পৃথিবীতে সবচেয়ে ডেডলী ভাইরাস যেগুলিতে আক্রান্ত হলে খুব কম লোকই বেচে ফিরতে পারে, তার প্রায় সবগুলিই কিন্তু বাদুর এর মাঝে নিরিবিলি বসবাস করতে দেখা যায়...ডেডলি ভাইরাস যেমন নিপাহ, হেন্ড্রা, ইবোলা, রেবিস, মারবার্গ, এবং সবার 'প্রিয়' করোনাভাইরাসকে দেখা যায় যে অনায়াসে বাদুর এর মাঝে সহঅবস্হান করছে কিন্তু মানুষের মাঝে আসলেই সেটা ডেডলি আকার ধারন করে। বাদুরও মানুষ এর মতই ম্যামাল (কিন্তু উড়ন্ত) প্রচুর এনার্জি তে ভরপুর, উড়াউড়ির কারনে তার হার্টবিট মিনিটে ২০০ পর্যন্ত্য উঠে, এর ফলে তার শরীরে প্রচুর হাইলি রিএ্যাক্টিভ ক্যামিক্যাল তৈরী হয়, যার ফলে অনেক ডিএনএ ভেংগে যায়....। মানুষের যদি এর ১ শতাংশ পরিমান ডিএনএ ভেংগে যেত, তাহলে তার 'অক্কা' পেতে খুব একটা বেশী সময় লাগত না....সেখানে এই অবস্হায় থাকার পরও বাদুর এর কোন ক্যান্সার বা ভাইরাস দ্বারা মৃত্যু হওয়ার কোন এভিডেন্স নাই........তাহলে তার ইমিউন সিস্টেম কিসের বলে এমন শক্তিশালী রেসপন্স সিস্টেম গড়ে তুলেছে??? মানুষের বয়স এর সাথে তার ওজন এর অনুপাত চিন্তা করে দেখা যায় যে একটা বাদুর প্রায় মানুষ এর ২০০ বছর এর সমান বেচে থাকে...তাই এবার বিজ্ঞানীরা নড়ে চড়ে বসেছে বুঝার জন্য কিভাবে বাদুর এমন সহজেই এমন বিধ্বংসী ভাইরাস দের কে হ্যান্ডেল করে....।
বিভিন্ন প্রজাতির বাদুর এর জিনোম (ডিএনএ) সিকেয়েন্স করার পর কিছু কিছু কারন পাওয়া যাচ্ছে যেটা মানুষ আর বাদুর এর মাঝে ভিন্ন ভাবে উপস্হিত। মানুষ এর ডিএনএ কোন কারনে ভেংগে গেলে সেটা সেন্স করার জন্য যে সেন্সর প্রোটিন আছে, আর যার ফলে এই সেন্সর স্ট্রং রেসপন্স (প্রদাহ- ইনফ্লেমেশন) তৈরী করে ভাল কোষ ও ধ্বংস করে দেয়, সেই সেন্সর বাদুর এর মাঝে নাই। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে বেশীর ভাগ মানুষই ভাইরাস দ্বারা মৃত্যুর কারন হয় ইমিউন সিস্টেম এর স্ট্রং রেসপন্স এর জন্য।
বাদুর এর মাঝে 'সেলফ-ভ্যাক্সিনেশন' হিসাবে বিভিন্ন ভাইরাস এর ডিএনএ তার নিজের ডিএনএ এর মাঝে পার্মানেন্টলি যোগ হয়ে গিয়েছে, তাই তার ইমমিউন সিস্টেম, খুবই পরিচিত এইসব ভাইরাস এর সাথে (ভ্যাক্সিনেশন), তাই তার কোন অসুবিধা হয় না সেই সব ভাইরাস এর 'আক্রমনে'।
ইন্টারফেরন নামক 'হরমোন' হল ভাইরাসকে নিউট্রালাইজ করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মানুষ এর ইমিউন সিসটেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে ইন্টারফেরন তৈরী করে তবে সেটা অনেক সময়ই ফেইল করে সময় মত তৈরী না হওয়াতে...কিন্তু বাদুর এর মাঝে ইন্টারফেরনকে দেখা যাচ্ছে যে সবসময়ই তৈরী হচ্ছে আর প্রচুর পরিমানে তৈরী হচ্ছে ইভেন কোন ভাইরাস এ আক্রমন না করলেও..। আর তাদের ইন্টারফেরন গুলিও মানুষ এর থেকে একটু ডিফারেন্ট আর বিজ্ঞানী রা চাচ্ছেন সেই সব ইন্টারফেরন ইদুর এর মাঝে তৈরী করতে আর সফল হলে পরে মানুষের মাঝে (ইন্জেকশন দিয়ে???)।
তবে সবচেয়ে ইম্পোর্টেন্ট 'আবিস্কার' হল যে মানুষের ইমিউন সিস্টেম যেভাবে স্ট্রংলি ভাইরাস এর বিরূদ্ধে রিয়াকশান দেখায় হাই প্রদাহ - ইনফ্লেমেশন (যাতে বেশীর ভাগ মানুষই প্রান হারায়ও) হিসাবে যেটা একেবারেই অনপুস্হিত বাদুর এর মাঝে...কি কারনে সেটা এত 'টেইমড', সেটা খুজতে গিয়ে দেখা গেল যে ইমিউন সিস্টেম এর সাথে জড়িত একটা জিন তার নাম ACS2 সেটা সব প্রজাতির বাদুড় এর মাঝে খুব স্ট্রংলি এক্টিভ (এক্সপ্রেসড)। এই জিন এর প্রধান কাজই হল ইমিউন সিস্টেম কে ওভার রিয়াকশান করা থেকে বিরত রাখা। কিন্তু মানুষের মাঝে এই জিন সেভাবে কাজ করে না। মানুষ আর বাদুড় এর ACS2 জিনকে তুলনা করে দেখা গেল যে মাত্র চারটা ছোট যায়গায় (৪টা এমাইনো এসিড) তে বেমিল আর খুব সহজেই মানুষএর ACS2 জিনকে বাদুর এর ACS2 জিন এ রূপান্তর করা যাচ্ছে এই চার যায়গায় (ল্যাবে মানুষ এর কোষের মাঝে)। ইন ফ্যাক্ট যখন ইদুর এর ACS2 জিনকে চ্যান্জ করে বাদুর এর ACS2 জিন এ রূপান্তর করা হল, তখন সেই ইদুরকে ইদুর এর জন্য ডেডলি ফ্লু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত করার পরও সেই ইদুর বাদুর এর মতই নরমাল ভাবে বেচে রইল। যখন ল্যাবে মানুষের কোষে মানুষের ACS2 জিনকে বাদুর এর ACS2 জিন এ রূপান্তরিত করা হল, তখন দেখা গেল যে সেই সেল গুলি ডেডলি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরেও ইমিউন রেস্পন্স বাদুর এর মতই তেমন স্ট্রং ভাবে শো করে না। দিস ইজ ভেরী এনকারেজিং রেজাল্ট। বিজ্ঞানী রা মনে করছেন যেহেতু মানুষ শরীর এর মাঝে সরাসরি বাদুর এর ACS2 জিন কে স্হায়ী ভাবে প্রবেশ করানো যাচ্ছে না তবে ACS2 কে কেন্দ্র করে ড্রাগ ডিসকভারী হয়ত বেশী দুরে না..। যেহেতু ACS2 জিন তৈরী করে একটা পেপটাইড ( ছোট প্রোটিন মলিকুল), এটাকে ইনহেলার এর সাহায্য শরীরে প্রবেশ করানোর কথা ভাবা হচ্ছে অথবা নিকোটিন প্যাচ এর মত স্কিন এর ভিতর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করানো যায়... সেই দিন হয়ত বেশী দুরে না........তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে এই পদ্ধতিতে ইমিউন রেস্পন্স কে কমালে হয়ত ভাইরাস থেকে বাচা যাবে তবে সামান্য অন্য কোন ইনফেকশন এ (যেমন ব্যাক্টিরিয়াল) হয়ত রোগী মারা যেতে পারে খুব কুইকলি ইমিউন রেস্পন্স না থাকাতে.... বেশী আর কম ইমমিউন রেস্পন্স এর মাঝে একটা 'গোলডি লক' জাতীয় ব্যালান্স খুজে পেলেই হয়ত মানুষকে অনেক অনেক রোগ থেকে সহজেই মুক্ত করা যাবে।