একমুঠো ভারতবর্ষ-১ম পর্ব মুর্শিদাবাদ।
আমাদের ভারত ভ্রমণের মূল পরিকল্পনায় ছিল শিমলা, মানালি, দিল্লী, আগ্রা এবং শান্তিনিকেতন। মুর্শিদাবাদ ঘোরাটা আমাদের কাছে বোনাস পয়েন্ট নিয়ে ম্যাচ শুরু করার মত, মুর্শিদাবাদ থেকে ফিরে পলাশি থেকে ট্রেন এর রিজার্ভেশন এর জন্য এক এজেন্ট এর কাছে গেলাম, শিমলা ভ্রমণ এর জন্য আমাদের অপশন ছিল দুটো রাজধানী এক্সপ্রেস এ কলকাতা থেকে দিল্লী অথবা কালকা মেইল এ কলকাতা থেকে কালকা। রাজধানী এক্সপ্রেস এ থ্রি টায়ার এ টিকিট মিলল না সুতরাং কালকার ই জয়। পরদিন অর্থাৎ এপ্রিল এর চার তারিখ সন্ধ্যা ৭।৩০ টায় হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন। দুপুরের দিকে কলকাতা পৌঁছালাম, বাড়ি থেকে অনেকটা এক কাপড়ে বেরিয়েছি সুতরাং কিছু কেনাকাটা আবশ্যক, কয়েকটা টি শার্ট আর প্যান্ট কিনে নিলাম,বেশ সস্তা।
হাওড়া স্টেশন
সারাদিন কলকাতায় এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করলাম, বইয়ের পাতা গুলো যেসব জায়গাগুলোর স্বপ্ন চোখে একে দিয়েছিল সেই ধর্মতলা, চৌরঙ্গী, কলেজ স্ট্রীট। স্বপ্ন মেলানোর খুব একটা সুযোগ হল না কারণ সন্ধ্যায় ট্রেন। কলকাতাতেই মেট্রো রেল এর প্রথম অভিজ্ঞতা হল। হাওড়া ব্রিজ হেটেই পার হলাম স্টেশন এ ঢুকলাম ৭ টার একটু আগে, ঢুকেই অবাক!! কত্ত বড় স্টেশন!! সবকিছু ছিমছাম পরিছন্ন, কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা আছে বলে মনে হলনা, অবাকই হলাম, আমাদের মতোই তো বাঙালি এরা আবার আমাদের প্রতিবেশীও কিন্তু প্রফেশনালিজম এ আমাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে, আর একটা দারুন ব্যাপার উল্লেখ করতে ভুলে গেছি সেটা হল প্রত্যেক স্টেশন এ পানীয় জলের ব্যাবস্থা, অভূতপূর্ব ব্যাপার! যাহোক যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ল, এক এক করে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ শুধু অবিরাম ছুটে চলা আর গভীর রাতে ট্রেন এর বাথরুম এ যেয়ে সিগ্রেট ফুকে আসা।
চলতি পথে
দিল্লী স্টেশন
শেষ পর্যন্ত ৩৪ ঘণ্টার রেলযাত্রা শেষ হল ৬ তারিখ ভোর ৫ টায় কালকা স্টেশন এ। কালকা থেকে শিমলা যাবো টয় ট্রেন এ, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থান পাওয়া এই ট্রেনেই শিমলা ভ্রমণ হতে হবে এরকমই সিদ্ধান্ত আমাদের। আমরা পৌঁছানোর পর পরই একটা ট্রেন ছেড়ে গেল, আমরা গেলাম কাউন্তারের দিকে, আমাদের কোন কিছুই আগে থেকে ঠিক করা ছিল না, যেখানে যেমন সেখানে তেমন এটাই ছিল আমাদের মূলমন্ত্র। যথারীতি ট্রেন এ সিট পেলাম না দুজনের টিকেট ১৬০ রুপি মাত্র পাঁচ ঘণ্টার উপরে ট্রেন জার্নি, কি সস্তা!! সিট পেলে লাগত ৫২০ রুপি।
কালকা স্টেশন
কালকা স্টেশন
টয় ট্রেন
টয় ট্রেন এর ভিতরে
সিট না পাওয়া টা আমাদের জন্য শাপে বর হল, একটা স্টেশন পরেই সিট পেয়ে গেলাম ১৬০ রুপিতে ৫২০ রুপি উশুল!! যাত্রা শুরুতেই মন ভালো হয়ে গেল চারপাশের অপরূপ প্রকৃতিতে, আহ! এতদিন কোথায় ছিলাম! পাহাড়ের শরীরে পেঁচানো রেলপথ, মাঝে মাঝে পাহাড়ের শরীর ফুড়ে বেরিয়ে গেছে যাকে আমরা টানেল বলি, অদ্ভুত উত্তেজনা।
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/kalam79/kalam79-1436262910-ea7da30_xlarge.jpg
চলতি পথে
ছোট্ট হিল স্টেশন, এরকম অনেকগুলো স্টেশন আছে এই পথে----
এভাবেই চলতে চলতে ১১।৩০ টার দিকে পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের শিমলা, এরপরের পর্বে হবে শিমলার গল্প আজকে শেষ করছি শিমলা স্টেশনের ছবি দিয়ে---
একমুঠো ভারতবর্ষ- ৩য় পর্ব, আহ শিমলা!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫