somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের কাশ্মীর দেখা -( পর্ব - ৪)

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পেহেলগাম

পেহেলগাম আরেক বরফের রাজ্য। গ্রীষ্মকালের কাশ্মীর ভ্রমণে গুলমার্গের মত পেহেলগামও আরেক কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। কাশ্মীর উপত্যকার সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র এটি। কাশ্মীরি ভাষায় নাগ মানে ঝর্ণা এবং অনন্ত মানে অসংখ্য। তাই অনন্তনাগ মানে অসংখ্য ঝর্ণা। পেহেলগাম জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের অনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত আর এর ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি খরস্রোতা নদী 'লিডার', অনেক অনেক ঝর্ণা এসে মিশেছে এই নদীতে।! পেহেলগাম শ্রীনগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। এর গড় উচ্চতা প্রায় ৭২০০ ফুট। সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৭০০ সালে এর নাম রাখেন ইসলামাবাদ। পরে মহারাজা গোলাব সিং ১৮৫০ সালের দিকে আবার এর নাম রাখেন অনন্তনাগ।



স্থানীয় ভাষায় পেহেলগাম শব্দের অর্থ ভেড়াওয়ালাদের গ্রাম। ভেড়া ও বকরি চড়ানো ছিল এখানকার মূল বাসিন্দাদের আদি পেশা। পাহাড়ি এই দরিদ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘গুজার’ও বলা হয়। তারা বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে ভেড়া ও বকরি চড়ানোর জন্য নেয়। গ্রীষ্মকালজুড়ে সেগুলোকে পাহাড়ে-উপত্যকায় চড়িয়ে বেড়ায়। শীতের শুরুতে আবার ফেরত দেয় মালিকের কাছে। উঁচু উঁচু পাহাড়ের নিচের দিকে, নদীর পাড়ে, মাটি দিয়ে বানানো, গুহার মত ছোট ছোট ঘর দেখলাম আমরা। ড্রাইভার বললো এগুলোই 'গুজার' দের ঘর। শীতের শেষ এখন ওরা আসতে শুরু করবে।




আমাদের যাত্রা শুরু সকালেই। রাতে খাবার টেবিলে অনেক বাংলাদেশীদের সাথে গল্প হলো। অনেকেই যাবেন ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ের অনেক উপরের বরফের রাজ্য দেখতে। আমাদের এমন এডেভেঞ্চার সম্ভব নয়। আজ দেখবো আরু ভ্যালী, বেতাব ভ্যালী, চন্দনওয়ারি। যাত্রা শুরু আরু ভ্যালীর দিকে। প্রথা অনুযায়ী একটা পয়েন্টে যেয়ে আমাদের নামিয়ে দেয়া হলো। লোকাল গাড়ীতে যেতে হবে। জীপ টাইপের একটা গাড়ী ভাড়া করে দিলো ড্রাইভার বিলাল। এ পথে যেতে সত্যিই আমি ভয় পাচ্ছিলাম। চাপা রাস্তা, একপাশে গভীর খাদ, আরেক পাশে খাড়া পাথুরে পাহাড়। মাঝে মাঝে পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানি রাস্তার ওপর দিয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে পাশের নদীতে। ড্রাইভারকে যত বলি ধীরে চালাতে, সে আমাকে বিনয়ের সাথে একগাল হাঁসি দিয়ে বলে," বেহেনজী আরামছে!" এতে তো আমার ভয় কাটে না রে বাবা। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই বুঝি সামনে আর রাস্তা নেই, খাদে পড়ে যাবো। দেখা যায় ডানে বা বামে ঝুঁকি নিয়ে টার্ন নিলো। অগত্যা বেশী ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় চোখ বন্ধ করে রাখাই স্রেষ্ঠ উপায় মনে হলো। এর মাঝেও উপভোগ করছিলাম বরফে মোড়ানো পর্বতশৃঙ্গগুলোর অসামান্য রূপ বৈচিত্র্য, বরফ গলা নদীর ঝিরিঝিরি গান আর পাইন বনের শীতল স্নিগ্ধতা।




আরু ভ্যালী ছোট্ট একটা উপত্যকা। চারিদিকে অনেক বড় বড় পর্বতশৃঙ্গগুলো। চমৎকার শুটিং স্পট। এখানে সেখানে ঘোড়া চড়ে বেড়াচ্ছে। ছোট ছোট পানির ধারা বয়ে চলেছে এদিকে ওদিকে। কাশ্মীরের সব ভিউ পয়েন্টেই কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যারা নানান রঙের কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে বসে আছেন, সেগুলো পর্যটকদের পড়িয়ে ছবি তুলে, সাথে সাথেই প্রিন্ট করে দেন। চাইলে শুধু পোশাক ভাড়া নিয়ে নিজেরা নিজেদের মত ছবি তোলা যায়। বেশ উপভোগ্য ছিলো সময়টুকু। এবার যাত্রা বেতাব ভ্যালীর দিকে।




......................... আরু ভ্যালী….....................

চলে এলাম বেতাব ভ্যালীতে! তেমনই পাহাড়ি রাস্তা, স্রোতস্বিনী নদী, বরফে ঢাকা পাহাড় সহ চারিদিকের সবকিছু। পাইন গাছগুলোর ওপর থেকে বরফ ঝরে গেছে। এতে যেন সৌন্দর্য আরো বেড়েছে। সাদা জমিনের মাটির উপরে চমৎকার সবুজের কারুকাজ। সে এক অভূতপূর্ব উদাহরণ! বিখ্যাত হিন্দি মুভি "বেতাব"-এর প্রায় পুরোটা শুটিংই এখানে হয়েছিল। তারপরেই পর্যটকদের জন্য এই ভ্যালীকে আরো গুছিয়ে সাজানো হয়েছে। টিকেট করে ঢুকতে হলো। পুরোটা উপত্যকার মাটিই বরফ গলা পানিতে ভেজা। জমাট বরফ চলে গেছে। মাটি ফুড়ে বেরোচ্ছে কত রকমের নাম না জানা ফুল। এটা ঘোরাঘুরি করে প্রকৃতিকে উপভোগ করবার মতই জায়গা।











----------------------- বেতাব ভ্যালী ------------------------

পেহেলগাম এ দেখবার মত অনেক অনেক স্পটই আছে। লিডার নদী, পেহেলগাম ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, আরু ভ্যালি, চন্দনওয়ারী, পেহেলগাম ভিউপয়েন্ট, মিনি সুইজারল্যান্ড খ্যাত বাইসারান,
ধাবিয়ান, কাশ্মীর ভ্যালী ভিউপয়েন্ট, কানিমার্গ,
ওয়াটারফল, তুলিয়ান ভ্যালী, মামলেশ্বর মন্দির, কোলাহাই হিমবাহ ইত্যাদি! সবই বিভিন্ন পাহাড় পর্বতে উঠে প্রকৃতিকে উপভোগ করা। বেতাব ভ্যালীর পরে চন্দনওয়ারীর পথে রওয়ানা হলাম, আরো উঁচু পাহাড়ের কোল বেয়ে চলেছি আমরা। একটা জায়গায় ড্রাইভার একটু স্পীড কমালো, ওখান থেকে চমৎকার দেখা যাচ্ছে বেতাব ভ্যালী। পুরোটাই দেখা যাচ্ছে, প্লেন থেকে দেখার মত ছোট ছোট সব। জানালা দিয়ে ছবি নিলাম। এগিয়ে চলেছি আরো উপরের দিকে। ধীরে ধীরে চারপাশে বরফ আরো বাড়ছে।গাড়ি আরো উপরে উঠে বরফের মধ্যে আমাদের নামিয়ে দিলো। ওখানেও বরফে হাটার জন্য বুট, শীতের লম্বা কোট, ট্র‍্যাকিং এর জন্য লাঠি ভাড়া দিচ্ছে। আমরা কিছু ভাড়া নিলাম না, কারণ বরফের মধ্যে আর বেশীদূর যাবো না। খানিকটা পথ এগিয়ে গিয়ে কিছু ছবি তুলে ফিরে চললাম হোটেলের দিকে। পেহেলগাম দেখা এ পর্যন্তই, রাতে শ্রীনগর ফিরে পরদিন সকালে আবার সোনামার্গ এর উদ্দেশ্যে যাত্রা।


★★★★★★★★★★★★★★★









------------------------ বরফ গলা নদী। ------------




সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×