বর্তমান সময়ে শিশুদের অন্যতম একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে অটিজম। অজ্ঞাত কারণে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা আর দশজন মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে অক্ষম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এটি এক ধরনের মানসিক রোগ যা প্রায়শই দেখা দেয় শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময়। অটিজমে আক্রান্ত অটিস্টিক শিশুরা বুদ্ধি, বাক, শ্রবণ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধি নয়। এদের বুদ্ধি, কথা বলার ক্ষমতা সবই আছে। কিন্তু এ ধরনের শিশুরা নিজের একটি জগৎ বেছে নিয়ে তার মধ্যেই থাকতে ভালোবাসে। অটিস্টিক শিশুদের সম্পর্কে সমাজে বহু প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে।
অধিকাংশ মানুষের ধারণা এরা অন্যান্য শিশুদের মত লেখাপড়া শিখতে অক্ষম। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বরং বহু অটিস্টিক শিশু সাধারণ শিশুদের চেয়ে অনেকবেশি মেধাবী হয়। অটিস্টিক শিশুদের জগতে প্রবেশ করতে পারলে তাদেরকে শিক্ষিত করে তোলা কঠিন কিছু নয়। এজন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করার পাশাপাশি নানা শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে অটিস্টিক শিশুদের জন্য পরিচালিত বিশেষ স্কুলগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এ ধরনের স্কুল চট্টগ্রামে মাত্র তিনটি। অটিস্টিক শিশুদের সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন এ ধরনের প্রচুর স্কুল এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ও নার্স।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে প্রতি একশজন শিশুর একজন অটিজমে আক্রান্ত। সে হিসেবে চট্টগ্রামে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা ৫০ হাজারের মত। এত বিপুল সংখ্যক শিশুর জন্য শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করতে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোও একাজে এগিয়ে এলে বাবা মায়েরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
অটিজম বর্তমানে ব্যাপক আকারে দেখা দিচ্ছে। গবেষকদের মতে খাদ্যাভাসে ত্রুটি, ভেজাল, আবহাওয়ার দূষণ এবং বংশগত উপাদান অটিজমকে প্রভাবিত করে। অটিস্টিক শিশুদের বাবা মাকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হয় তাদের সন্তানের প্রতি। বহু বাবা-মা সন্তানের জন্য ছেড়ে দেন সামাজিকতা। সমাজের অধিকাংশ মানুষের এ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ না হওয়ায় বাবা মায়েরা সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ভীত থাকেন। অটিস্টিক শিশুদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সময় এসেছে।
অটিজম যতটা না রোগ তার চেয়ে অনেক বেশি শিশুর একটা বিশেষ মানসিক অবস্থা। বাবা মায়েদের আকুতি সমাজের দশজন মানুষ যাতে ফুলের মত নিষ্পাপ এই শিশুদের অন্তত অবজ্ঞা না করেন।