আমি জানিনা এ ব্যাপারে কি লিখা যায়? রাগে গাঁ কাপলে মুখ ভরে গালি গালাজ করলে রাগ একটু কমে। গালি গালাজের উদোম কোন সুযোগ কি পাব? সামুর মডুরা কি এলাউ করবে, নোংরা নোংরা ঘিন ঘিনে ভাষায় গালি গালাজ করে কারো জাত গুষ্টির মায়েরে বাপের খেতা উদ্ধার করা? একবারের জন্য এলাউ করলে শান্তি পেতাম।
মঙ্গলবার বিকালে নাকি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেসনের একটা দল উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি ছবির হাটের সাজানো অনেক শিল্পকর্মও ধ্বংস করা হয় এই অভিযানে। পরবর্তিতে জানতে পারি, ওই অভিযানে অন্তত দুই হাজার চিত্রকর্ম নষ্ট করা হয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. অতুল মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেছে, ফুটপাতসহ রাস্তার আশেপাশের অবৈধ স্থাপনা পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এজন্যই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে, এই ছাগলের বাচ্চারা হয় নতুন আমদানী হয়েছে নতুবা কেউ এই ডগিদের ছবির হাটের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। এই দেশে তো কাজ দেখানোর জায়গার অভাব, তাই কাজ দেখাতে আসছে। উনারা কি চোখ পকেটে নি্যে ঘোড়েন? তারা দেখে্ননা-
১. মতিঝিলে দৈনিক বাংলা থেকে ঐদিকে মধুমিতা পর্যন্ত পুরা এরিয়ার ফুটপাত কিভাবে দখল হয়ে আছে?
২. মিরপুর ১০ থেকে ১ পর্যন্ত রাস্তা?
৩. ফার্মগেটের রাস্তাগুলা?
৪. পুরা গুলিস্তানের রাস্তা আর ফুটপাত-ই তো বাজার। তারমধ্যে আওয়ামী অফিস আর গোলাপ শাহ মাজার লিঙ্ক রোড, দুইটাই তো বন্ধ করে দখল করে বাজার বানানো হয়েছে?
৫. খিলগাও থেকে গোড়ান এর ফুটপাত?
৬. তালতলা মার্কেট থেকে পল্লিমা স্কুল?
৭. সায়েদাবাদের ফুটপাত?
৮। নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত ফুটপাত?
৯. মৌচাক থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ফুটপাত?
১০. আরো অনেক রাস্তা ও ফুটপাত?
এত জায়গা রেখে তাদের নজর পরল ঐ ছবির হাটে? মানুষ যেখানে একটু শ্বাস নেবার জন্য যায়? পুরো সোহরাওয়ার্দি উদ্যান তো সরকারে কল্যানে গাঞ্জাপট্টি আর পতিতালয়ে পরিনত হয়েছে। সেই নোংরার মধ্যেও ছবির হাট কিছুটা হলেও শিল্পী ও সাধারনকে আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ছিল। তাহলে শৈল্পিক এই ছবির হাটের দিকে তাদের নজর গেল কেন?
হাটুরে কামরুজ্জামান স্বাধীন-এর ভাষায়, “শুনেছি সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সাংস্কৃতিক বলয় বানাতে চায়। তাদের কাছে জানতে ইচ্ছা করে শিল্পকর্ম ধ্বংস করে তারা কিসের সাংস্কৃতিক বলয় বানাতে চায়? (তথ্যঃ bdnews24.com)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বিপরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশদ্বারে চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিল্পপ্রেমী মানুষের আড্ডায় ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এই ছবির হাট ২০০৩ সালে। তখন থেকে ছবির হাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাধারন আর শিল্পপ্রেমী মানুষের আড্ডা বসে আসত। আর প্রতি শুক্রবার প্রদর্শিত হত শিল্পীদের নিজস্ব শিল্পকর্ম, নাটক ও আলোকচিত্র প্রদর্শনি ও কিছু বিক্রি।
এতকিছুর মধ্যেও ধীরে ধীরে এই জায়গা জুড়ে ছাত্রলীগের নেতাদের ভাড়া দেয়া চপ-পিয়াজু, চা-দই, বিড়ি-সিগারেট, ভাত-রুটির দোকান গড়ে ওঠে। এখানে দোকানদারি করে তারা সরকারকে কোন টেক্স দিত না কিন্তু সরকারি কুকুরদের বখরা দিয়ে যেত নিয়মিত। সরকারের যদি মনে হয়, যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না, তাহলে তাদের উচ্ছেদ করুক, পরিচ্ছন্ন করুক, জায়গা আরো উন্নত করুক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শিল্প নষ্ট করল কেন?
এখানে এত বেশি শৈল্পিক সম্ভার সাধারনত ঘটে না যে ঘন্টা খানেক সময় দিলে সেগুলো সড়ানো যেত না। সেই সময়টুকু কেন দেয়া হল না? তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেটের মধ্যে এইখানে শিল্প চর্চা হবে না তো কি হবে? এখানে কোন পাপ কি হচ্ছিল? প্রশ্ন থেকেই যায়-
দোকান সরাবেন সরান,
গাঞ্জাপট্টি উচ্ছেদ করবেন করেন,
পতিতা উচ্ছেদ করবেন করেন,
ভাই, আপনারা শিল্প নষ্ট করলেন কেন?
সাধারন দৃষ্টিতে এইসব অনাকাঙ্খিত কার্যকলাপ এই ছবির হাটের মত নির্মল জায়গায় হঠাৎ করে ঘটতে পারে দুটো কারনে -
১. ছাত্রলীগের এই জায়গা দখলের এবং সেখানকার দোকান ও ফুটপাত থেকে বখড়া উঠানোর দ্বায়িত্ব (বরাদ্ধ অথবা টেন্ডার অথবা জায়গির অথবা লীজ অথবা জমিদারী) যাদের দেয়া হয়েছিল, তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা দোকানদারদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে আরো সুবিস্তৃত ভাবে জায়গা বরাদ্ধ দেয়া হবে। সবাই লক্ষ্য রেখে দেখেন, ঘটনা সত্যি কিনা? ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে দেখবেন, ছবির হাট আর বসুক আর নাই বসুক, জায়গা বরাদ্ধ দিয়ে নতুন দোকান আর স্টল ঠিক-ই বসে যাবে। বাজি ধরতে পারি ১০০০০ টাকা।
২. দ্বিতীয় এই কারনটা নিয়ে বেশী কিছু বলা যাবে না। মডুরা মাইন্ড করতে পারে। তাই অল্প কথায় বলি। গনজাগরনের নায়েবে আমীর ইমরান এইচ সরকার অংশের দলটি আবার কিছুটা তাজা হচ্ছে। এই মঞ্চের গেদারিং-এর অন্যতম প্রান কেন্দ্র শাহবাগের ঠিক পাশে অবস্থিত এই ছবির হাট যেখানে এই আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং অসংশ্লিষ্ট সবাই জমায়েত হয়। কেউ কোন উদ্দ্যেশ্য নিয়ে আবার অনেকে কেবল আড্ডা আর বেড়ানোর উছিলায়। কিন্তু এই ছবির হাট সব ধরনের মানুষের পদচারনে সামগম থাককে সবসময়। এখন উচ্ছেদের কারনটা বুঝে নিতে পারেন।
এই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আসলে বলার আর কিছু নাই। যা ঘটেছে তা কি ঠিক হয়েছে? বার বার একই প্রশ্ন ঘুড়ে ঘুড়ে আসছে, জায়গা দখল হলে উচ্ছেদ কর। পুরো ঢাকা শহরের সব জায়গা তো তোমরা উদ্ধার করে ফেলেছ, খালি এই জায়গাটা বাকি ছিল। তাই না? ভাল, তোমরা দ্বায়িত্ব পালন কর।
কিন্তু ছাগলের বাচ্চারা, তোরা শিল্প নষ্ট করলি কেন ?????
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৪ ভোর ৪:১৮