সাগর ও নদীর মাছ ইলিশ এবার বদ্ধ জলাশয় পুকুরে চাষ হবে। চলতি মে মাস থেকেই বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর পাওয়া সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিশেষজ্ঞরা বদ্ধ পুকুরের মিঠাপানিতে রুপালি ইলিশ চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সম হয়েছেন।
দেশে প্রতি বছর ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়। নদী ও সাগর থেকে এই ইলিশ আহরিত হয়। জাটকা শিকারের পাশাপাশি নদীর নাব্য সঙ্কট, পানি দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ চাষের উদ্যোগ নেয়া হলো। ইলিশ গবেষকদের মতে, বিশ্বে এই প্রথম পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু হতে যাচ্ছে।
১৯৮৮ সাল থেকে পুকুরের মিঠাপানিতে ইলিশ চাষ করা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষকরা সফলতা পান। ইনস্টিটিউটের ৩টি পুকুরে চলতি মাসের শেষদিক থেকে শুরু হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইলিশ চাষ।
চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও বরিশালের পদ্মা-মেঘনা নদী ইলিশের অভয়াশ্রম। এগুলোতে কারেন্ট জালের সাহায্যে নির্বিচারে জাটকা নিধন করা হচ্ছে। শুধু কারেন্ট জাল দিয়ে গড়ে বছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন জাটকা শিকার করা হয়। কিন্তু এই জাটকার যদি ১০ ভাগও রা করা যেত তাহলে ১ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ইলিশ উৎপাদন হতো, যার দাম ২ হাজার কোটি টাকা।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, পুকুরে ইলিশ চাষের সব প্রস্তুতি এর মধ্যে শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখন শুরু হবে পুকুরে ইলিশ চাষ। পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইলিশ চাষ শুরুর সংবাদে ব্যবসায়ীরা বেশ আনন্দিত। এতে সারা বছরই পাওয়া যাবে ইলিশ। ব্যবসা সচল থাকবে বলে আশাবাদী তারা।
ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান আরও জানিয়েছেন, প্রতিটি ইলিশ মাছের ডিম থেকে প্রায় ১ লাখ রেণু পোনা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পুকুরে ইলিশ চাষ পুরোপুরি শুরু হলে জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে আর জাটকা নিধন করবে না বলে আশা করা হচ্ছে। জীবন্ত জাটকা আহরণ করে জেলেরাই ইলিশ চাষীদের কাছে বিক্রি করতে পারবে। বদ্ধ জলাশয় অর্থাৎ পুকুরে ইলিশ চাষ সর্বত্র বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করা গেলে দেশের মৎস্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
তথ্য: দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা