে দেয় প্রজনন ক্ষমতাও।
মাইক্রোবিডস সম্পর্কে ভোক্তা, উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের সচেতনতাও পরিমাপ করেছে এসডো। তাতে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ ভোক্তাই মাইক্রোবিডসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানেন না। এমনকি ৯২ শতাংশ খুচরা বিক্রেতাও বিষয়টি অবগত নন।
প্রথম আলো বা প্রধান দৌনিকগুলো জীবনেও ইউনিলিভারের বিরুদ্ধতা করবে না। কারণ এদের জীবিকা চলে এসব কোম্পানির এড থেকে। তাই পোস্টটি শেয়ার কপি পেস্ট যেভাবে পারেন ছড়িয়ে দিন। এসব ভেজাল খেয়ে ইন্জিন যে কতদিন চলবে!!
সূত্রঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮