এই পোস্ট দিয়েছিলাম গত বছর...ডেংগুর মহামারী দেখে রিপোস্ট করলাম। যাদের একবার ডেংগু হয়েছে, তারা সাবধানে থাকবেন। দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হলে, সিভিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। যাদের একবার ডেংগু হয়েছে (বিশেষ করে বাচ্চারা), তারা পাওয়া গেলে ডেংগু এর ভ্যাকসিন (সানফি এর তৈরী) নিয়ে নিবেন। যাদের ডেংগু হয় নাই তারা ভুলেও ভ্যাকসিন নিবেন না।
বাংলাদেশে দিন দিন ডেংগুতে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে যেখানে করোনাতে মৃতের সংখ্যা খুবই কম। অবশ্য পরিস্কার পরিছন্ণতা না থাকায় মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে দেদারচ্ছে সাথে তো প্রশাসনের নিস্ফল কার্যক্রম আছেই...তবে আজকে প্রথম আলোতে একটা খবর দেখে কিছুটা বুঝতে পারলাম কেন এত বেশী হচ্ছে এবার। (মানে সিভিয়ার ইনফেকশন হার খুব বেশী)।
"(আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ডেঙ্গুর চারটি ধরন আছে: ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। ২০১৮ সালের পর ডেঙ্গুর ডেন-১ ধরনে মানুষের আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি। ২০২১ সালে সব মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল ডেন-৩ ধরনে। এ বছর ডেন-৪ ধরনের প্রকোপ বেশি। আবার ডেন-৩ ও ডেন-১ ধরনেও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ ডেঙ্গুর তিনটি ধরন দেশে এখন সক্রিয়। "
গত বছর শুধু ডেন-৩ ধরনের ছিল, আর এখন ডেন-১, ৩, ৪ এই তিন ধরন ই দেখা যাচ্ছে....।
আমি গত বছর ও এই টপিক নিয়ে লিখেছিলাম সামুর ব্লগ পোস্টে যে যদি অন্য ধরন এর ডেংগু দেখা যায়, তাহলে যাদের আগে ডেংগু হয়েছিল, তারা সিভিয়ার ভাবে আক্রান্ত হবেন...আমাদের ই একজন ব্লগার এর কন্যা ডেংগু হওয়ার পর উনাকে সাবধান হতে বলেছিলাম যাতে আবার ডেংগু না হয়।
ডেংগু অন্যান্য ভাইরাস থেকে কিছুটা আলাদা কেননা তারা একটা প্রক্রিয়া ইউজ করে ইনফেকশান করার জন্য সেটা হল ADE (Antibody Dependent Enhancement). বেশীর ভাগ ভাইরাস এর বেলায় কেউ যদি একবার আক্রান্ত হয়, সেই ব্যাক্তির মাঝে নিউট্রালাইজিং এন্টিবডি তৈরি হয়ে যায় যাতে সেই ভাইরাস তাকে সেকেন্ড বার আক্রান্ত করতে পারে না। কিন্তু ডেংগু যদি প্রথম একটা ধরন দিয়ে কাউকে আক্রান্ত করে তাহলে তার সেই ধরন এর বিপক্ষে এন্টিবডি তৈরী করে (যেমন বাংলাদেশের প্রায় সবাই যারা ডেংগুতে গত বছর আক্রান্ত হয়েছে অথবা যারা জানেনই না যে তারা মাইল্ড ডেংগুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন- তারা ডেন ৩ টাইপ ডেংগু এর এন্টিবডি বহন করছে) । প্রবলেম টা হল যে এই ডেন-৩ এন্টিবডি এখন ডেংগু থেকে সুরক্ষা না দিয়ে বরন্চ অন্য ধরনের ডেংগু (ডেন ১, ডেন ৩, ডেন ৪) কে সহায়তা করে আরো প্রচন্ড ভাবে আক্রান্ত করতে- ফলাফল সিভিয়ার অবস্হা।
উপর এর ছবি্তে দেখা যাচ্ছে যা আগে আক্রান্ত হওয়া এন্টিবডি, নতুন ভাবে ইনফেকশান করা ভাইরাস কে দমন না করে, ভাইরাস কে হেল্প করছে ইমিউন কোষে প্রবেশ করে ভাইরাস কে বংশ বৃদ্ধি করতে।
এটা বুঝতে পারা হয় ফিলিপাইনে, সেখানে শিশুদের কে যখন ডেংগু এর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল, তখন দেখা যায় যে পরে তারাই বেশী করে ডেংগুতে আক্রান্ত হয়েছিল এবং অনেক শিশু ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ডেংগুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। পরে সেই ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করা হয়। এই ভ্যাকসিন নিয়ে আগে পোস্ট দিয়েছিলাম Problem with Dengue vaccine
তবে যারা মাইল্ডই আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের মাঝে এত কম এন্টিবডি থাকে যে সেই antibody ADE করতে হেল্প করতে পারে না। আবার যারা খুব সিভিয়ার ভাবে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালেও ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মাঝে খুব বেশী এন্টিবডি থাকাতেও ADE হয় না। প্রবলেম বেশী হচ্ছে যাদের মাঝে মাঝারী পরিমান এন্টিবডি আছে।
যারা মারা যাচ্ছে, জানা উচিত উনারা কি আগে ডেংগুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা...এই ইনফরমেশন জানা টা খুব জরুরী।
ডেংগুকে মোকাবেলা করায় বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গিয়েছে... গত ২-৩ বছর আমি পোস্ট দিয়েছিলাম এই রকম কিছু টেকনোলজি নিয়ে
দেখুন এখানে
Foreign Experience with Dengue
Trojan Horse
যদিও ডেংগু কে মোকাবিলা করার জন্য এখনও কোন ঔষুধ আবিস্কার হয় নাই, গত বছর বেলজিয়াম এর বিজ্ঞানীরা একটা খুবই প্রমিসিং ঔষুধ ডেভেলপ করেছেন ডেংগুর বিরূদ্ধে। নাম হল JNJ-A07. এই ঔষুধের সবচেয়ে ইফেক্টিভ দিক হল যে, এটা সব গুলি ডেংগুর (চার ধরনের) বিরূদ্ধেই কার্যকরী (যদিও শুধু ইদুর এর উপর পরীক্ষা হয়েছে)। আর এটা নিতে হয় প্রথম তিন দিনের মাঝে, বেশী দেরী করলে ভাইরাস এত বেশী রিপ্লিকেশন করে ফেলে যে এটা আর ইফেক্টিভ হয় না কেননা এটার কাজই হল ভাইরাস রিপ্লিকেশন বন্ধ করা। যেহেতু এটার সাইন্টিফিক পাবলিকেশন ( Pan Dengue inhibitor) ) হয়ে গিয়েছে, চায়নাতে/আমেরিকায় অলরেডী 'রিসার্চ' এর জন্য এর বিক্রি আরম্ভ হয়েছে। এখানে দেখুনJNJ-A07
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ৮:৫০