যদি কখনো হঠাৎ করে আপনার কানের কাছে এসে মৃদুস্বরে বলি,
আসুন, আজ আমরা এমন একজন চোরকে স্যালুট করি, “যে চোর দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত ট্রেনে ট্রেনে চুরি করে বেড়াচ্ছে। হাতে টান পড়লেই এ চোর তার দলবল নিয়ে চুরি করতে বেরিয়ে পরে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস কিংবা ঢাকা রাজশাহী অভিমুখী সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের মতো অভিজাত রেলগাড়িগুলোতে এক বেলায় কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতে পারে সেই চোরের বাহিনী।“ -এইটুকু শুনতেই দেখা যাবে, ভুরু কুচকে আমার দিকে তাকাবেন আপনি। বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে উঠবেন, ‘মিয়া, আপনার মাথাটা নিশ্চয়ই গেছে! নইলে এমন চোরকে স্যালুট করার আহবান কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করতে পারে!!
বিশ্বাস করুন,
আপনার এমন প্রতিউত্তরে আমি মন খারাপ করবো না বরং হাসিমুখ নিয়ে আগের থেকে দৃঢ় ভাবে জবাব দিব, হ্যা পারে, আপনারা কেউ স্যালুট না করুন, অন্তত আমি স্যালুট করবো এমন একজন চোরকে। কেন জানেন?
কারন,
- ৫৫ বছর বয়সি এই চানমিয়া চোর, তার চুরির জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চুরির টাকাগুলো সমাজ সেবার কাজে ব্যয় করে গেছেন।
- এ চোর এ পর্যন্ত তার গ্রামের শতাধিক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তার চুরি করা টাঁকায়।
- অনেক পঙ্গু ব্যাক্তি হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতে পারছেন কেবলমাত্র এই চোরের চুরি করা টাঁকায়।
- কমলাপুর, জয়দেবপুর রেলস্টেশনের আশেপাশের গরীব ব্যাক্তিদের অসুখবিসুখের কথা শুনলেই এই চোর তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, টাঁকা দেন তাদের ওষুধ কেনার জন্য।
- এ চোর গরিবের পকেট কাটেন না। এমনকি, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা বা এ জাতীয় বড় ধর্মীয় মহাসমাবেশে অংশগ্রহণকারীদেরও তিনি কোনো ক্ষতি করেন না। বরংচ, অনেক সময় ভুলবশত গরিব মানুষের টাকা চুরি করে ফেললেও সুযোগ থাকলে তা ফেরত দিয়ে দেন।
এসব শুনে এতক্ষণে হয়তো আপনি বলবেন আমাকে, বোকা নাকি আপনি!!
যত যাই কিছু হোক এ জন্য তো আর একজন চোরকে স্যালুট করা যায় না মশাই! এগুলো সব মানুষের মেরে দেয়া টাঁকায় করা, চুরির টাঁকায় মহৎ কাজের আবার মূল্য কিসের? ব্যাটায় একটা খারাপ কাজ করেছে, আরেকটা ভালো কাজ করেছে। ভালো আর খারাপে কাঁটাকাটি। সুতরাং কাজ = ০।
কিন্তু, না। সত্যি বলছি, আপনার ‘বোকা’ সম্বোধন শুনেও বিন্দুমাত্র রাগ করবো না আমি, হাসিমুখে আগের থেকেও আরও দৃঢ় ভঙ্গিতে এ চোরকে স্যালুট করার কথা বলে যাবো আপনাকে। কেন জানেন?
কারন,
যেই হাত দিয়ে আপনি আমি এদেশের “সাড়ে ৪ হাজার কোটি” টাঁকার চুরি কে কোনও চুরিই মনে না করা ব্যাক্তিকে(চোর!) স্যালুট করতে পারি!!
দেশের মানুষের কোটি কোটি টাঁকা চুরি করেও, যেসব চোররা কারাগারে না গিয়ে বিলাসবহুল গাড়িতে ঘুরে ঘুরে প্রতিনিয়ত আমাদের চোখ রাঙ্গিয়ে বেড়াচ্ছেন, আমরা যদি তাদের চুরিগুলোকে মেনে নিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকতে পারি!!
চুরির টাঁকায় উপরের সেই চোরের মতো কোনও ভালো কর্ম না করে বরং চুরির টাঁকা গুলো ব্যয় করে কিভাবে আমাদের থেকে আরও চুরি করা যায় সেই চিন্তায় মগ্ন থাকেন দেশের যে সমাজপতিরা, আমাদের শক্ত হাতগুলো দিয়ে যদি আমরা সেসব চোরদের চপেটাঘাত না করে, স্যালুট দিয়ে যেতে পারি!! দেশ সমাজের অভিভাবক হিসেবে যদি তাদের মেনে নিতে পারি!!
তবে কেন এ দেশে ‘চান মিয়ার’ মতো এমন পরোপকারী একজন চোরকে স্যালুট দিতে আপনার হাতটা আজ এতো কনফিউজড??
কি ভাবছেন এখনও? স্যালুট করবেন কি, করবেন না!!
সমস্যা নাই, আপনি ভাবতে থাকুন। কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আমার হাত কপালের সামনে নিয়ে সেই ‘চান মিয়া’ চোরের উদ্দেশ্যে জোর গলায় বলছি...
স্যালুট তোমায় হে ‘চান মিয়া চোর’!!
দেশ সমাজের অভিভাবকগন তাদের যে দায়িত্ব গুলো করতে পারছেন না বা করার চেষ্টাই করছেন না , একজন চোর হয়েও নির্দ্বিধায় সে কাজগুলো করে দিয়ে তুমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিলে যে, দেশ সমাজের সেসব অভিভাবকগনের তুলনায় তোমার মনুষ্যত্ব অনেক অনেক উচুমানের।। সত্যিকার অর্থে তাদের থেকে অনেক অনেক উঁচু তোমার মর্যাদা।
[বিঃদ্রঃ জামালপুর নিবাসী চান মিয়া চোরকে নিয়ে আজ ০৬.০২.২০১৪ তারিখে কালেরকন্ঠ পত্রিকায় ছোট্ট একটি রিপোর্ট দেখি, সেটার উপর ভিত্তি করেই এই লিখাটুকু লিখা]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩১