ধরুন একটি কবিতা পড়লাম। মন্ত্যব্য করলাম - ভালো হয়েছে।
একজন সত্যিকার অর্থে সত্যবাদী পাঠক হিসাবে কি আপনার পক্ষে মনেমনে তৃপ্ত হওয়া সম্ভব এইটুকুতে? হয়তো, হয়তো নয়। বিষয়টা বড়ই আপেক্ষিক ও আলোচনা সাপেক্ষ। তাও চলুন দেখি একটু খোঁচাখুঁচি করার চেষ্টা করি।
একজন কবিতা স্রস্টার কাছে তার সৃষ্ট কবিতা প্রানাধিক প্রিয় হতে পারে এবং তিনি তার কবিতার ব্যাপারে তিন ধরনের মনোভাব পোষণ করতে পারেনঃ
১। তার কবিতা কেউ পড়ল কি পড়লনা, কারো ভালো লাগল কি লাগল না , তার থোরাই কেয়ার করেন তিনি, কবিতা সৃষ্টিতেই তার তৃপ্তি।তার কবিতা তাঁর একন্ত আপন জিনিস।
২। দ্বিতীয়ত হতে পারে, তিনি চান যে তার কবিতা সবাই পড়ুক, কেমন লাগল একটু জানিয়ে যাক। ভালো লাগল কি না, লাগলে কেন লাগল একটু বলুক এবং যে ভাবের প্রেক্ষিতে কবিতাটা সবচেয়ে মানিয়ে যায় সেই ভাবটা ধরতে পারল কিনা এবং সেই ভাবটা প্রকাশে ভাষা ও শব্দের খেলা গুলো বুঝেছে কিনা একটু জানিয়ে যাক।
৩। তৃতীয় মনোভাবটা কমবেশি সবাই পোষণ করেন বোধয়, কারন সেটি অনুভুতির সাথে জড়িত, আর তা হল খারাপ লাগলেও কেউ যেন না বলে ‘ ভাল হয়নি’ বা ‘খারাপ লেগেছে'’। আর এমন কোন বেরসিক বা কবিতা বোদ্ধা যদি বা এমন মন্তব্য করেই ফেলেন তাহলে,লেখক আশা করেন যে, তিনি তার ব্যাখ্যা জানাবেন। (অফটপিকেঃ অবশ্য কোন কবিতা সম্পর্কেই এমন মন্ত্যব্য করাটা মোটেই ঠিক নয় কেননা কবিতা সৃষ্টির চেষ্টা-টাও তো কম সুখের কথা নয়-এটলিস্ট একারনে হলেও কবিতার স্রষ্টা একটা বাহবা পাবার যোগ্য। তবে হ্যা কবিতার মান উন্নয়নে কেউ কেউ এমন মন্ত্যব্য করতেই পারেন তবে তা জায়গা,পরিস্থিতি এবং সম্পর্ক বুঝে)
যাই হোক আসুন এক ও দুই নম্বর অপশন বাদ দিয়ে আমরা বরং দ্বিতীয় মনোভাবটি নিয়ে ভাবি। কারন আমাদের সামনে আপাতত যাবতীয় কবিতাই প্রকাশিত এবং সর্বসমক্ষে প্রকাশিত বস্তু মাত্রই মন্তব্যের হকদার- এক ও তিন দুইই একটু উগ্রবাদিতার কথা বলে- আমরা সেদিকে যাব না বরং দ্বিতীয় মনোভাবটির সুত্র ধরে লেখক ও পাঠকের অন্তঃমিল খোঁজার চেষ্টা করি।
বলছিলাম যে একটা কবিতা পড়লাম, মন্ত্যব্য করলাম ভালো হয়েছ্, কিন্ত তাতে তো মন ভরল না গুরু। আমি কেন ভালো বললাম, বুঝে বললাম ,নাকি, না বুঝে বললাম এটা লেখক বা লেখিকা জানবেন কি করে? আর, একজন “কবিতা লেখকের” –(“কবি” বলছি না কারন কবি শব্দটা অনেক বড় মাপের একটা শব্দ যে সম্পর্কে আলোকপাত করার মত সাহস এখনো ধারন করিনি), যাই হোক একজন কবিতা লেখকের জন্য এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না যখন, একটা কবিতা সৃষ্টির পর, পাঠক সেটা পড়ে তৃপ্তি পেয়ে, শব্দগুলো বুঝে, ছন্দ গুলো গুন গুন করে, মূল ভাবটুকু তার হৃদয় দিয়ে অনুভব করে এবং কোন ধরনের প্রেক্ষাপটে এ ধরেনের ভাব আসতে পারে সেটা কল্পনা করতে পেরে এবং সেই ভাবটা কবিতা লেখক- ভাষা বা শব্দের কতটা সুনিপুন ও উৎকৃষ্ট ব্যাবহারের মাধ্যমে উপস্থাপন করলেন সেই রস পুরোপুরি গ্রাস করে উল্লাসের সাথে বলে ওঠে ভালো লেগেছে!
অনেকেই আমরা কবিতা পড়ে ঠিক ঠাক মত বুঝতে না পেরে অতিষ্ট হয়ে বলে উঠি- ধুত্তোরি, কবিতাটা জিনিসটা আসলে কি? এর সংগা কি? নিয়ম কানুন কি? কবিতা আর গদ্যের মধ্য পার্থক্য কি? মানুষ কেনই বা কবিতা লেখে আর কেউ কেউ সেটা পড়ে খুব প্রগলভতা সহকারে আহা…আহা… করে। সবাই কি বুঝে করে নাকি বোঝার ভান করে করে? কবিতার সার্থকতা কি? কবিতা বোঝার মধ্যে কি এমন রস আছে- কবিতা বোঝার উপায় কি?
আমার ব্যক্তিগত ক্ষুদ্রতা মার্জনীয় প্রিয় পাঠক আমি “কবিতার”-ক্ষেত্রেও কবিতা কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ সংগা দিতে চাইনা বরঞ্চ আসুন কবিতা কি করে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে সেদিকে তাকাই।
কবিতার সংগা না জেনেও এতটুকু বোঝা যায় যে কবিতা খুব খামখেয়ালি। কবিতা যে সব্বসময়ই ছন্দে ছন্দে ছড়িতা হবে, একটা পুর্নাংগ ঘটনাচিত্রকে ধারনকরবে, তার ভাষা খুব ক্ষুরধার হবে, ভাষার নিপুন ব্যাবহার থাকতে হবে এমন দিব্যি কোথাও দেয়া আছে বলে আমার জানা নেই। যদি হয় তাহলে তো ভাল না হলে কম ভাল এই যা। সেকারনে কবিতা লেখকরা ইচ্ছে মত স্বাধীনই বটে। তার মনে যখন-তখন যা কিছু আসতে পারে আর সেগুলো তিনি যেমন খুশি তেমন করে কাব্যরুপ দিতে পারেন। তবে হ্যা যেন তেন একটা কিছু লিখলেই কি কবিতা হবে? পাগলেও বলবে ‘জ্বি না’। তাহলে কোন ধাপের হলে তাকে কবিতা বলা হবে?আর কোন ধাপের হলে বলা হবে “না কবিতা হয়নি”? আজকের এই ইলেক্ট্রনিক্সের যুগে যেখানে প্রত্যকটা জিনিসকে সংগায়িত করাটাই রীতি এবং চুলচেরা টু-দা পয়েন্ট হিটিং ইজ দ্যা প্রিন্সিপাল সেখানে কবিতাকে অমন ডেফিনিটির নিগড়ে বন্দী করারও সময় এলো বলে। কিন্তু না, তা দেয়া সম্ভব নয়। কবিতাকে ডেফিনিট করে দেয়া কোনদ্দিন সম্ভব নয়। দিলে কবিতারা অনেক কষ্ট পাবে। বরং কবিতারা সব বোধের মূল্যে বিচার্য। হযবরল-হিজিবিজি-ভকিচকি যা খুশি তাই কবিতা আখ্যা পেতে পারে কিন্তু সব কবিতাই কবিতা নয়। একটা দশ বছরের বালক যদি জীবনের প্রথম কাগজ কলম নিয়ে বসে দশ-বারো লাইনের কিছু একটা রচনা করে এবং সেটার লাইন গুলো যদি প্রত্যেকটা দাড়ি শেষের পর থেকে শুরু না হয়ে একটু রহস্যজনক ভাবে একটার নিচে আর একটা বসে শুরু হয় তাহলে তাকে কবিতা বলা হলেও বলা হতে পারে। অন্তত লেখক বালকটির কাছে তো সেটা কবিতা? হয়ত পাঁচ দশে পঞ্চাশ বছর বয়ষ্ক ঝানু কোন কবির কাছে সেটা আবর্জনা। তাহলে কথা কি দাড়াল? কোন কিছু থেকে আহরিত বা নিঃসৃত বোধই (এক এক জনে এক এক রকম) বলে দেবে সেটি কবিতা কি কবিতা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫০