কাজী হাসান
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভেষজ উদ্ভিদের বাগানটির জনক বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। জীবদ্দশায় তিনি গাজীপুরের পিরুজালীর ‘নুহাশ পল্লী’তে তিলে তিলে তা গড়ে তোলেন। পিরুজালী ঢাকা বিভাগের সবচেয়ে বড় গ্রাম। যারা ভেষজ উদ্ভিদের ওষধি গুণ নিয়ে গবেষণা করেন তাদের জন্য একটি পুণ্য কানন নুহাশ পল্লী। যে কারণে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আমাদের কাছে একজন পরম নমস্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য আমরা নুহাশ পল্লীতে স্যারের উদ্যোগে রোপিত গাছের বীজ থেকে জন্মানো কয়েকটি গাছের চারা আমাদের বৃক্ষ ও সংস্কৃতি বিষয়ক কেন্দ্র ‘সোনারং তরুছায়া’য় স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয়ের ২৭ বছর পূর্তির দিন ২০১৫ সালের ১২ জুন রোপণ করেছিলাম। চারাগুলো সেদিন আমার হাতে তুলে দেন তাঁর সহধর্মিনী ও শিল্পসঙ্গিনী মেহের আফরোজ শাওন। সেই গাছগুলো এখন বড় হয়েছে। গাছগুলো তিনি আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’য় এসে দেখে যান ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর। সেদিন তিনি ‘সোনারং তরুছায়া বৃক্ষ উৎসব ২০১৯ খ্রি.’ এ একজন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই গাছগুলো থেকে জন্ম নেয়া চারা আমরা আগ্রহী বৃক্ষপ্রেমীদের উপহার দিই ‘হুমায়ূন আহমেদ স্মারক বৃক্ষ’ নামে। এর মধ্যে কারিপাতা, স্ন্যাকপ্লান্ট, পান বিলাস গাছ উল্লেখযোগ্য। বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণবার্ষিকী প্রতি বছর দেশে ও দেশের বাইরে উদযাপিত হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে। কিন্তু তাঁর বৃক্ষপ্রেম ও উদ্যোগের কথা থেকে যায় অনালোচিত। আমরা তাঁর বৃক্ষপ্রেমকে গুরুত্ব দিয়ে ও আলোচনায় এনে তাঁকে সেই দিনগুলোতে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধাভরে।
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের ‘নুহাশ পল্লী’তে বৃক্ষের যে সমাহার ঘটিয়েছেন সেই ভূ-অঞ্চলে রয়েছে ব্রিটিশ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কোটস বাংলাদেশ লিমিটেড এর কম্পাউন্ড। ওই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের উৎপাদন কর্মকাণ্ডের বাইরে বৃক্ষরোপণসহ নানা পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেই প্রতিষ্ঠানের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের উপজেলার রসুলপুর গ্রামের সন্তান মুহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ। সম্প্রতি তিনি চাকরি জীবনের ২৫তম বার্ষিকী পূর্ণ করেছেন। সেই সাফল্যকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ ৭৪তম জন্মবার্ষিকীর দিনে মহান কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে উৎসর্গ করে তাঁর সৌজন্যে বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের ২৫টি গাছের চারা উপহার দেয়া হয়।
আমাদের 'সোনারং তরুছায়া'র 'বন্য চত্বর' এ আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমাদের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সাহিদ মোঃ লিটন। আজ তারও জন্মদিন ছিলো।
মহান কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ যেমন অনেক গাছের চারা রোপণ করেছেন তেমনি গাছ বিষয়ে তিনি গল্পচ্ছলে অনেক লেখাও লিখেছেন। তাঁর 'বৃক্ষকথা' বই থেকে একটি লেখার অংশ বিশেষ তুলে দিলাম। বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ'।
"এক ভোরবেলায় জনৈক ভদ্রলোককে দেখলাম ভ্রূ কুঁচকে নুহাশ পল্লীর ঔষধি বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর হাতে কলম এবং একটা নোটবুক। মাঝে মাঝে নোটবুকে কী সব লেখাও হচ্ছে। আমি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম। ভদ্রলোক হতাশ গলায় বললেন, আসল গাছটাই তো আপনার এখানে নেই।
আমি বললাম, আসল গাছ কোনটা?
আসল গাছ হলো বিম্বী। কী বাগান করলেন যেখানে বিম্বী নেই!
আমি বললাম, নামটা প্রথম শুনলাম।
ভদ্রলোক বললেন, বিম্বী হলো আমাদের দেশের ‘তেলাকুচা’। যার ফলের নাম ‘মাকাল’ ফল। এখন চিনেছেন?
মাকাল গাছ আসল গাছ?
অবশ্যই। ডায়াবেটিসের যম। তেলাকুচার তিনটা পাতা নিবেন। আগুনের তাপে একটু গরম করে দুপুরে খাবার পর খাবেন। আপনার ডায়াবেটিস যদি না সারে, আমার একটা কান কেটে তেলাকুচা গাছের কাছে পুতে দিয়ে যাব।
আমি বললাম, সেখান থেকে ‘কর্ণগাছ’ বের হবার কোনো সম্ভাবনা কি আছে?
ভদ্রলোক বললেন, আমি শিক্ষক মানুষ। নিজে রসিকতা করি না। অন্যে যখন করে, সেটাও পছন্দ করি না। তেলাকুচা গাছ সম্পর্কে যা বলেছি ঠিকই বলেছি। বইপত্র পড়ে দেখবেন। গাছ বিষয়ে কিছু জানেন না, বাগান বানিয়ে বসে আছেন।
ভদ্রলোক চলে চলে যাবার পর আয়ুর্বেদাচার্যের বই খুললাম। সেখানে সত্যি সত্যি লেখা---
‘অনেক সময় আমরা মন্তব্য করি, তেলাকুচা পাতার রস খেলাম, আমার ডায়াবেটিসের সুফল কিছুই হলো না। একটা বিষয়ে যোগে ভুল হয়ে গিয়েছে। এই রোগ তো আর একরকম দোষে জন্ম নেয় না। এক্ষেত্রে তেলাকুচা পাতা ও মূলের রস তিন চামচ করে সকালে ও বৈকালে একটু গরম করে খেতে হবে। এর দ্বারা রোগী তিন-চার দিনে সুস্থতা বোধ করবেন।"