সন্দীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপ । এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বকোণে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত । চতুর্দিকে নদী আর সাগর বেষ্টিত একটি ছোট্ট দ্বীপ সন্দীপ । শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যে ইতিহাসে ভরপুর এই দ্বীপ।
অনেকদিনের প্রোগ্রাম সন্দীপ যাওয়ার। অবশেষে পহেলা মার্চ/২০১৭, ভোর পাঁচটায় ঢাকা থেকে রওয়ানা হলাম দশজনের একটি দল। বাহন আমাদের দশ সিটের মাইক্রো। সেদিন পরবহন ধর্মঘটের কারণে রাস্তায় গাড়ি কম ছিল। কিন্তু হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট যে বন্ধ থাকবে সেটি আমাদের মাথায়ই আসে নাই। একটা খোলা পাওয়া গেল, সেটিতে কোন ডিম নেই। আমাদের অনুরোধে ডিম এনে ওমলেট, রুটি, বীফ ভুনা আর মুরগীর ঝোল(যারা গরু খাবেন না।)ফ্রেশ হয়ে, চা-নাশতা সেরে আমরা ১২টার মধ্যে সীতাকুন্ডের কুমিরা ঘাটে পৌছে গেলাম। গাড়ি ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়ে আমরা ভ্যানে চললাম, স্পীডবোট ঘাট পর্যন্ত। কুমিরা ঘাট থেকে সন্দীপের পথে যাতায়াত করে অনেক স্পীডবোট ২০ থেকে ২৫ জন যাওয়া যায়, ঘাট থেকে সাগর পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২৫ কিলোমিটার। ঘাটে এসে সিড়ি থেকে আরেক বোট, সেখান থেকে আমাদের বোটে উঠলাম আমরা। ১৮ মিনিটে পার হয়ে গেলাম মেঘনা নদীর মোহনা। ফেরার পথে ২৫ মিনিট লেগেছে। সাগরে মিশে মেঘনা যেন আরো উত্তাল। নদী যেখানে সাগরে মিশেছে, পানির রঙের কিছুটা ভীন্নতা সেখানে বোঝা যায়।
মাঝে দু’দিন থেকে চতুর্থ দিন ফিরেছি ঢাকায়। যেমন দেখেছি বিস্তীর্ণ জলরাশির খেলা, তেমনি জনশুন্য সবুজ চর, চেনা অচেনা বিভিন্ন রকমের গাছগাছড়া। প্রতিদিনই বেড়াতে গিয়েছি সাগর পাড়ে, দেখেছি দ্বীপের সূর্যাস্ত-সূর্যোদয়, নানা বর্ণের পাখি, সাধারণ সেই মানুষের জীবনযাত্রা, পুকুরে মাছ ধরা, সাঁতার কাটা, শুনেছি সন্দীপের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য। প্রথম দ্বীপ দেখার যে উত্তেজনায় আচ্ছন্ন ছিলাম, যাবার সময়ই সেই আনন্দ উপভোগ করেছি আর করেছি ফেরার সময়। যে ক’দিন ছিলাম ঘুরে বেড়িয়েছি গাড়িতে, অটোরিক্সায়, রিক্সায়। সমুদ্র পাড়ে বা বিস্তীর্ণ চরে না গেলে বোঝা যায় নাই এটা কোন দ্বীপ। বাংলাদেশের আর সব গ্রামের মতই গ্রাম। তবে বুঝেছি রাতে, বিদ্যুৎ নেই সেখানে। জেনারেটর চালিয়ে রাতে দু’চার ঘন্টা বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়া হয়। রাতের অন্ধকার তাই উপভোগ্য, তারায় তারায় ভরা আকাশ, স্নিগ্ধ জোৎস্নার পরশ সবখানে!! রাতে জানালা খুলে তারাভরা আকাশ দেখতে দেখতে কোন এক সময় ঘুমিয়ে যাওয়ার অনুভূতি অনেক অনেকদিন পরে অনুভব করেছি। স্বপ্নের মত ক’টা দিন কাটিয়ে ফিরেছি আবার এই যান্ত্রীক জীবনে!!
** যে দশ জন বেড়াতে গিয়েছিলাম, তাদের একজন, আমার খুব কাছের মানুষ, প্রায় একমাস আগে চলে গেছেন পরপারে!! তার আত্মার শান্তি কামনা করি!
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ