একমুঠো ভারতবর্ষ-২য় পর্ব কলকাতা থেকে শিমলা।
একমুঠো ভারতবর্ষ-১ম পর্ব মুর্শিদাবাদ।
কলকাতা থেকে যখন ট্রেন এ উঠেছিলাম তখন এপ্রিলের প্রচণ্ড গরম, শিমলা স্টেশন এ নেমেই পুরো বেকুব!! আমরা শুধু হালকা টি শার্ট পরা, হাড় কাঁপানো শীত, একটা শীতের পোশাকও সঙ্গে নেই। এই শীতের জন্যই বোধ হয় শিমলা ব্রিটিশদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল, শিমলা হিমাচল প্রদেশের রাজধানী। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতে ১৮৬৪খ্রি।ঃ থেকে এটি গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল।শিমলা বিখ্যাত একটি শৈল শহর। শিমলা স্টেশনেই অসংখ্য দালাল আছে নামা মাত্রই ছেঁকে ধরল একজন, তবে দালালদের ক্যাটাগরি দেখেই বুঝলাম এরা একটু অন্য ধাঁচের, অসম্ভব ভদ্র, একজন কারো পিছনে লাগলে অন্যরা এমনিতেই দূরে সরে যাচ্ছে। এদের আচার ব্যাবহার কোনটাই দালালসুলভ নয়। স্টেশন থেকে বের হয়েই সিগারেট ধরাতে গেলাম, সঙ্গে সঙ্গে দালাল ভাই হাত চেপে ধরল, বলল পুরো হিমাচলে প্রকাশে্য ধূমপান নিষিদ্ধ, অবাকই হলাম এই উপমহাদেশেও এমন যায়গা আছে যেখানে কেউ রাস্তাঘাটে ধূমপান করে না, পরের দুদিনে আরও অনেক কিছুই নতুন করে দেখলাম উপলদ্ধি করলাম হিমাচল আসলে ভারতবর্ষের মধ্যে এক টুকরো ইউরোপ। আমাদেরকে ওদের গাড়িতে করে শিমলার ম্যাল এলাকায় এক হোটেলে নিয়ে এল রুম দেখলাম পছন্দও হল ঝামেলা বাধল অন্য যায়গায় ওরা আসলে রুম ভাড়া দেওয়ায় চেয়েও প্যাকেজ বিক্রিতে বেশী আগ্রহী, শিমলা মানালি মিলে আমাদের তিন দিনের প্ল্যান ওরা চাইল বারো হাজার রুপি রাজি না হয়ে পরবর্তী হোটেলের খোজে ছুটলাম, এমনিতেই টানা ৪০-৪২ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি শরীরও একটু বিছানার ছোঁয়া চাচ্ছে। যাহোক বের হয়ে খুজতে খুজতে আমাদের কাঙ্খিত হোটেল পেয়ে গেলাম হোটেল উডল্যান্ড, ডাবল বেড, ভাড়া ৬০০ রুপি। হোটেল থেকেই এক ড্রাইভারের সঙ্গেও কন্টাক্ট হয়ে গেল, গাইড কাম ড্রাইভার সারাদিনে ১০০০ রুপি। আমাদের দেশের হিসাব করলে অনেক ভালোই বলতে হবে, ড্রাইভারের নাম সতিশ, জীবনে সতিশের এর চেয়ে ভদ্র এবং কমিটেড ড্রাইভার দেখেছি বলে মনে পড়ে না। এরপর ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়লাম শীতের পোশাক কিনতে দুজনে সোয়েটার টুপি আর ইনার কিনে নিয়ে উদরপূর্তির জন্য রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম, ভেজ খাবার, ভাত, ডাল, চাটনি এইসব আর কি। খাওয়া দাওয়া সেরে রওয়ানা হলাম কুফরি, নেমে শুনলাম উপরে যেতে হবে ফাগু ভ্যালি, ঘোড়ায় চড়ে জনপ্রতি ৩০০ রুপি। শুনেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া ঘোড়াই চড়তে হবে!! এই অবলা প্রাণীর পিঠে সওয়ার হয়ে কর্দমাক্ত খাড়া পাহাড়ি পথে উপরে ওঠা আর কবরের টিকিট কাটা সমার্থক মনে হল, তারপরেও উঠে পড়লাম ঘোড়ার পিঠে---
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ জীবন বাজি রাখিল
ফাগু ভালীতে শীতকালে স্নো থাকে কিন্তু এপ্রিলে সেসবের প্রশ্নই আসে না, উপরে উঠেই মুগ্ধ হলাম মেঘ আর রোদ্দুরের খেলায়,
ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে গেলাম কয়েকটি ইয়ক এর দেখা
পাহাড় মেঘ রোদ্দুর
মন খারাপ হয়ে গেল আপেল বাগানের করুন অবস্থা দেখে
আপেল বাগান
এরপর একটা শুটিং স্পট ঘুরে চলে এলাম শিমলা শহরে, শিমলা শহরে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরাঘুরি করতে করতে সুপ খেলাম রাস্তার পাশে, এখান থেকে, অসাধারণ স্বাদ!
আস্তে আস্তে রাত নেমে এল আর অবাক বিস্ময়ে দেখলাম রাতের শিমলার রূপ, পাহাড়ের গায়ে গড়ে ওঠা শিমলাকে মনে হল তারা ভরা আকাশ
রাতের শিমলা
শিমলা এক পর্বে শেষ করা গেল না, পরবর্তী পর্বেও শিমলাতেই থাকবো
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭