somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

!!!চলন্ত বাসে ধর্ষণ দুই আসামির স্বীকারোক্তি শাস্তির দাবি, ক্ষোভ-ঘৃণা

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসে গার্মেন্ট-কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত ড্রাইভার দিপু মিয়া ও হেলপার কাশেম ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে বিচার বিভাগীয় মুখ্য হাকিম শেখ মো. মুজাহিদুল ইসলাম জবানবন্দি গ্রহণ শেষে দুই আসামিকে জেলহাজতে এবং নির্যাতিত মেয়েটিকে তাঁর বোনের হেফাজতে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই ধর্ষণ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ আর প্রতিবাদ জানাচ্ছে মানিকগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ। দুই দিন ধরে ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবি করেছে। অভিযুক্তদের একজনের মা-বাবাও তাঁদের সন্তান অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে তরা ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে শুভযাত্রা পরিবহনের একটি চলন্ত মিনিবাসে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। ওই দিন বিকেলেই চালক দিপুকে এবং রাত ৯টার দিকে নবীনগর থেকে হেলপার কাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মেয়েটি নিজে বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) শহিদুর রহমান আসামি দুজনকে নিয়ে ঢাকা-আরিচা সড়কে মিনিবাসটির রুট ঘুরে দেখেন। মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনে রাখা মিনিবাসটিতেও আসামিদের নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আসামিরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে।
ওসি শহিদুর রহমান জানান, ডাক্তারি ও রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই তিনি অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারবেন। রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করার বিধিবিধান রয়েছে বলে জানান।
এ ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, 'একটি ঘটনা ঘটার পর যাঁদের ওপর দায় বর্তায় তাঁরা যদি ঠিকঠাকভাবে দায়িত্ব পালন না করেন তখন আমরা এগিয়ে যাই। ঘটনাটির ওপর আমরা নজর রাখছি, সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে এগোচ্ছে কি না দেখছি।' গতকাল শনিবার বিকেলে গোপালগঞ্জে জাতির জনকের মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিবাদ বিক্ষোভ, মানববন্ধন : শনিবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাস চালানো বন্ধ এবং মানববন্ধন করে মেয়েটির ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন শুভযাত্রা পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা। সকাল ১১টায় মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এর পরপরই মানববন্ধন করে কর্মজীবী নারী সংগঠন। দুপুর ১২টায় মানববন্ধন করে জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর আগে শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে জাতীয় মহিলা সমিতি, জাতীয় মহিলা পরিষদ ও কমিউনিস্ট পার্টি। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে ধর্ষকদের দ্রুত বিচার এবং নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
মেয়েটি চুপচাপ : আদালতের নির্দেশের পর মেয়েটিকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে রাজবাড়ীতে বাবা-মায়ের বাড়িতে ফেরেন তাঁর বড় বোন। মেয়েটি এখন চুপচাপ, কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। পরিবারের সদস্যরাও যেন বাকরুদ্ধ।
গতকাল সকালে রাজবাড়ীর পাংশায় মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছাপরা ঘরের এক কোণে বসে আছেন তিনি। তাঁর মা-ও ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না। প্রতিবেশীরা বিষয়টির খবর পায়নি। দরিদ্র পরিবারটিও চায় না সবাই এ খবর জেনে তাদের বাড়িতে ছুটে আসুক। বাড়িতে রয়েছে পুরনো একটি টিনের ও একটি ছাপরা ঘর। তাঁর বাবা দেড় মাস আগে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। মেয়ের ঘটনা জানার পর তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মেয়েটির চাচা বলেন, 'আমরা চাইছি না এলাকায় বিষয়টি প্রচার পাক। তাই ভাতিজিকে নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছি।'
চাচার কাছ থেকে জানা যায়, মেয়েটির এক বোন ও দুই ভাই রয়েছেন। বড় বোন ও বড় ভাই ঢাকায় থাকেন। স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করার পর ছয় মাস আগে মেয়েটি বড় বোন ও বড় ভাইয়ের কাছে কাজের সন্ধানে যান। গার্মেন্টের কাজে যোগ দেওয়ার পর মাঝে একবার বাড়ি এসেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়ি আসার কথা ছিল। বাড়ি ফেরার পথেই মেয়েটি ওই পৈশাচিকতার শিকার হন। হেলপার ও চালকের ফাঁসির দাবি জানিয়ে চাচা বলেন, শাস্তি দেওয়া না হলে এ রকম ঘটতেই থাকবে। তিনি আশা করেন, মেয়েটিকে পুনর্বাসিত করতে সরকার এগিয়ে আসবে।
রাজবাড়ী জেলা উদীচীর সভাপতি ডা. সুনিল কুমার বিশ্বাস বলেন, 'সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলা সদরের মূলঘর ইউনিয়নের শিশু শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এরপর চলন্ত বাসে রাজবাড়ীর এক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলো। আমরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা চাই ধর্ষকদের ফাঁসি দেওয়া হোক।' জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. পূর্ণমা দত্ত বলেন, 'একটির পর একটি ঘটনা ঘটেই চলছে, অথচ এর প্রতিকার পাচ্ছি না।' তিনি আশা করেন, ধর্ষকদের কঠিন সাজা হবে। একই সঙ্গে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে দেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। মা ও বোনেরা নিশ্চিন্তে নিরাপদে চলতে পারবেন।
'আমাদের ছেলের বিচার হোক'
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাশেম আর দিপু নিজেদের এলাকায় খারাপ ছেলে হিসেবে পরিচিত। পরিবারও ছিল এদের জন্য অতিষ্ঠ। কাশেম দুটি বিয়ে করেছে। দিপু ছয় মাস আগে বিয়ে করে মাকে ফেলে ভাড়া বাসায় থাকছিল।
মানিকগঞ্জের দীঘি ইউনিয়নের দোলাবাড়ী গ্রামের দিনমজুর বিধু মিয়ার দু্ই ছেলের মধ্যে ছোট কাশেম মিয়া (৩০)। বছর আটেক আগে কাশেম বিয়ে করে ইয়াসমিনকে। তাদের ঘরে একটি ছেলে রয়েছে। ছেলের এক বছর বয়সের সময় বছর দুয়েক আগে ইয়াসমিনকে তালাক দিয়ে সুমি নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে সে। তাদের ঘরে রয়েছে আট মাসের এক মেয়ে সন্তান। আগের স্ত্রী ইয়াসমিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। বিধু মিয়া জানান, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে কাশেম বাড়ি ছেড়ে শহরে ভাড়া বাসায় থাকে। এলাকার লোকজন জানায়, কাশেম এক সময় এলাকায় রিকশা চালাত। পরে বাসের হেলপারি করতে শহরে চলে যায়। তারা জানায়, কাশেম মোটামুটি আয় করলেও বাবা-মাকে দেখে না। শনিবার সকালে কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অসুস্থ বাবা-মা দুজনেই বিমর্ষ মুখে উঠানে বসে আছেন। দুজনেই বললেন, ছেলে যদি সত্যিই এই কাজ করে থাকে তাহলে তার বিচার হোক।
মানিকগঞ্জের জাগির ইউনিয়নের গর্কি গ্রামের মৃত আতবার আলীর দ্বিতীয় পক্ষের তিন ছেলের তৃতীয় দিপু মিয়া (২২)। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা দিপুকেও এলাকার লোকজন ভালো চোখে দেখে না। বাবা ছিলেন গরুর দালাল। এলাকার লোকজন জানাল, ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি ছিল দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির। তাদের তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন সময় অনেক বিচার-সালিস হয়েছে। কিছুদিন আগে তারা তিন ভাই মিলে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এই দুঃখে দিপুর বাবা গত কোরবানির ঈদের সময় শ্বশুরবাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দিপু মাস ছয়েক আগে প্রেম করে লাবণী নামের একজনকে বিয়ে করে।
দিপুদের বাড়িতে গিয়ে কেবল তার মা মনোয়ারাকে পাওয়া গেল। এলাকার মহিলারা তাঁকে ঘিরে বসে আছেন। তিনি অনবরত কাঁদছেন। এরই মধ্যে বললেন, দিপুর স্ত্রী ঘটনা শুনে খালার বাড়িতে চলে গেছে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×