(ঘটনাঃ ১)
মনে পড়ে, খুব ছোটবেলায় পাশের বাড়ির একজন প্রতিবন্ধীকে কটাক্ষ করায় আম্মার হাতে বেদম মার খেয়েছিলাম সেদিন। মার দিয়ে আম্মা আমাকে বলেছিল,
"বাবা, আজকে তুই সুস্থ আছিস বিধায় বুঝতেছিস না, সুস্থতা যে আল্লাহ্র কতো বড় নেয়ামত!! তোকে আমাকে সবাইকেই তো একই আল্লাহ সৃষ্টি করছে। তোর আমার মতো এইসব প্রতিবন্দিরাও তো সেই এক আল্লাহ্রই বান্দা। তুই সুস্থ স্বাভাবিক, এই অহংকার থেকে যদি আজকে সেই আল্লাহ্র সৃষ্টি আরেক বান্দাকে কটাক্ষ করিস, সেটা শুনতে পেয়ে যদি সেই বান্দা খুব কষ্ট পায়, নিশ্চিত তার কষ্টে আল্লাহও কষ্ট পাবেন। কারন, তাকে তো এমন বানিয়েছেন আল্লাহই। আর সেই কষ্ট থেকে রাগান্বিত হয়ে তিনি যদি হুট করে তোকেও সেই প্রতিবন্ধির মতো করে দেন, তুই কি কিছু করতে পারবি??"
ভীষণ মার খেলেও, আম্মার সেদিনের কথাগুলো দাগ কেটে গিয়েছিলো আমার মনে। এরপর থেকে যখনি কোনও প্রতিবন্ধীকে দেখি, মনে মনে প্রার্থনা করি "আল্লাহ তুমি এদের ভালো করে দাও, এবং আর কাউকে এমন প্রতিবন্ধী করো না!!" আর কটাক্ষ করার কথা তো মাথাতেই আসে না...!!
***
(ঘটনাঃ ২)
ছবির ছেলেটি, দেহন গ্রামের বিজিবি সদস্য শমসের আলীর ছেলে আমির হামজা। ছেলেটি সদর উপজেলার দেহন রওশনপুর দাখিল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্র। ছেলেটি এতোটাই মেধাবী যে, কোনো বিষয়ে একবার ধারণা নিলে তা পরে হুবহু তুলে ধরতে পারে। সবাই বলে, এটা তার বিশেষ গুণ।
আমিরের সম্বন্ধে তার এলাকাবাসীরা জানায়, আমির ছোট থেকেই খুব মেধাবী। তবে তার চেহারা কিছুটা এলিয়েনের মতো বিধায় তার সঙ্গে এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে ভয় পেত। এ কারণে আমির সব সময় বাড়িতেই থাকত।
তবে আমিরের মা তার ছেলে সম্বন্ধে বলেন, "আমির আমাদের পরিবারের লক্ষ্মী। আমরা পরিবারের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আমিরের সঙ্গে কথা বলি আগে। কারণ আমির সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়।"
উপরের ছবিটি দেখে এতক্ষণে সবাই নিশ্চয়ই বুঝে ফেলছেন, আমিরকে নিয়ে আমার এতগুলো কথা বলার কারনটি!!
হ্যা, সেই আমির এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অন্য দশজন পরীক্ষার্থীর মতো। সে খবর পেয়ে "দৈনিক কালেরকন্ঠ" পত্রিকার রিপোর্টাররা ছুটে যান তাকে নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য। করলেন রিপোর্টও। কিন্তু সেই রিপোর্টে তারা আমিরকে দেশের একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে পরিচয় না করে দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেন এভাবেই,উপরের ছবির মতো একজন "এলিয়েন" হিসেবে।
যার একমাত্র কারন হল, "এলিয়েন পরীক্ষা দিচ্ছে এমন হেডিং দেখা মাত্রই পাঠকরা আকৃষ্ট হবে বেশী, এবং নিউজটিও পড়া হবে বেশী, আবার পত্রিকাটিও তুলনামূলক ভাবে বিক্রিও হবে বেশী।"
একটু ভাবুন তো, "এলিয়েন বলে ডাকতো দেখে যে প্রতিবন্ধী ছেলেটি এলাকার লোকদের থেকে নিজেকে আড়াল করে ঘরের কোনে পড়ে থাকতো, সেই ছেলেটি যখন আগামীকাল ঘুম থেকে উঠে দেখবে পত্রিকার মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ বাসী তাকে এলিয়েন হিসেবে চিনছে, তখন ছেলেটির মানসিক অবস্থাটা কেমন হবে...??" জানি, আপনি আমি কেউই এর জবাব খুঁজে পাবো না।
মাঝে মাঝে খুবই অবাক হয়ে যাই কিছু সাংবাদিকদের এমন কর্মকাণ্ডে, "দু'টাঁকা বেশী পাওয়ার লোভে, বসের নিকট একটু ভালো হওয়ার লোভে তারা কতোটা স্বাভাবিক ভাবে একজন মানুষের জীবনকে নিয়ে এভাবে নিষ্ঠুরভাবে খেলতে পারে...!!"
একটা সময় জ্ঞানী গুনি, মুরুব্বীরা, শিক্ষকরা বলতো, "ছোট থাকতেই বাচ্চাদেরকে পত্রিকা পড়ানোর অভ্যাস করাও, এতে তারা অনেক কিছু সিখতে পারবে, এতে খুব দ্রুত তাদের মানসিকতার বিকাশ ঘটবে।"
কিন্তু বর্তমানে দিনের পর দিন যেভাবে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে, তাতে করে সেই পত্রিকা পড়ে আমাদের পরবর্তী পজন্মের মানসিকতার কেমন বিকাশ ঘটবে, বলতে পারেন??
তাই আসুন, "আজ আমরা উপরওয়ালার নিকট দেশের এমন সকল অসুস্থ সাংবাদিকদের মানসিক সুস্থতা কামনা করি"।
(বিঃদ্রঃ পরিশেষে কালের কন্ঠ পত্রিকাকে ধন্যবাদ জানাই এ কারনে যে, নিউজটি তাদের অনলাইন পেজে প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট পড়ে সচেতন পাঠকদের তীব্র সমালোচনা মুখে পড়ে তাদের ভুল বুঝতে পারেন এবং শিরোনামটি পরিবর্তন করতে বাধ্য হন!!)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৫