নিউক্যাসল (Newcastle) ইংল্যান্ডের সর্ব উত্তরের সবচেয়ে বড় এবং জনবহুলল শহর। লন্ডনের পর আমার কাছে বৃটেনের সবচেয়ে পছন্দের শহর। পাহাড়ি উঁচুনিচু টিলা, ছিমছাম গোছানো, সুদৃশ্য আর পরিচ্ছন্ন শহর নিউক্যাসল। টাইন নদী শহরটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে। টাইন নদীর উপরে সুদৃশ্য বেশ কিছু ব্রিজ আছে; এগুলো শহরের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে, শহরটি 'নিউক্যাসল আপন টাইন' হিসাবে পরিচিত। নিউক্যাসল ফুটবল ক্লাব বিশ্ব বিখ্যাত; এটি নিউক্যাসল শহরের আইকন। লন্ডন থেকে নিউক্যাসল এর দূরত্ব ৪৫৫ কিলোমিটার। বাস, ট্রেন এবং বিমানে লন্ডন থেকে নিউক্যাসল যাওয়া যায়। লন্ডনের কিংক্রস স্টেশন থেকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোগামী ভার্জিন স্পীড ট্রেনে মাত্র ৩ ঘন্টা ১০ মিনিটে নিউক্যাসলে পৌঁছা সম্ভব। ট্রেনে ভ্রমণ নিয়ে মজার দু'টি ঘটনা আছে সেগুলো পোস্টের শেষ অংশে বলবো। কয়েকবারের নিউক্যাসল সফরে বেশ কিছু ছবি তুলেছি; সেসব ছবি থেকে প্রতিযোগিতার জন্য ১২টি ছবি নির্বাচন করলাম।
(১) (উপরে দেওয়া ছবি) এটি বিখ্যাত 'নিউক্যাসল ক্যাসল'। নিউক্যাসলের সবচেয়ে পুরোনো এবং বিখ্যাত ক্যাসল। নিউক্যাসলের অন্যতম আকর্ষণ এই ক্যাসল দেখতে প্রতিদিন অসংখ পর্যটক আসেন। জে কে রাউলিং এর হ্যারি পটার মুভির শুটিংয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই ক্যাসেলে হয়েছে।
(২) টাইন নদীর উপর নির্মিত সুদৃশ্য 'মিলেনিয়াম ব্রিজ'। ছোট ছোট জাহাজ চলাচলের জন্য ব্রিজটার মাঝখান উম্মুক্ত। জাহাজ আসলে ব্রিজটা দুই দিকে আলাদা হয়ে যায়। অনেকটা লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজের মতো। গুগল ম্যাপে ব্রিজের এই ছবিটা সংযুক্ত করেছিলাম; এ পর্যন্ত ১৭ লক্ষের উপরে ভিউ হয়েছে।
(৩) টাইন নদীর সবচেয়ে উঁচু ও পুরাতন 'হাই লেভেল ব্রিজ'। ১৮৪৯ সালে তৈরী ব্রিজটা কুইন ভিক্টোরিয়া উদ্ভোধন করেন। নিউক্যাসলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনার একটি হলো এই রেল সেতু।
(৪) শান্ত টাইন নদীর তীরের সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে। নর্থ সি থেকে দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার হলেও নদীতে কোন দূষণ নেই। টলটলে স্বচ্ছ পানিতে তাকালে নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। কোন প্রকার ভাসমান আগাছা নেই। সারাদিন সাতরালেও ক্লান্ত লাগবে না। যদিও নিউক্যাসল ব্রিটেনের অন্যতম শীতল শহর।
(৫) নিউক্যাসল থেকে হাই লেভেল ব্রিজের মাঝামাঝি চমৎকার একটি দৃশ্য। অনেকটা পার্কের মতো দেখতে হলেও এটি কোন পার্ক নয়।
(৬) টাইন হার্বার ব্রিজ।
(৭) নিউক্যাসলের অন্যতম আকর্ষণ 'এনজেল অফ নর্থ'। গেটশেড পার হয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই হাইওয়ের পাশে সুবিশাল এই এনজেল দেখতে পাওয়া যায়। এটি পুরোপুরি স্টিলের তৈরী। ১৯৯৮ সালে স্থাপিত এই স্ট্যাচু হলো ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ।
(৮) আমার কাজিনের বিয়েতে সাজানো থাল। এতে বিরানির সাথে অনেকগুলো সিদ্ধ ডিম এবং একটি চিকেন রোস্ট।
(৯) নিউক্যাসল সিটি সেন্টার (নর্থ ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শপিং) এর বহির্গমণ পথের চমৎকার একটি দৃশ্য।
(১০) নিউক্যাসল স্কাই লাইন।
(১১) এগারো শতাব্দীতে তৈরি সেন্ট নিকোলাস চার্চ। নিউক্যাসলের পাশেই এটির অবস্থান।
(১২) টাইন নদীর তীরে অবস্থিত 'বাল্টিক সেন্টার।' এটি মূলত একজিবিশন সেন্টার। এছাড়া এখানে অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ২০০২ সালে এটি নতুন করে নির্মিত হয়। এটি ইংল্যান্ডের চ্যারিটি সংস্থা হিসাবে তালিকাভুক্ত।
পোস্টের শুরুতে বলেছিলাম লন্ডন থেকে নিউক্যাসল ট্রেন ভ্রমণে দু'টি মজার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবো। লন্ডন থেকে রিটার্ন টিকেট সহ নিউক্যাসলের ভাড়া ১২৩ পাউন্ড। যথারীতি নিউক্যাসল থেকে ফিরতে আমার রিটার্ন টিকেট ছিল। যাওয়ার দু'দিন পর রিটার্ন টিকেট দুপুর ২ঃ৫৯ মিনিটে। আমি স্টেশনে আসতে এক মিনিটি লেট! এমনকি ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছে ট্রেনে হাত বুলিয়েও কোন লাভ হয়নি। ততক্ষণে ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। চেয়ে চেয়ে ট্রেনের চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখলাম। পরে স্টেশন মাস্টারকে অনেক আকুতি মিনতি করেও লাভ হয়নি। ১২৩ পাউন্ডের মাশুল দিয়ে এক ঘন্টা পরে লন্ডনের ট্রেন ধরলাম। কাকতালীয়ভাবে পরের যাত্রায়ও একই ভুল। এবার জ্যামের জন্য স্টেশনে পৌঁছাতে দু'মিনিট লেট! ততক্ষণে ট্রেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এবার অবশ্য স্টেশন মাস্টারকে তেল দিতে গেলাম না! বুদ্ধি খাটিয়ে পরের ট্রেনে উঠে পড়লাম। ঠিক ৩০ মিনিট পর গোলগাল চেহারার এক ভদ্রলোক টিকেট চেক করতে আসলে আমি চুপচাপ টিকেটখানা হাতে ধরিয়ে দিলাম। তিনি বারবার বলছিলেন, তোমার ট্রেন তো এটা না, তাইলে তুমি এই ট্রেনে কেন? আমি ইশারায় বুঝালাম আমি ইংরেজি বুঝি না, এই দেশে নতুন; তাই টিকেটে লেখা ট্রেনের টাইম বুঝতে পারিনি! ভদ্রলোক বলে কথা; বেশ কিছুক্ষণ মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝালেন এমন ভুল যেন আর না করি, তিনি আমাকে এই যাত্রায় কোন প্রকার জরিমানা না করে ছেড়ে দিলেন। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম!
তৃতীয়বার? না, এবার আকাশ ভ্রমণ।
ছবিগুলো আমার SAMSUNG NX300 ক্যামেরায় তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:০২