পাহাড়ি দেশ নেপাল দেখেছি, দার্জিলিং দেখেছি, শুনেছি ভুটান আরো আরো সুন্দর। যাবো যাবো ভাবছি অনেকদিন থেকেই। সুযোগের অভাবে হয়ে ওঠে না। শীত আসি আসি করছে, তাই এখনই সময় ভূটান যাবার।
প্রতিদিন একটা এয়ারক্রাফটই আসে ভূটান থেকে, সেটাই ফিরে যায়। Drukair এ টিকেট কাটা হয়েছে, আমরা চার জন যাচ্ছি। সকাল ৮.৩০ এ ফ্লাইট। ছ’টায় বাসা থেকে বেরোবো। খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। নামাজ, গোসল সেরে রেডি হয়ে সময়মতই বেরোলাম। আমাদের সাথে দু’জন যাবেন উত্তরা থেকে। ওনারা আগেই পৌছে গেছেন এয়ারপোর্টে, ফোনে জানালেন এয়ারপোর্টে ঢোকার মুখে প্রচন্ড জ্যাম, এই সাত সকালে------- উফফ! দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে আধা ঘন্টার রাস্তা এক ঘন্টায় পৌছুলাম। যাক, তবুও ফ্লাইট মিস হয়নি। সব ফর্মালিটি শেষ করে প্লেনে উঠে পড়লাম। ও হ্যা, ওঠার আগে সেল ফোনে দু’চারটা ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে দোয়া চাইলাম সবার কাছে।
ড্রুক এয়ারের ছোট একটা প্রোপেলার এয়ারক্রাফট প্রায় চল্লিশ জন যাত্রী নিয়ে ঠিক সময়েই উড়াল দিলো। প্লেন ছাড়ার দশ মিনিটের মধ্যেই নাশতার প্যাকেট চলে এলো। একটা স্যান্ডউইচ, একটা পেটিস, একটা জুস, এক প্যাকেট বাদাম সাথে এক কাপ চা। নাশতা সেরে ক্যামেরা খুলে ছবি তুলতে চাইলাম, দেখি জানালায় ভেতরের রিফ্লেকশন! অগত্যা জানালা দিয়েই দেখলাম ছোট বড় সাদা, কালো পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। বরফে ঢাকা হিমালয়ের প্রায় সবগুলো পর্বতশৃঙ্গই দৃশ্যমান! এবার নামার সময় হয়ে এলো। ছেলে বলেছিলো,” আম্মু প্লেন ল্যান্ড করার সময় খুব দোলে। দোয়া দরূদ যা জানো পড়তে থেকো!” ছেলে আমাকে যতটা ভীতু মনে করে, দেখলাম আমি অতটা ভীতু নই! নিচের দিকে নেমে প্লেন ডানে কাত হলে পাহাড় দেখছিলাম, বামে কাত হলে আকাশ দেখছিলাম! এভাবেই নেমে এলাম রানওয়েতে। এক ঘন্টা দশ মিনিটে পৌছে গেলাম ভুটান এয়ারপোর্টে।
ভুটানের একমাত্র এয়ারপোর্ট পারো শহরে। পুরো দেশটাই পাহাড়ি, তাই তাদের এয়ারপোর্টটাও আলাদা, বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক এয়ারপোর্টের একটি। তাই ফ্লাই করার আগে সবার দোয়া চেয়েছিলাম! এখানে অন্য দেশের প্লেন আসে না, ড্রুক এয়ার আর ভুটান এয়ারলাইন্স যায় বিভিন্ন দেশে! এয়ারপোর্টটা খুব ছোট, তবে বেশ ছিমছাম। on arrival visa নিয়ে খুব তাড়াতাড়িই আমরা বের হয়ে এলাম। আমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে অপেক্ষায় ছিল ‘উগান’ নামের ছেলেটি। সে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ওর বাবাও। ওর বাবা ‘কার্মা জিম্বা’ আমাদের সাথের দুই ইঞ্জিনিয়ারের সাথে (আমার হাসবেন্ড এবং তার কলিগ) আফগানিস্থানে জাতিসংঘের একটা রোড প্রজেক্টে চাকুরী করতেন। এখন দেশে ফিরে তিনি বিশাল ব্যবসায়ী। কনসাল্ট্যান্ট ফার্ম সহ আরো অনেক ব্যবসার সাথে হোটেলের ব্যবসাও (ট্রাভেল এজেন্সি) আছে ওনার। আমরা ওনার হোটেলেই উঠব।
--------------প্রথম ভুটানের মাটিতে নেমে এলাম।
---------চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট এয়ারপোর্টটি।
--------------------এয়ারপোর্টে রাজপরিবারের ছবি।
পারো থেকে সরাসরি থিম্পুর দিকে চললাম আমরা। চারিদিকের সৌন্দর্য্য কোনটা রেখে কোনটা দেখি! আকাশ যেমন নীল, পাহাড় তেমনই সবুজ। গাঢ় নীল আকাশে মেঘগুলো যেন তুষারের চেয়েও শুভ্র। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চলেছি আমরা, রাস্তাটিও চমৎকার! পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে পাথুরে নদী, পারো নদী নামেই পরিচিত। সে নদীর পাশে থেমে নদীতে নামলাম। উগানের নিষেধ মেনে আর বেশী এগিয়ে যাইনি। ও বলছিলো ভেজা পাথরগুলো খুব পিচ্ছিল। তাই শুধু পা ভিজিয়েই ফিরে এলাম।
------------রাস্তা থেকে নেমে এলাম নদীর পাড়ে।
পথে আরো এক জায়গায় বিরতি দিলাম। নদীটির উপরে একটি ঝুলন্ত সেতু আছে। দেখতে নামলাম সবাই। রাস্তা থেকে অনেকটাই নামতে হলো পাহাড়ি পথ ধরে। সেতুর নীচে নদীটায় বেশ স্রোত, অনেক শব্দ করে বয়ে চলেছে। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে নদীকে দেখতে যেন কষ্টই হচ্ছিল। চারিদিকে শুধু প্রেয়ার ফ্লাগ বাঁধা। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মনোকামনা পূরণের উদ্দেশ্যে, মৃত আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এসব ফ্লাগ লাগানো!! ওপাড়ে ছোটবড় দু’টো মন্দির দেখে ফিরে চললাম আমরা থিম্পুর পথে। পৌছে গেলাম দুপুরের খাবারের আগেই। সেদিন আর কোন দূরের প্রোগ্রাম নয়, শহরটাই একটু ঘুরে দেখব!! -------
------------ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মনোকামনা পূরণের উদ্দেশ্যে, মৃত আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এসব ফ্লাগ লাগানো!
----------------------------------নদীর ওপাড়ের মন্দির।
-----------------------------------চলে এলাম থিম্পুতে!
ভুটানে তোলা কিছু ছবি নিয়ে ছবিব্লগঃ পাইন বনের দেশে ---------------!!
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ