মোসারাত এবং আনভীর। অনেক চেষ্টায়ও নাম দু'টি ঠিকটাক উচ্চারণ করতে পারি না। আমি জানি না অন্যকারো বেলায় এমনটি হয় কিনা! মোসারাতকে নুসরাত এবং আনভীরকে তানভীর উচ্চারণ করি। তবে পরীমনি নামটি উচ্চারণ করতে কখনো কোন সমস্যায় পড়িনি। ছোটবেলা থেকে পরীদের নিয়ে আমরা এতো রুপকথা শুনেছি যে এসব প্রজাতি নিয়ে অন্যরকম আবেগ কাজ করে। আর সানি লিওনি? না এই নামটিও খুব একটা অপরিচিত নয়! উচ্চারণও সহজ।
'মোফাসাঁ'। বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী এই লেখক, যাকে ছোট গল্পের প্রবাদ পূরুষ বলা হয় তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৪২ বছর! এই সামান্য সময়ে তিনি বিশ্বসাহিত্যকে উজাড় করে দিয়ে গেছেন। তাঁর লেখা 'নেকলেস' গল্পটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা গল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। প্রিয় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বেঁচেছিলেন মাত্র ২১ বছর! একুশটি বসন্ত পাওয়া এই কবি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন চমৎকার সব কবিতা দিয়ে।
মোসারাতের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে সর্বশেষ সংবাদে প্রকাশ, তার খাবারের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে অজ্ঞান করে, ফ্যানে ঝুলিয়ে সুইসাইড নাটক বানিয়ে পাঁচ ঘন্টারও কম সময়ে কার্গো ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে দুবাই পালিয়ে যায় আনভীর। আর কলকাতা থেকে চিত্রনায়িকা পরীমনি উড়াল দিয়ে দুবাইয়ে আনভীরের সাথে একই হোটেলে/রুমে উঠেন এবং আনভীরের বিলাসবহুল প্রাইভেট বোটে দু'জনে একান্তে সময় কাটান।
এই মৃত্যু নিয়ে 'ভাসুর রক্ষা পরিষদ' বড়ই ভাবলেশহীন! প্রথমদিন তো নামই মুখে আনেনি! এমন পরহেজগার ভদ্র বউ এখনো আছে? এই পরিষদে নেতৃত্ব দেওয়া লেখক/সাংবাদিক জাতীয় সব ইস্যু নিয়ে মুখের ফেনা, চোখের চনা একাকার করে দিলেও দুধের শিশু ভাসুরকে নিয়ে কোন রাও নেই! বাহ, কত ভক্তি।
২১ বছরের মোসারাত ৪২ বছর বয়সী আনভীর নামক একটি ভয়ঙ্কর মাফিয়ার লালসার শিকার হয়ে পৃথিবীর মায় সাঙ্গ করে চলে গেল। মোসারাতের প্রতিভা ছিল, ভালো ছবি আঁকতো। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য না হোক তাতে কি? উপযুক্ত গাইড লাইন পেলে, সুস্থ পরিবেশ পেলে একজন সফল চিত্রশিল্পী হতে পারতো। মাত্র ১৫ বছর বয়সে যার মাথার ছায়া বাবা-মা পৃথিবীকে গুডবাই জানিয়ে চলে গেছেন তার কাছে পৃথিবীকে নতুন করে জানার/চেনার সুযোগ খুব একটা ছিল না। বয়সের সাথে রূপ আর সৌন্দর্য বাড়লেও নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগানোর সুযোগ হয়নি তার। ৪২ নামক শকুনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর লালসা তাকে অন্ধকারে তলিয়ে দিয়েছে। হয়তো, বাপ-মা হারা এই অসহায় মেয়েটি ৪২শে নির্ভরতা খুঁজেছিল। তাকে সত্যিকারে ভালোবেসে একটি শান্তির নীড় খুঁজছিল। কিন্তু শকুনটি তাকে একটি পণ্য ছাড়া কিছুই ভাবেনি। কারণ, এমন পণ্য তার টাকা আর ক্ষমতার কাছে খুবই নগণ্য। এরা টাকা দিয়ে শরীর কিনে, মন নয়।
পরীমনিরা হচ্ছে পাকা খেলোয়াড়। এসব বিয়াল্লিশ, বিরাশিরা তাদের প্রতিভার কাছে নাকানিচুবানি খায় প্রতিনিয়ত। আজ আনভীর তো কাল আনভীরের বাপ! সবাইকে ম্যানেজ করার দারুণ প্রতিভা তাদের। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা অভিনয়ের পাশাপাশি বাজারি ডিমান্ডের সাথে পণ্য হিসাবে নিজেদের উপস্থাপন করে দারুণভাবে। কাস্টমার টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হয় তাদের অন্দরমহলে। ইদানিং নাদুস নুদুস গরুর চামড়ার দাম মাত্র ১০০ টাকা হলেও পরীমনিদের চামড়ার দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তবে, মৃত্যুর পর গরুর চামড়ার বহুবিধ ব্যবহার হলেও পরীদের চামড়া শাপ-বিচ্ছুর পেটে যায়। ঢাকায় কোটিপতির সংখ্যা যত বাড়বে চামড়ার দোকানদারদের চাহিদা ততো বাড়বে।
সানি লিওনি ক্যামেরার সামনে ন্যুড হয় সবাইকে জানিয়ে আর পরিরা পর্দার আড়ালে ন্যুড হয় টাকার সামনে। তবে সততার দিক থেকে তুলনা করলে সানি লিওনি কিন্তু অনেক এগিয়ে। কল্পনার পরীদের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেও তারা অবিবাহিতা ভার্জিন।
ফটো ক্রেডিট-
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫