somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোরকে বলে চুরি করতে আর গৃহস্থকে বলে সজাগ থাকতে!!

১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে দেশের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করছে বিরোধী দল, জামায়াত শিবির ও হেফাজতে ইসলাম। তাই তাদের প্রতিহত করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অথচ সরকার চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে এই সংঘাতময় রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারে। কিন্তু সেই পথে না হেটে হার্ডলাইনের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। সরকার পক্ষের বক্তব্য ও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে সাধরাণ মানুষ মন্তব্য করছে,- ‘সরকার একদিকে চোরকে বলছে চুরি করতে আবার গৃহস্থকে বলছে ধরতে’।

দেশের মানুষ ভলো নেই। আতঙ্কে কাটছে দিন। ঘর থেকে বের হয়ে আবার ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা পর্যন্ত হরিয়ে ফেলেছে স্বাধীন বাংলার মানুষ। আর এর একটি মাত্র কারণ দেশের সংঘাতময় রাজনীতি। সবার মনে একটি প্রশ্ন কোন পথে যাচ্ছে দেশ?

দেশের প্রধান বিরোধী দলের একটাই দাবি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু করতে হবে। কিন্তু সরকার চায় অন্তবর্তী সরকার ব্যবস্থা। এ লক্ষ্যে তারা পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়নও করেছন। সংঘাতের সূত্রপাত সেখান থেকেই।

দু’দলের বিপরীত মুখী অবস্থান দেখে দেশের বিজ্ঞজনেরা তখন থেকেই সংলাপের কথা বলে আসছেন। কিন্তু কোনোভাবেই সংলাপের পথে নেওয়া সম্ভব হয়নি তাদের। বিরোধী দল বলেছে সরকার কে এগিয়ে আসার জন্য আর সরকার বলছে সংসদে আসতে। কিন্তু সংসদে গেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিএনপি যে তাদের দাবি পূরণ করতে পারবে না তা তারা ভালো করেই জানে। তাই তারা সংসদে গিয়ে নয় সংলাপে গিয়ে এর সমাধান চায়। অথবা যদি সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয় তবেই তারা সংসদে যাবে বলে জানায়।

একটি দেশের নির্বাচিত সরকারকে দেশের শান্তি রক্ষায় সঠিক পথে চলা উচিত! সংঘাতের পথে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সমাধান খুঁজে বের করতে আগ্রহি হওয়া উচিত! কিন্তু সরকারকে সেই চেহারায় দেখতে পায়নি দেশের মানুষ। শুধু এই সরকারের আমলে নয়, দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতিতে এমন চেহারা দেখতে পায়নি বাংলাদেশের মানুষ। বরাবরই তারা নিজেদের চিন্তা চেতনায় অটল থেকে পরষ্পর বিরোধী সমালোচনায় মেতে উঠেছে।

বিরোধী দল তাদের দাবি আদায়ের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করবে এটাই রাজনীতির মূল মন্ত্র। কর্মসূচির নামে নাশকতা করলে সরকার পদক্ষেপ নিবে এটাও স্বাভাবিক। সেই সাথে যৌক্তিক দাবি হলে সরকারকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। এটাই সুস্থ ধারার রাজনীতি। কিন্তু এর কোনেটিই দেখা যায়নি। বরং ধীরে ধীরে পরষ্পর বিরোধী আচরনে দেশের রাজনীতি সংঘাতের দিকে ধাবিত হয়েছে।

বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক দাবি তো আছেই সেই সাথে দ্রব্যমূল্য, তেল, গ্যাস, জ্বালানী, বিদ্যুৎ এর দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির সঙ্গে পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার, হলমার্ক, সুরঞ্জিত ইস্যু, ইলিয়াস আলী, সাগর-রুনি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে বিদেশী চাপ ও আমার দেশে প্রকাশি স্কাইপ সংবাদ নিয়ে সরকার দিশেহারা। এতো সব ব্যর্থতায় সরকার জনগণের কাছে ছিটকে শূণ্যের কোঠায় চলে যায়। ঠিক তখন যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রায় ঘোষণা সরকার কে নতুন পথে নিয়ে যায়। সরকারের ধারাবাহীক ব্যার্থতা ঢাকতে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু আশির্বাদ হিসেবে ধরা দেয়। দ্বিতীয় সংঘাতের সূত্রপাত সেখান থেকেই।

তরুণ প্রজন্মের দাবি ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি’। তাদের এ দাবির সঙ্গে দেশের সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ এক হয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়। তারা গণ জাগরণ মঞ্চ থেকে জামায়াত শিবির কে নিষিদ্ধ করার দাবিও তোলো। সপ্তাহ খানেক পর্যন্ত এই আন্দোলন ছিল জনগণের। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের কে হাতিয়ার করে ভিন্নভাবে ব্যাবহার করতে কিছু দল উঠে পড়ে লাগে। দিন যতোই বেশি হতে থাকে জাগরণ মঞ্চ নিয়ে ততোই বিতর্ক উঠতে থাকে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে এই সব তরুণদের আন্দোলনে সক্রিয় রাখে সরকার। এদিকে কিছু ব্লগারদের ধর্মীয় আঘাতমুলক লেখা ও বক্তব্যের প্রতিবাদে ইসলাম ধর্মের অনুসারি কিছু দল ও জামায়াত শিবির একত্রিত হয়ে সরকারের কাছে আল্টিমেটাম দেয়। শুরু হয় নতুন সংঘাত।

জামায়াত শিবির, ইসলামীদল হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপির আল্টিমেটাম ও ধারাবাহীক কর্মসূচিতে দেশ এখন অচল। সাধারণ মানুষের বাঁচার শেষ রাস্তাও এখন অবরুদ্ধ। টানা হরতালে শিক্ষাব্যাবস্থাও থমকে গেছে। এ অবস্থায় কি চায় সরকার? এমন প্রশ্ন জনগণের মধ্যে দানা বেঁধেছে। কেউ কেউ বলছে সরকার চাইলেই যে কোনো মুহুর্তে এই সংঘাত বন্ধ করতে পারে।

সম্প্রতি সরকারের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব ধারা রয়েছে। আর তারা তাদের ধারা অনুযায়ী চলে। যার জন্যই ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন , আওয়ামী লীগ আলোচনায় বিশ্বাস করে। কিন্তু বিএনপি আলোচনা না করে জামায়াত শিবির এবং হেফাজতকে সাথে নিয়ে সরকারকে উৎখাত করতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপি অতীতে জামায়াত ও শিবিরকে সাথে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল সেখানে ব্যার্থ হয়ে এখন হেফাজতে ইসলাম কে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে।

প্রধান মন্ত্রীও বিবিসির সাক্ষাতকারে একই কথা বলেছেন। বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যে তিনি বলছেন, বিরোধী দল সহিংস পথ বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ গুলিতে মারা যাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আইনের মাধ্যমেই তাদের প্রতিহত করা হবে।

সরকার একদিকে বলছেন আলোচনায় বসবেন আবার বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে আটকাচ্ছেন। জামায়াত শিবিরকে প্রতিহত করতে গনজাগরণ মঞ্চকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন আবার হেফাজতে ইসলামকে দেখানোর জন্য ব্লগারদের গ্রেফতার করছেন।

সার্বিক দিক দেখে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে- সরকার আসলে কি চায়? সরকার যাই ভাবুক না কেনো দেশের মানুষ ভালো নেই এটাই এখন বড় কথা। কি করলে এই সংঘাত থেকে দেশ বাঁচবে তার একটি রুপ রেখা দেওয়া যেতে পারে।

গনজাগরণ মঞ্চের দবি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে হবে এবং জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের এই দাবি কার কাছে? সরকার তো বলেই দিয়েছে এটি আইনি বিষয় আইনের মাধ্যমে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে আর কি চায় জাগরণ মঞ্চ! যদি সরকারের এই কথায় তারা সন্তুষ্ট না হতে পারে তবে আল্টিমেটাম দিয়ে সরকার কে বাধ্য করা হোক। শুধু শুধু ব্যস্ত সড়ক আটকে রেখে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো প্রয়োজনই নেই। সেই সাথে ব্লগারদেরও একটি কথা মনে রেখে মত প্রকাশ করা উচিত যাতে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে আঘাত না আসে। ধর্ম মুক্ত চিন্তার বাইরে। প্রত্যেকেই যার যার বিশ্বাসে ধর্ম পালন করে থাকে। তাই মুক্ত চিন্তার নামে অশালিন বক্তব্য প্রকাশে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে। আর এটি হলে হেফাজতের আন্দোলন প্রতিহত সম্ভব।

অপরদিকে বিরোধীদলকে এভাবে দমন না করে আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংঘাত কখনোই কাম্য হতে পারে না। পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক সরকার আমলে এটি কাম্য নয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×