ইন্টারম্যাডিয়েটে এখন ICT কোর্স চালু হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার জুগারবার্গ উৎপাদনে নেমেছে। যৌবনপ্রাপ্তির সাথে সাথেই বাংলাদেশের ছেলেপুলেরা একেকজন GEEK হয়ে যাবে, না এটা GREEK না, GEEK । সেই মহৎ উদ্যোগ সাধনে ইন্টারম্যাডিয়েটেই C প্রোগ্রামিং, Database প্রোগ্রামিং, Web প্রোগ্রামিং ইত্যাদি ICT কোর্সে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
একদিন স্টুডেন্টকে C প্রোগ্রামিং পড়াচ্ছিলাম। স্টুডেন্ট হটাত জিজ্ঞেস করল, স্যার, ‘বস্তু প্রোগ্রাম’ কি? আমি তো আকাশ থেকে পড়বো পড়বো করছিলাম, কিন্তু গ্র্যাভিটির অভাবে পারছিলাম না। কোন ভাবে চিন্তাভাবনা মাটিতে রেখে বললাম, কম্পিউটার তো আসলে আমাদের কথা বুঝে না, তাকে বুঝানোর জন্য Compiler প্রায় ইংলিশে লেখা আমাদের প্রোগ্রামকে কম্পিউটার বুঝে এমন একটা প্রোগ্রামে রূপান্তর করে যাকে আমরা মুলত Object প্রোগ্রাম (জ্বি, Object প্রোগ্রামকেই এখানে ‘বস্তু প্রোগ্রাম’ বলা হয়েছে) বলি যা শুধুমাত্র ১ ও ০ নিয়ে হয়। আমি একথা বলে নিজেই অবাক। আমাকে উল্টো অবাক করে দিয়ে স্টুডেন্ট বলল, স্যার Compiler মানে কি? ‘সংকলক’- বলে আমি থামলাম। নিজেকে হটাত করে বাংলা একাডেমির কেউ একজন মনে হচ্ছিল। কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট সকল টার্ম বাংলায় অনুবাদ করলে কি হবে সেটা মনে মনে ভাবছিলাম আর ঘামছিলাম।
পড়ানো শেষে বাসায় আসলাম। ছোটবোনকে জ্যামিতি দেখাচ্ছিলাম। সে হটাত জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া, Triangle মানে তো ত্রিকোণ হওয়া উচিত, কিন্তু ত্রিভুজ হল কেন? আর যদি ত্রিভুজই হবে, তবে Quadangle (নট Quadrangle) অথবা Tetraangleও তো চতুর্ভুজ হতে পারতো, Quadrilateral হল কেন? আমি উত্তর না দেওয়াই সমীচীন মনে করলাম।
পড়ানো শেষে আমি বসে বসে ইংরেজি শব্দগুলোর বাংলা নাম কিভাবে আসল তা ভাবতে লাগলাম। ভেবে যা পেলাম তা খুবই ভয়ংকর। বাঙালিরা কোথায় পারিভাষিক অর্থ ব্যবহার করা উচিত, কোথায় আভিধানিক অর্থ ব্যবহার করা উচিত অথবা কোথায় মূল শব্দ অপরিবর্তিত রাখা উচিত তাতে মনোযোগ না দিয়ে মনোযোগ দিয়েছে কোথায় পাণ্ডিত্য দেখানো উচিত। Obtuse Angle এর বাংলা করা হয়েছে স্থূলকোণ। স্থূল মানে কখনো মোটা, কখনো অশ্লীল, আবার কখনো বা বিশ্রী। Google ঘেঁটে দেখা গেল Obtuse এর মানে কোনভাবেই ‘স্থুল’ শব্দটির সাথে যায় না। আর Obtuse এর প্রতিশব্দগুলো তো আরও ভয়ংকর, চরম ন্যাস্টি। তাও এই ভেবে সান্ত্বনা পেলাম, ভাগ্যিস Obtuse Angle মানে স্থূলকোণ হয়েছে, মোটাকোণ হয়নি, অশ্লীলকোণ হয়নি।
তারপর হটাত করে আমরা বাংলাদেশিদের পাণ্ডিত্য জাহিরের একটা নমুনা (কেউ আবার ‘নমুনা’ বলতে pK মনে করবেন না) ঘটনা মনে পরে গেল। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমাদের এক ফ্রেন্ড ছিল বাবলু। সে মোটেও ফাঁকিবাজ ছিল না, ফাঁকিবাজি হটাত করে বাবলু হয়ে গেছিল। স্যার একদিন জুয়েলকে জিজ্ঞেস করল, বল তো ‘তাসের ঘর’ মানে কি? পাশেই বাবলু বসে ছিল। সে বলে উঠলো, ‘স্যার যেখানে তাস দেয়া হয়’। সে আসলে বলতে চেয়েছিল ‘স্যার যেখানে তাস খেলা হয়’। আমি মনে মনে ভাবলাম, স্যার বেঁচে গেছে, ভাগ্যিস জিজ্ঞেস করেনি, বল তো ‘বাঁশের ঘর’ মানে কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:২২