করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতার পূর্বে এদেশে ICU (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) এর সংকট নিয়ে খুব একটা শোরগোল শোনা যায়নি। সাধারন নাগরিক ধরেই নিয়েছিলেন জীবনের সংকটময় মুহূর্তে নাগরিক হিসাবে ICU সুবিধা পাওয়ার অধিকার কিংবা যোগ্যতা তাদের নেই; এটা শুধু পয়সাওয়ালাদের উচ্চবিলাস মাত্র। দেশের সরকারি হাসপাতালে ICU সুবিধা নেই বললেই চলে; হিসাব করলে সারাদেশে মোট বেড কয়েকশো হবে মাত্র! এই সুযোগে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ICU বাণিজ্য ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে দিনকে দিন। কোন কোন প্রাইভেট হাসপাতালের একদিনের ICU খরছ (ঔষধ-পথ্য সহ) চল্লিশ থেকে ষাট হাজার টাকা। আর লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন হলে তা লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায় নিমিষেই!
সরকার আসে, সরকার যায়; মন্ত্রী-সচিব, উজির-নাজিরেরা দেশে বিদেশে হাজার কোটি টাকার সম্পদের এভারেস্ট বানায়; কিন্তু ICU সেবা কখনো সাধারন নাগরিকের হাতের নাগালে আসে না। এরা টাকা খেয়ে একটার পর একটা বেসরকারি হাসপাতাল অনুমোদন করে। ডাক্তারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারি চাকরির পাশাপাশি এসব হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক হন। ফলে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে রোগীদের আইসিইউতে ভর্তি হতে বাধ্য করেন, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে রোগীদের পকেট কাটেন।
ভিআইপিরা সর্বদা নিজেদের চেক-আপের জন্য দৌড়ান সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, চেন্নাই, লন্ডন। এখন করোনা মহামারিতে যেতে পারছেন না বলেই খবরের শিরোনাম হচ্ছে 'হায় হায় সব গেলো, ভিআইপিদের জন্যও দেশে কোন ICU বেড খালি নেই'! এই তথাকথিত ভিআইপিদের জন্য এই দেশ স্বাধীন হয়নি, এরা নিজেরা যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেনি। দেশটি স্বাধীন করেছে এদেশের খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ। সংবিধানে সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বললেও বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই।
গত এক বছরে সরকারি হাসপাতালে ICU বেড বাড়ানোর কথা ছিল বহুগুণ, কিন্তু সরকার এ বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। আমরা সাধারন জনগন যেহেতু ICU সুবিধা পাব না সেহেতু ICU না পেয়ে কোন তথাকথিত ভিআইপি মরলো তাতে আমাদের কিছুই যায়-আসে না।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়দি সামনে এনে আলোচনা করার দরকার ছিল। প্রয়োজন ছিল; কেন এতো বছরেও দেশের ভিত্তি মজবুত হয়নি? কিংবা কেউ করেনি? তা নিয়ে আলোচনা করা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজানো। বাস্তবে এসবের কিছুই হয়নি। সরকার ছিল নিজেদের গদি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে ব্যস্ত। রিজেন্টের শাহেদ, হেফাজতের মমিনুল এরাই সরকারের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। নাসিম এদেশের স্বাস্থ্যখাতে ভয়ঙ্কর লুটপাট করেও চিরজীবী হতে পারেনি, আসলামও হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে, শতশত একর খাস জমি দখল করে চিরজীবী হতে পারেনি। করোনার থাবা এদের ঘাড় মটকে দিয়েছে।
ফটো ক্রেডিট-
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৪