প্রথমেই আমি অভিনন্দন জানাতে চাই গনস্বাস্হ্য এর করোনা কিট তৈরী করার বিজ্ঞানী ও জনাব জাফরউল্লাহ সাহেবকে.. যখন আমরা সবাই পড়ে থাকি বিদেশ থেকে স্বাস্হ্য সরন্জাম আমদানি করতে ..তখন দেশীয় ভাবে এই কিট তৈরী করার প্রয়াসকে অভিনন্দন জানাতেই হয়....
কিন্তু উনারা যে ভাবে এই কিট কে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন সেখানে এই কিট উপকার করার চেয়ে অপকার বেশী করবে....উনাদের কিট হল সেরোলজিক্যাল টেস্ট যেটা আপনার রক্তে করোনা স্পেসিফিক কোন এন্টিবডি আছে কিনা সেটা ডিটেক্ট করবে....কিন্তু একজন রোগীর সেরোলজিক্যাল রেসপন্স (এন্টিবডি তৈরী করতে) বেশ কিছুদিন লেগে যায়....তাই পৃথিবীর কোন দেশেই এই সমস্ত সেরোলজিক্যাল কিট করোনা ডিটেক্শান করার জন্য ইউজ হয় না। সেরোলজিক্যাল কিট শুধুমাত্র কেউ কি আগে করোনাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা এবং এখন ইমিউন কিনা সেটা জানার জন্যই বেশী ইউজ হচ্ছে...এটা জানা খুবই দরকারী...কেননা ২০-২৫% লোক করোনাতে আক্রান্ত হয়েও কোন সিম্পটম শো করে না। কিন্তু তারাও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
শয়ে শয়ে কোম্পানী ব্যান্গের (বানান) ছাতার মত গড়ে উঠছে এই সমস্ত সেরোলজিক্যাল কিট বিক্রি করার জন্য।
জাস্ট নিচের লিং ক্লিক করে দেখুন কত কোম্পানী অলরেডী এই রকম কিট বিক্রি করার আরম্ভ করেছে
Corona serological kits
গনস্বাস্হ্য বলছে আক্রান্ত হওয়ার তিন দিন পরে উনারা ডিটেক্ট করতে পারবেন..।যেটা বর্তমান পিসিআর পদ্ধিতে প্রথম দিন ই সনাক্ত করা যায়...কিন্তু তিন দিনের মাঝে প্রচুর লোক এর মাঝে ই কোন এন্টিবডি তৈরী হবে না..হলেই শুধু IgM টাইপ এন্টিবডি তৈরী হবে কিন্তু IgG antibody তৈরী হতে আরো সময় নেয়...তিনদিনের মাথায় দুইটা এন্টিবডিকে ডিটেক্ট করা প্রায় অসম্ভব....এতে প্রচুর ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসবে...। আবার ফলস পজিটিভ রেজাল্ট ও আসে...কেননা আরো অনেক রকম করোনা ভাইরাস আছে যারা এই করোনার মত এত মারাত্নক (বানান) না....কিন্তু তারাও এই করোনার মত সেইম প্রোটিন ক্যারি করে...তাই আপনি যদি আগে এই রকম কোন নির্জীব করোনা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন....তবে এই কিট হয়ত (হয়ত বলছি যেহেতু আমি জানি না উনারা কোন প্রোটিন টা ইউজ করছেন) আপনাকে বলবে বর্তমান করোনাতে আপনি আক্রান্ত হয়েছিলেন...।
সেরোলজিক্যাল কিট শুধুমাত্র কেউ কি আগে করোনাতে আক্রান্ত হয়েছে কিনা এবং এখন ইমিউন কিনা সেটাই বেশী জানায়...তাই ডাক্তার/নার্স এদেরকে বেশী করে পরীক্ষা করা হচ্ছে এই সমস্ত কিট দিয়ে...ব্রিটেন ২০ হাজার সেরোলজিক্যাল কিট কিনেছে জনগনের মাঝে টেস্ট করার জন্য যাতে জানতে পারা যায় যারা মাইল্ড সিম্পটম/ অথবা কোন সিম্পটম ছাড়া ই ভাল হয়ে গিয়েছেন তাদের কে ডিটেক্ট করতে...এতে করে যদি দেখা যায় প্রচুর পরিমান লোকের মাঝে করোনার এন্টিবডি আছে, তাহলে সেই এলাকা খুলে দেওয়া যায়..যদিও আমরা এখনও জানিনা এই এন্টিবডি কি কোন প্রটেকশান দিবে কিনা অথবা দিলেই কতদিন ধরে দিবে। মার্স করোনার এন্টিবডি ১০ মাসের বেশী প্রটেকশান দেয় না..।
ব্রিটেন আজ দুঃখ করে বলছে সেরোলজিক্যাল কিট দিয়ে যে আশা তারা করেছে সেটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না কেননা কিটগুলি কোনভাবেই ১০০% কাজ করছে না.. ৬০-৭০%.এখানে দেখুন
Corona test kit inefficient
যেহেতু এই কিট দ্বারা অনলি যারা কয়েকদিন ধরে আক্রান্ত শুধু তাদের কে করোনাতে আক্রান্ত কিনা শনাক্ত করা যাবে..।সেটা তার সিম্পটম এর মিল রেখেই বলা যাবে কিন্তু ততদিনে সর্বনাশ হওয়ার যা তা হয়ে যাবে...সেই ব্যক্তি তিনদিনের এর পর তত ছোয়াছে না যত ছোয়াচে প্রথম কয়দিন....
এই কিট কে ব্যবহার করতে হবে সবাইকে ...তাহলে একটা ধারনা হবে সমাজে herd immunity develop (most of the people protected through prior exposure) হচ্ছে কিনা ...বিশেষ করে যারা ইকনোমিক এক্টিভিটি এর জন্য এসেনসিয়াল, সেই সমস্ত লোকজনদের উপর এই কিট দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত সবার আগে
রোগাক্রান্ত কে পরীক্ষা করে করোনাতে আক্রান্ত বলার মাঝে কোন ইনোভেশন নাই।
আর এই কিট যদি করোনা তে আক্রান্ত নাকি শুধু তা ডিটেক্শানে ইউজ করা হয়, তাতে হিতে বিপরীত ই হবে। প্রচুর ফলস নেগেটিভ হবে...উনারা মাত্র ৫জন রোগীর রক্ত দিয়ে কিট পরীক্ষা করবেন.।তার রেজাল্ট আমরা এখনও জানিনা (কতদিন এ আক্রান্ত রোগীর রক্ত সেটাও জানানো হয় নাই)..
এবোট ল্যাবোরেটরি ৫ মিনিটে ভাইরাস (এন্টিবডি না) ডিটেক্শান করার যন্ত্র বাজারে এনেছে (আমার আগের পোস্ট দেখুন)...সেটা দিয়ে যারা আক্রান্ত কিন্তু এখনও কোন সিম্পটম শো করে নাই, তাদের কেও ডিটেক্ট করা যাবে আর তাতে আক্রান্ত দের কোয়ারাইন্টানে নিয়ে অন্যদের কে প্রটেক্ট করা যাবে কিন্তু অসুস্হ হওয়ার পর টেস্ট করে তেমন কোন লাভ হবে না, কেননা এর আগেই সে অনেক বেশী ছড়িয়ে দিবে...
প্রতি ৫০০ জনে একজন করে গড়ে সব জনগনের টেস্টের জন্য গনস্বাস্হ্যের কিট ব্যবহার করা হোক।
আশার কথা আমাদের উপমহাদেশে আসতে আসতে এই ভাইরাস এর 'এস' প্রোটিন যেটা দিয়ে সে মানুষের কোষে প্রবেশ করে সেটা তে কিছু মিউটেশন দেখা যাচ্ছে...এই মিউটেশন এর ফলে করোনা কিছুটা হলেও কোষে প্রবেশ করার যোগ্যতা হারাবে ...।আর তার জন্য ই হয়ত বা আমাদের উপমহাদেশে আমেরিকা/ইউরোপের মত এত মহামারীর আকারে এটা ছড়িয়ে পড়ছে না...।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট এর উচিত বাংলাদেশের করোনা আক্রান্ত রোগীর করোনা ভাইরাস এর জিনোম সিকোয়েন্স করে আমেরিকা/ইউরোপের করোনা ভাইরাস এর সাথে তুলনা করা...ইউরোপ/আমেরিকার করোনার ভাইরাস জিনোম বিনামূল্যে আমেরিকার জিনব্যন্ক এ পাওয়া যাচ্ছে....
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২৬