পর্ব - ০৩
সুগন্ধি চাল আমদানি ও রপ্তানি পরিস্থিতি: - এ দেশে সুগন্ধি চালের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পাশাপাশি উৎপাদিত সুগন্ধি চালের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বিদেশিদের কাছে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রচলিত জাতগুলোর আকার ও আকর্ষণীয় সুগন্ধকরণে বিভিন্ন দামি খাবার তৈরিতে উপযোগিতা সুবিধার দিকগুলো বিবেচনায় এ দেশি সুগন্ধি চালের চাহিদা বহির্বিশ্বে প্রচুর রয়েছে। তারপরও পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভারতের লম্বা-সরু বাসমতি চালের বিদেশে যে একচেটিয়া বাজার ছিল এবং আছে তা কিছুটা হলেও ম্লান হয়নি বলা যায়।
বিচিত্র স্বাদ ও রুচির পরিবর্তন আনয়নে বিকল্প চাল হিসেবে এ দেশি সুগন্ধি চালের প্রতি আগ্রহ বিদেশিদের মাঝে বৃদ্ধি প্রবণতা তৈরি করা সম্ভব। ভ্রমণকারী ও স্থায়ী অস্থায়ী বসবাসকারী সহ কর্মরত যাত্রীদের বিদেশ ভ্রমণকালে কয়েক কেজি সুগন্ধি চাল কাটারিভোগ, কালিজিরা, সিলেটি বিরুইন, দুধ (চাটগাঁ) বিন্নি জাতের চাল সঙ্গে নেয়ার আগ্রহ অহরহ লক্ষ করা যায়। এ চাহিদা পূরণে সাধারণ রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি স্বনামধন্য দেশি প্রক্রিয়াজাতকারকরাও পিছিয়ে নেই। তাদের হরেক পণ্যের সঙ্গে এ দেশি সুগন্ধি চাল সুন্দরভাবে প্যাকিং করে তা রপ্তানি করতে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।
প্রবাসে বাজারজাত: - সুগন্ধি চাল রপ্তানির জন্য সরকারিভাবে বিদেশি বাজার সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা একান্ত দরকার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় সুগন্ধি চাল ও তা থেকে উৎপাদিত হরেক রকম খাবার প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হলে বিদেশি ক্রেতারা এ দেশি সুগন্ধি চালের প্রতি আরও আগ্রহী হবে। আমাদের বিদেশি মিশনগুলো দেশের বৈচিত্র্যময় সুগন্ধি চাল জনপ্রিয় করার বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এ সুগন্ধি চালের রকমারি খাবার উপস্থাপন করেও তারা ভোজন বিলাসীদের বিভিন্নভাবে আকৃষ্ট করতে পারে। ইউএন মিশনে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার ডিফেন্স অফিসিয়াল কর্মরত আছেন। তাদের প্রদত্ত দায়িত্ব পালন ছাড়াও তাঁরা বাংলাদেশী কালচার ও এদেশে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এদেশি সুগন্ধি চাল ও তা থেকে তৈরি রকমারি খাবার প্রচলন ব্যবস্থা নিয়ে তারাও অনন্য অবদান রাখতে পারেন।
যেহেতু সুগন্ধি চাল একটা নন - পেরিশেবল আইটেম, সেলফ লাইফ ৫-৭ মাসেরও বেশি, এ জন্য ‘জলজ পথে’ কম খরচে দেশি সুগন্ধি চাল রপ্তানি সুবিধাকে কাজে লাগানো সহজ। রপ্তানির জন্য সুন্দর আকর্ষণীয় মোড়ক ব্যবহার ও তাতে বাংলাদেশের উপযোগী ব্র্যান্ড ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি এ সুগন্ধি চালের গুণাবলি ও বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরির সংক্ষিপ্ত নিয়মাবলি সংবলিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্যাকেটের উপরে বা ভেতরে ছোট ফোল্ডার আকারে প্রদানের ব্যবস্থা নিয়ে ক্রেতা সাধারণকে সহজেই আকৃষ্ট করা যাবে।
চাল মিলিং করা: - এ দেশের প্রচলিত জাতের সুগন্ধি চাল মিলিং ব্যবস্থায় তেমন কোনো সমস্যা নেই। পাশাপাশি ঢেঁকি ছাঁটা সুগন্ধি চাল তৈরি করার প্রচলন এখনও মাঝে মাঝে দেখা যায়। দেশি পুরাতন মিল যা এ্যাংগেল বার দিয়ে তৈরি তাতেও দেশি সুগন্ধি চাল তৈরি করতে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। তবে বাসমতি ধরনের সুরু-লম্বা চাল (বাংলা মতি, ব্রিধান-৬৩) মিলিং করা এ দেশের পুরনো মডেলের মিলিং যন্ত্র (এ্যাংগেল বার বিশিষ্ট) দিয়ে সম্ভব হয় না। এ ধরনের বহু পুরানো মিলিং যন্ত্র ভারত অনেক আগেই সরকারিভাবে বাতিল করে আধুনিক অটো রাইস মিল সর্বস্তরে চালু করেছে। এ দেশে আধুনিক অটো রাইস মিল প্রচলন শুরু হলেও তার পাশাপাশি পুরাতন মডেলের চালের মিল এখনও রয়ে গেছে। বর্তমানে রাইস ব্রান থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন প্রচলন বাড়ছে। পুরনো মডেলের রাইস মিল দিয়ে এ ব্রান প্রাপ্তি সম্ভব হয় না। এসব গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বিবেচনায় ভারতের মতো একই পন্থা অবলম্বন করে পুরনো রাইস মিলগুলোর পুনর্বাসন উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
এ ধরনের প্রচার প্রচারণা ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে এ দেশের উৎপাদিত সুগন্ধি চালের ব্যবহার ও বাজার প্রসারিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিধায় তার ইচ্ছা বাস্তবায়নে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবারই দেশের ও দশের বৃহত্তর স্বার্থে তৎপর হওয়া অত্যাবশ্যক।
সুত্র:
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ