একমুঠো ভারতবর্ষ- ৩য় পর্ব, আহ শিমলা
একমুঠো ভারতবর্ষ-২য় পর্ব কলকাতা থেকে শিমলা।
একমুঠো ভারতবর্ষ-১ম পর্ব মুর্শিদাবাদ।
রাতে শিমলা সাজে অপরূপ রাজে, অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুন্দরী শিমলা কতখানি উপভোগ্য সেটা আমার মত অর্বাচীনের বর্ণনা ক্ষমতার বাইরে। রাত্রে ম্যাল এর দোকান থেকে দুজন দুটো ন্যুডলস নিয়ে চার্চের সামনে যেয়ে বসলাম। শিমলার সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে এই চার্চ এলাকা একটা। সবসময় লোকজনের আনাগোনা, রাত ১২ টার দিকে হোটেলে ফিরলাম, ফিরেই ঘুম ভোরবেলা উঠে গোসল সেরে ফোন করলাম সতিশ কে, ও নিচেই ছিল বের হলাম জাখু মন্দিরের উদ্দেশে, শুরু হল আমাদের ২য় দিনের শিমলা ভ্রমণ, আমরা যে হোটেলে ছিলাম টার পাশের পাহাড়েই জাখু মন্দির, শিমলার সবচেয়ে উচু পিক এটা, ২৪৫৫ মিটার। এই মন্দিরে ভগবান হনুমান দেবের মূর্তি স্থাপিত আছে, কথিত আছে হিমালয় থেকে গাছের শেকড় আনার সময় হনুমান এই পর্বত চুড়ায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন, আর সে উদ্দেশেই এখানে হনুমান দেবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উপরে উঠতেই চোখে পড়ল বিশাল এক হনুমান মূর্তি
জাখু মন্দিরের হনুমান মূর্তি
জাখু মন্দির।
জাখু মন্দির থেকে নেমে আমরা ছুটলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য নালদেহরার দিকে, এটি শিমলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানকার গলফ কোর্স টি পৃথিবী বিখ্যাত, লর্ড কার্জনের মেয়ের নাম অনুসারে নালদেহরার নামকরণ। যাবার পথে চোখে পড়ল শিমলার স্কুলগামী ছেলে মেয়েদের,
শিমলার সুন্দর ইউনিফরম পরিহিত ছেলেমেয়েরা শিমলার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শিমলা থেকে নালদেহরা যাওয়ার পথের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অপরূপ সৌন্দর্য, একটু পর পরই গাড়ি থামিয়ে দুই একটা ছবি তোলা তারপর আবার ছুটে চলা---
নালদেহরা পৌঁছে দেখলাম এখানেও ঘোড়ার কারবার, জনপ্রতি ২৫০ রুপি, পাহাড়ে বেড়াতে এসে শুধু ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ে উঠলে পাহাড়দেব গোস্বা করতে পারে, তাই ওঠার ট্র্যাকটা পরখ করতে গেলাম, দেখলাম কুফরির মত একেবারে হাটার অযোগ্য নয় রাস্তাটা। যদিও কাদা আছে খাড়া রাস্তায় তবু কাদা বাচিয়ে চলার উপায় ও আছে, উঠে গেলাম গলফ কোর্সের কাছে,
নালদেহরা
পাহাড়ের উপরে থাকতেই হালকা বৃষ্টি শুরু হল, যে রাস্তা তাতে বৃষ্টি পড়লে গড়িয়ে গড়িয়ে নামা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না, তাই দ্রুত নামতে থাকলাম, যাহোক বৃষ্টি দেবীর কৃপায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই নেমে পড়তে পারলাম, এরপর গন্তব্য তাত্তাপানি, এটি একটি উষ্ণ প্রস্রবন, নালদেহরা থেকে ৩০ কি মিঃ এবং শিমলা থেকে ৫৬ কিমিঃ।
শিমলা-নালদেহরা-তাত্তাপানি।
যেতে যেতে পাহাড়ের উপর থেকেই পেলাম তাত্তাপানির দেখা, এবং এই প্রচণ্ড শীতেও তাত্তাপানির উষ্ণতা অনুভব করলাম উপর থেকেই।
উপর থেকে তাত্তাপানি
তাত্তাপানি তে পৌঁছে দেখলাম এখানে রিভার রাফটিং এর ব্যাবস্থা আছে, কিন্তু আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকার কারনে আর ওই ঝুকিতে গেলাম না, দুপুরে এখানেই খাওয়া দাওয়া সেরে, রওয়ানা দিলাম শিমলার পথে, ফেরার পথে দেখলাম মেঘের রাজ্যে মেঘ নেমেছে। এই মেঘের খেলাটা না দেখতে পেলে শিমলা ভ্রমণ আসলে অপূর্ণই থেকে যেত---
মেঘবালিকার দুরন্তপনা
সন্ধ্যায় এলাম চার্চ বা রিজ এলাকায় আজকের বিকেলটা এখানেই কাটাবো এটা গতকালই ঠিক করে রেখেছিলাম, রিজে ইন্দিরা গান্ধী এবং যশয়ান্ত শিং পারমার এর দুটি ভাস্কর্য আছে, রিজের বিকেল এবং সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে শিমলায় রাত নামতে দেখা এক অসাধারণ অনুভুতি। সন্ধ্যার পরে ম্যাল এর দিকে গেলাম একটু ঘুরাঘুরি করে নিচের দিকে একটা মার্কেট আছে সেখানে গেলাম, জিনিসপত্র উপরের থেকে এখানে অনেক সস্তা, আমরা কয়েকটা শাল ও সোয়েটার কিনে নিলাম এখান থেকে। রাতের খাবারটাও এখান থেকেই সেরে নিলাম। শিমলা কে বিদায় জানানোর সময় হয়ে যাচ্ছে, পরেরদিন ভোরে উঠেই যাত্রা শুরু করতে হবে মানালির উদ্দেশে, সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা, ড্রাইভার হিসেবে সতিশ ই থাকবে আমাদের সাথে। রিজ এবং চার্চের কয়েকটা ছবি দিয়েই বিদায় জানাবো শিমলাকে, জানি বার বার আসতে পারবো না তবু মন টানবেই, বিদায় শিমলা!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২০