গোল্লাছুট সাধারণত খোলা মাঠ বা বাগানে খেলা হয়। প্রথমে একটি ছোট গর্ত করে সেখানে একটি কাঠি পুতে রাখা হয়। একে বলে গোল্লা এবং এটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় সীমানা। পঁচিশ-ত্রিশ হাত দূরের কোনো গাছ বা ইট-পাথরকে বাইরের সীমানারূপে চিহ্নিত করা হয়। গোল্লা থেকে ছুটে গিয়ে বাইরের সীমানার গাছ-পাথরকে স্পর্শ করাই এ খেলার মূল লক্ষ্য। আর এ থেকেই খেলার নাম হয়েছে গোল্লাছুট । পাঁচ-সাতজনের দুই দলের সমান সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
গোল্লাছুট খেলায় একজন প্রধান থাকে, তাকে বলা হয় ‘গোদা’। সে গোল্ল ছুঁয়ে দাঁড়ায়, অন্যরা তার ও নিজেদের হাত পরস্পর ধরে ঘুরতে থাকে। বিপক্ষ খেলোয়াড়রা সুবিধামতো স্থানে দাঁড়িয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে কারো হাত ছুটে গেলে সে দৌড়ে গিয়ে গাছ ছোঁয়ার চেষ্টা করে। ছোঁয়ার আগে বিপক্ষের কেউ তাকে ছুঁয়ে দিলে সে ‘মারা’ যায়, অর্থাৎ এবারের খেলা থেকে সে বাদ পড়ে। গোল্লা ছেড়ে শেষ পর্যায়ে গোদাকেও দৌড়াতে হয়। যে কয়জন সফল হয় তারা গর্ত থেকে জোড় পায়ে সীমানার দিকে লাফ দিয়ে এগিয়ে যায়। সব লাফ মিলিয়ে সীমানা ছুঁতে পারলে এক ‘পাটি’ হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে দুই পক্ষের খেলা চলতে থাকে। খেলাটি এক সময় ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল ও খুলনা জেলায় বহুলভাবে প্রচলিত ছিল।
ডাংগুলি
ডাংগুলি বাংলার সর্বাঞ্চলীয় একটি জনপ্রিয় খেলা। প্রধানত কম বয়সের ছেলেরা এটি খেলে থাকে; মেয়েরা ডাংগুলি খেলে না। দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে বিভক্ত হয়ে এটি খেলতে পারে। দেড় হাত লম্বা একটি লাঠি এবং এক বিঘত পরিমাণ একটি শক্ত কাঠি খেলার উপকরণ। প্রথমটিকে ‘ডান্ডা’ ও দ্বিতীয়টিকে ‘গুলি’ বা ‘ফুত্তি’ বলা হয়। প্রথমে খোলা মাঠে একটি ছোট গর্ত করা হয়। যারা দান পায় তাদের একজন গর্তের ওপর গুলি রেখে ডান্ডা মেরে সেটিকে দূরে ফেলার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা চারদিকে দাঁড়িয়ে থেকে সেটিকে লুফে নিতে চায়। তারা সফল হলে ওই খেলোয়াড় আউট হয়, আর ধরতে না পারলে গর্তের ওপর রাখা ডান্ডা লক্ষ করে ছুঁড়ে মারতে হয়। ছোঁয়া গেলে সে দান হারায়, আর তা না হলে সে ডান্ডা দিয়ে তুলে গুলিকে আবার দূরে পাঠায়। পরে গুলি থেকে গর্ত পর্যন্ত ডান্ডা দিয়ে মাপতে থাকে। সাত পর্যন্ত মাপের আঞ্চলিক নাম হলো: বাড়ি, দুড়ি, তেড়ি, চাঘল, চাম্পা, ঝেঁক, মেক।
এরূপ সাত মাপে এক ‘ফুল’ বা ‘গুট’ এবং সাত ফুলে এক ‘লাল’ হয়। ভাঙা ফুলের ক্ষেত্রে যেখানে শেষ হয়, পরের খেলা সেখান থেকে শুরু হয়। বাড়ি, দুড়ি ইত্যাদি প্রতিটি মারের পৃথক পৃথক পদ্ধতি আছে। আউট না হওয়া পর্যন্ত একজন খেলোয়াড় খেলতে পারে; আউট হলে দলের দ্বিতীয় একজন একই পদ্ধতিতে খেলবে। এভাবে সবাই আউট হয়ে গেলে বিপক্ষ দল দান পেয়ে খেলা শুরু করে। বস্ত্তত এ খেলাটি বর্তমান যুগের ক্রিকেটের গ্রাম্য সংস্করণ এবং ব্যাট ও বল ডান্ডা ও গুলির সমতুল্য। এ ক্ষেত্রেও ক্যাচ ধরে বা ডান্ডায় আঘাত করে আউট করার বিধান আছে। খেলাটি অঞ্চলভেদে ‘ডাংবাড়ি’, ‘গুটবাড়ি’, ‘ট্যামডাং’, ‘ভ্যাটাডান্ডা’ 'ফুতি ডান্ঠি' ইত্যাদি নামে পরিচিত।
আমার সাইট
বাংলার হারানোর পথে যে খেলাধুলা ২
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭