সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নোবেল শান্তি পুরুষ্কার ২০১৫ ঘোষিত হয়েছে।
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছে তিউনিসিয়ার চারটি সংগঠনকে যারা দেশটিকে গণতন্ত্রে উত্তরণে সহায়তা করেছে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান এই পুরস্কার ঘোষণা করে বলেন, তিউনিসিয়ায় ২০১১ সালের বিপ্লবের পর সেখানে বহুমতের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই চারটি সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিউনিসিয়ার পুরস্কার বিজয়ী চারটি সংগঠন হচ্ছে:
তিউনিসিয়ান জেনারেল লেবার ইউনিয়ন, তিউনিসিয়ান কনফেডারেশন অব ইন্ডাষ্ট্রি, ট্রেড এন্ড হ্যান্ডিক্র্যাফটস, তিউনিসিয়ান হিউম্যান রাইটস লীগ এবং তিউনিসিয়ান অর্ডার অব লইয়ার্স।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তিউনিসিয়াকে একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধান ভূমিকা রাখে এই চতুষ্টয়।
এই চতুষ্টয় গঠিত হয় ২০১৩ সালের গ্রীষ্মে, যখন সামাজিক অস্থিরতা আর রাজনৈতিক হত্যার ঘটনায় গণতান্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া পণ্ড হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিল। তিউনিসিয়া যখন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে, এই চতুষ্টয় তখন বিকল্প একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে পেরেছিল। আর এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তিউনিসিয়ায় একটি সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, যে সরকার ধর্ম, লিঙ্গ, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বেশেষে সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে।”
২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর পুলিশের দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারে প্রতিবাদে মোহাম্মদ বোয়াজিজি নামের এক তরুণের আত্মাহুতির মাধ্যমে তিউনিসিয়ায় আন্দোলনের শুরু হয়। সেই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের রূপ পায় এবং ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি দেশটির প্রেসিডেন্ট জিনে আল আবিদিন বেন আলির ২২ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
তিউনিসিয়ার জাতীয় ফুলের নামে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক এন্ডি কারভিন এই গণআন্দোলনের নাম দেন ‘জেসমিন বিপ্লব’। পশ্চিমা গণমাধ্যমের কল্যাণে দ্রুত ওই নাম বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পায়। ‘জেসমিন বিপ্লবের’ পথ ধরে উত্তর আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শুরু হয় দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের দাবিতে গণআন্দোলনের ঝড়, যা ‘আরব বসন্ত’ নাম পায়। তিউনিসিয়ার পর মিশর আর লিবিয়াতেও স্বৈরশাসকের পতন দেখে বিশ্ব।
নোবেল কমিটি বলছে, এসব দেশের অনেকগুলো এখনও ভুগছে; তাদের গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারের দাবি এখনও থমকে আছে। তবে নাগরিক সমাজের স্বতস্ফূর্ততায় তিউনিসিয়ায় একটি গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
“এই চতুষ্টয় তিউনিসিয়ার সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব করে; আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মৌলিক ধারণা নিয়ে তারা মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করে। এর ভিত্তিতেই তারা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় এগিয়ে আসে এবং তিউনিসিয়াকে শান্তি ও গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়ার নৈতিক দায়িত্বটি পালন করে।”
এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নে ২০৫ জন ব্যক্তি ও ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম আসে, যাদের মধ্যে জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা মের্কেল, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, পোপ পোপ ফ্রান্সিস, কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মাকোয়েজ ও রাশিয়ার সংবাদপত্র নভোয়া গেজেটাও ছিল।
পুরস্কার বাবদ একটি সোনার মেডেল ও ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার) পাবেন চলতি বছরের বিজয়ীরা। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এ পুরস্কার।
সূত্র;http://www.nobelprize.org/, বিডি নিউজ, বিবিসি।
ইগ নোবেল ২০১৫ : আগে হাসুন, তারপর ভাবুন :থিওরি এর ব্লগ।
নোবেল পুরস্কার-প্রাপ্ত তিউনিসিয়ান কোয়াট্রেট মডেলের গণতান্ত্রিক প্রতিস্ঠান বাংলাদেশে দরকার। চাদগাজীর ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫